নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংশ এবং ঐতিহাসিক মিথ্যাচার

Shamim Reja
8/6/2013

সেদিন এক অনলাইন বন্ধুর একটা পোস্ট দেখে কিছুটা খটকা লাগলো, তিনি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধবংশের জন্য ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজিকে দায়ী করে ক্ষোভ এবং হতাশা প্রকাশ করছিলেন। যে মাহামানবের হাত ধরে বাংলায় ইসলামের প্রবেশ ঘটলো, সেই মহামানবকে নিয়ে এমন বিদ্বেষমূলক অপপ্রচার বর্ণবাদী হিন্দু ঐতিহাসিকদের প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া অন্য কিছু নয়। 

মূলত হিন্দুরাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে বখতিয়ার খলজি বাংলার মানুষকে মুক্তি দান করেন। অত্যাচারিত নির্যাতিত বৌদ্ধরা দুবাহু বাড়িয়ে বখতিয়ার খলজিদের স্বাগত জানালো। ড. দীনেশচন্দ্র সেনের ভাষায়-‘বৌদ্ধ ও নিম্নবর্ণের হিন্দুরা ব্রাহ্মণ্যবাদীদের আধিপত্য ও নির্মূল অভিযানের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে বাংলার মুসলিম বিজয়কে দু'বাহু বাড়িয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। ড. নিহার রঞ্জন রায় বাঙালির ইতিহাস আধিপূর্বে উল্লেখ করেছেন-‘যে বঙ্গ ছিলো আর্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে কম গৌরবের ও কম আদরের সেই বঙ্গ নামেই শেষ পর্যন্ত তথাকথিত পাঠান মুসলিম আমলে বাংলার সমস্ত জনপদ ঐক্যবদ্ধ হলো।'

সবচাইতে মজার যে ব্যাপার সেটা হচ্ছে বখতিয়ার খলজি বঙ্গ বিজয় করেন ১২০৪সালের ১০মে, স্যার যদুনাথ সরকার বখতিয়ারের বঙ্গ আক্রমণের সময়কাল বলছেন ১১৯৯ খৃস্টাব্দ। অন্যদিকে অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে বৌদ্ধদের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করা হয় ১১৯৩খৃস্টাব্দে। যে লোকটি ১২০৪খৃস্টাব্দে বঙ্গে প্রবেশ করেন সে কিভাবে ১১৯৩ খৃস্টাব্দে নালন্দা ধবংশ করেন এটা ইতিহাস বিকৃতি কারীরাই ভালো বলতে পারবেন।

বখতিয়ার খলজি মাত্র ১৭জন সঙ্গী নিয়ে ঝাড়খন্ডের জঙ্গলের ভেতর দিয়ে দ্রুত বেগে ঘোড়া ছুটিয়ে কৌশলে সেনরাজা লক্ষণ সেনের প্রাসাদে হামলা করেন। এসময় লক্ষণ সেন দুপুরের খাবার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বখতিয়ারের আগমনের খবর পেয়ে ভয়ে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান, প্রায় বিনারক্তপাতে বঙ্গবিজয় করেন বখতিয়ার খলজি। সুতরাং বখতিয়ার কতৃক নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধবংশের ঘটনা একটা মিথ্যা অপবাদ ছাড়া কিছুনয়।

নালন্দার ধ্বংস হয় সর্বোমোট তিনবার, এর মধ্যে প্রথমবার মধ্য এশিয়ার যুদ্ধবাজ হানদের দ্বারা, দ্বিতীয়বার ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অনুসারী বাংলার শাসক শশাঙ্ক দ্বারা ও শেষবার অত্যাচারী সেনরাজাদের দ্বারা। নালন্দাকে প্রথম দুইবার ধ্বংসস্তুপ থেকে দাঁড় করানো গেলেও তৃতীয়বার সম্ভব হয়নি গুপ্ত ও পাল রাজাদের মতো পৃষ্ঠপোষক না থাকায়। দূর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, বর্ণহিন্দু ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের ফলে ভারতবর্ষ থেকে বৌদ্ধদের ব্যাপকহারে দেশত্যাগ ও বৌদ্ধদের জ্ঞানার্জনের চেয়ে তান্ত্রিকতার প্রসারও এর জন্য দায়ী।

বখতিয়ার খলজির অভিযান ছিলো সেনরাজা লক্ষণসেনের বিরুদ্ধে, বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে নয়। বৌদ্ধরা বখতিয়ারের অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছিলো। সুতরাং বিনারক্তপাতে বঙ্গবিজয়ের পরে বৌদ্ধদের বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করার কাহিনী মুসলিম বিজয়ীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অপপ্রচার বৈ অন্য কিছু নয়।
 


তথ্যসূত্রঃ http://www.storyofbangladesh.com/ebooks/dui-polasi-dui-mirzafar/93-chapter-1.html
http://www.shodalap.org/shams/8918/
http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=93844


৮জুন২০১৩

Post Comment

No comments:

Post a Comment