সম্পূর্ণ ইসলামের পক্ষের একটি বিশ্লেষণ (নিরপেক্ষ নয়)।



একান্তই আমার নিজস্ব অভিমত, কারও অনুভুতিতে আঘাত লাগলে কমেন্টে জবাব দেয়ার জন্য অনুরোধ রইলো।

মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করছেন তারা নিশ্চই লক্ষ করে থাকবেন, হেফাজতে ইসলামের যতগুলো কর্মসূচী ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে প্রতিটি প্রগ্রামে সম্পূর্ণ প্রগ্রাম ম্যানেজমেন্টের দায়ীত্ব তারা নিজেরাই সম্পন্ন করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মঞ্চ নিরাপত্তা ও খাবারের সরবরাহের দায়ীত্ব দেয়া হয়েছে জামায়াত-শিবিরের হাতে। এবং এটাও নিশ্চই লক্ষ করে থাকবেন, কওমী মাদ্রাসা কেন্দ্রীক আলেমদের মধ্যে জামায়াত শিবিরের প্রতি যে ঘৃণা ও তাচ্ছিল্য ছিলো, সেটার বিন্দুমাত্র কমতি ছিলোনা তাদের কর্মসূচীতে স্বেচ্ছাসেবকদের আচরনে। যদিও জামায়াত নেত্রীবৃন্দের কাছে সহায়তা চাওয়ায় জামায়াত তার ঐতিহ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ জনশক্তি সরবরাহ করেছে হেফাজতের কর্মসূচীগুলোতে এবং সেক্ষেত্রে জামায়াত-শিবির নিজস্ব ব্যানার ইউজ না করে হেফাজতের সাইনবোর্ড ব্যবহার করেই সে সমস্ত প্রগ্রামে হাজির হয়েছে।
৫মে সরকার পতনের সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিলো এবং সেটা হেফাজতকে সামনে রেখেই পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। বিএনপির নীতি নির্ধারকরা দেখতে পাচ্ছিলো, জামায়াতের একাত্তর ইস্যুতে একটা কলঙ্ক আছে কিন্তু সেক্ষেত্রে হেফাজত একেবারে ফ্রেশ। সরকার পতনের পরে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেটা করা হবে জোটগত ভাবেই, আসন বন্টনের ক্ষেত্রে জামায়াত বিগত ৫বছরের আন্দোলন সংগ্রামের মূল্যায়ন চাইতে পারে কিন্তু হেফাজতকে অল্পতেই তুষ্ট করা যাবে। বিএনপি এটা ভালো করেই জানে কওমী আলেমদের সাথে জামায়াতের একটা দূরত্ব আছে। বিএনপি কৌশলী হলো, তারা এই দূরত্বকে কাজে লাগাতে চাইলো, রাজনৈতিক ময়দানে জামায়াতকে কোণঠাসা করে ফায়দা উঠানোর পরিকল্পনা হাতে নিলো।
বিএনপির এই পরিকল্পনারই বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পাই ৪মে এর সমাবেশে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের মাধ্যমে। আমরা যদি খালেদা জিয়ার বিগত বক্তব্য সমূহ পর্যালোচনা করি সেখানে দেখতে পাই, সবগুলো বক্তব্যে তিনি জামায়াত শিবিরের ত্যাগের মূল্যায়ন করে বক্তব্য রেখেছেন, আন্দোলন সংগ্রামে জামায়াত-শিবিরের সাহসীকতার প্রশংসা করেছেন। কিন্তু ৪তারিখের জনসভায় খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম বক্তব্য রাখলেন, তার বক্তব্যে জামায়াত শিবিরের ত্যাগের মূল্যায়নতো দূরের কথা নামই উল্লেখ করলেননা, অন্য দিকে ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল কনটিনিউ করার ঘোষণা দিলেন।
বিএনপি একপ্রকার নিশ্চিত ছিলো সরকার পতন হতে যাচ্ছে, তাই তারা একঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিলো। আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে হেফাজতের চাহিদা ছিলো স্বল্প কিন্তু জামায়াতের রাজনৈতিক চাহিদা ছিলো অনেক, তাই বিএনপি জামায়াতকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে হেফাজতকে নিয়েই এগোতে চাচ্ছিলো। হাসিনার সরকারের পতন হলে বিএনপির কাছে জামায়াতের রাজনৈতিক প্রয়োজন ফুরিয়ে যেতো।
জামায়াত পরে যেতো উভয় সংকটে একদিকে জামায়াত ইমেজ সংকটেরে কারণে আওয়ামীলীগের দিকে ভিরতে পারতোনা, অন্যদিক আওয়ামীলীগও এতদিনের অপপ্রচারের পরে রাজনৈতিক ভাবে মার খাওয়ার ভয়ে জামায়াতের সাথে জোট করতে চাইতোনা। ফলে বিএনপির যেকোনো শর্তে জামায়াত জোটে থাকতে রাজি হতে বাধ্য ছিলো। হয়তো আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে বিশাল একটা ছাড় দিয়ে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় নেত্রীবৃন্দের মুক্তির শর্তেই জামায়াত জোটে থাকতে রাজী হয়ে যেতো।
অন্যদিক বাংলাদেশের মুসলিমদের মধ্যে যে বৃহত্তর ইসলামী ঐক্যের স্বপ্ন সেটা ধুলিস্মাত হয়ে যেতো। হেফাজতের আন্দোলনের ফলে সরকার পতন হলে হেফাজত ঘোষণা দিতো আমরাই একমাত্র আল্লাহর পক্ষের শক্তি ইসলামীক দল, তাই অল্প সময়েই আল্লাহ আমাদের বিজয় দান করেছেন। জামায়াত ভ্রান্ত পথে আন্দোলন করছে, এব্যাপারে তাদের যে ধারনা সেটাই বদ্ধমূল হতো। আল্লাহ হয়ে যেতো হেফাজতে ইসলামীর একক সম্পত্তি, জামায়াত হয়ে যেতো ইসলামের কুপুত্র।
শাহদাত চত্বরের সেদিনের নৃশংস গণহত্যায় মুসলিম উম্মাহর মূল্যবান সম্পদ রাসূল (সঃ) এর উত্তরসূরী অসংখ্য আলেম ওলামা শহীদ হওয়াতে হয়তো সাময়ীক ভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি কিন্তু এর প্রভাব সূদূর প্রসারী। এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মুসলিমরা আত্মপর্যালোচনার সূযোগ পাবে, নিজেদের অনৈক্যের কারণেই যে প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হয়েছে এই বিষয়টি সামনে চলে আসবে। জামায়াত সহ অন্যন্য ইসলামী দলেরপ্রতি মিডিয়ার অপপ্রচারের একমাত্র কারণ যে ইসলাম সেটা অবশ্যই পরিস্কার হবে। আল্লামা শফিকে এতদিন সবাই সর্বজন শ্রদ্ধেও আমিরুল মুমিনীন হিসেবেই চিনতেন কিন্তু যখনি তিনি ইসলামের পক্ষ নিয়ে প্রকাশ্য অবস্থান নিলেন তখনি তিনি একাত্তরেরে রাজাকার কিংবা পাকিস্থানের স্বপক্ষের মুজাহিদ কমিটির প্রধান হিসেবে আখ্যায়িত হলেন।
ঘুমন্ত মুসলিমদের চোখ খুলে দেয়ার জন্য এমন একটি ঝাঁকুনি অতি প্রয়োজন ছিলো। মহান রব্বুল আলামীন সেই ঝাঁকুনিই মুসলমানদের দিয়ে দিলেন, আশা করি বৃহৎ ইসলামী ঐক্যের পথে এই ঘটনাটি ব্যপক ভূমিকা রাখবে।

৮মে২০১৩

Post Comment

2 comments:

  1. মারদিয়া মমতাজSeptember 6, 2013 at 1:36 AM

    ১০০% একমত। কিছু বানানে একটু গরমিল আছে। শুধরে দিয়েন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. বাংলা বানানরীতি সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ বলতে পারেন। তার উপর লেখা শেষ করে দ্বিতীয়বার দেখতে মারাত্মক অলসতা কাজ করে, তাই ভুল থেকেই যায়।
      ব্লগ ভ্রমনের জন্য ধন্যবাদ, ভুলগুলো এডিট করে নিবো ইনশাআল্লাহ।

      Delete