এগারো বছরের হিন্দু মেয়েক ধর্ষণ ও সাম্প্রদায়ীক হলুদ সাংবাদিকতা।


এক
কারাগারে আমার ওয়ার্ডে জুয়েল নামে এক তরুণ ছিলো, দম ফাটানো হাসির খোরাক যোগাতো ছেলেটি। তার অভিনয় দক্ষতা এত চমৎকার ছিলো মূহুর্তেই যে কাউকে আপন করে নেয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিলো তার। তার বিরুদ্ধে মামলা ছিলো ধর্ষণ মামলা, প্রমাণীত হলে ৩২বছরের জেল! এই ছেলেটি ধর্ষণের মতো এত জঘন্য একটি কাজ করতে পারে, বিশ্বাস করতে কস্ট হচ্ছিলো, তাই মূল ঘটনা জানতে চাইলাম। জুয়েল জানালো, এলাকার এক মেয়ের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, একদিন ঘুরতে বের হয়েছিলো সমুদ্র দেখবে বলে, বাসায় ফিরতে দেরী হওয়ায় মেয়েটি বাবা-মায়ের ভয়ে বাসায় যেতে অস্বীকার করে, বাধ্য হয়ে জুয়েল তার খালার বাসায় মেয়েটিকে রেখে চলে যায়। পরের দিন ক্ষুব্ধ মেয়ের অভিভাবক উচিত শিক্ষা দিবে বলে জুয়েলের বিরুদ্ধে ধর্ষন মামলা দিয়ে দেয়, ফলশ্রুতিতে জুয়েল কারাগারে আর মেয়েটি বাবা মায়ের হেফাজতে, তার আর কি করার আছে!? সেদিন জুয়েল ফোন করেছিলো, জামিন হয়েছে। মেয়েটির খবর জানতে চাইলে বললো মেয়ে এখন পালিয়ে বিয়ে করতে চাইছে, জুয়েল তখন মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করেছিলো, আমি যখন জেলে ছিলাম তখন তোমার এই ভালোবাসা কোথায় ছিলো? আদালতে গিয়ে একটি স্বাক্ষী দিলেতো মামলার অস্তিত্ব থাকতোনা!!

দুই
আমার পরিচিত এক ছেলে বান্ধবীকে নিয়ে হাওয়া, পালিয়ে বিয়ে করে কিছুদিন রোমান্স অতঃপর মোহভঙ্গ। টিভি মিডিয়াতে প্রেম ভালোবাসার ক্রমাগত ব্রান্ডিং দেখে এর প্রতি ছেলে-মেয়েদের একটা ফ্যান্টাসি তৈরী হয়, বিয়ের পরে দেখে এই ফ্যান্টাসি ভাঙ্গা ঘরে চাদের আলোর পরিবর্তে বৃস্টির পানি এবং পায়ের নিচে ফুলেল গালিচার পরিবর্তে কাদামাটি, দরজা দিয়ে অভাব ঢুকতেই ভালোবাসা পরিমরি করে জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়।
মেয়ের বাবা-মা ছেলেটির বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দিয়ে দেয়। পুলিশ যখন ছেলে-মেয়ে উভয়কে গ্রেপ্তার করে তখন মেয়েটি হাউ-মাউ করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বাবা মায়ের মাইরের ভয়ে সব দোষ ছেলেটির উপর চাপিয়ে দেয়, আমি যেতে চাইনি ওইতো আমাকে জোড় করে নিয়ে গেছে। মেয়েটির ১৮বছর পূর্ণ হয়নি, তাই ছেলেটির বিরুদ্ধে ধর্ষণ,অপহরণ,জোরপূর্বক বিয়ে ও আরো হাবি-জাবি বেশ কিছু ধারা যুক্ত একটি মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।

তিন
আমার বন্ধুর ছোট বোন, দুই দুইবার একটি ছেলের সাথে পালিয়ে যায় প্রেমের টানে, কিন্তু দু’বারই কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরে আসে। ছেলেটি নাকি তাকে জোড় করে নিয়ে গিয়েছিলো সে যেতে চায়নি! সত্যি ঘটনা হচ্ছে, পালিয়ে গিয়ে একা একা বিয়ে করার সাহস পায়নি তাই ফিরে এসেছে।

চার
গাজিপুরের ১১বছরের একটি হিন্দু মেয়েকে চকরিয়াতে নিয়ে গিয়ে প্রথমে মুসলমান বানানো হয়েছে, পরে বিয়ে করা হয়েছে এবং সর্বশেষ ৫৫দিন ধরে ধর্ষন করা হয়েছে, এটা কালের কন্ঠের নিউজ। আমাদের ফেসবুক চুশিলরা এটা নিয়ে হেব্বি কান্নাকাটি শুরু করেছে, তাদের চোখের পানিতে ফেসবুক ভেসে যাচ্ছে।
এবার খবরটি একটু বিশ্লেষণ করা যাক, একজন ধর্ষক একটি ছোট মেয়েকে ধর্ষণ করবে, তার কি ঠেকায় পড়েছে মেয়েটিকে হিন্দু থেকে মুসলিম বানাতে হবে? আচ্ছা ধরে নিলাম হিন্দু ধর্ষণ করতে রুচিতে বেঁধেছে তাই মুসলিম বানিয়ে নিয়েছে, এবার দ্বিতীয় প্রশ্ন, ধর্ষণ করতে কি বিয়ে করার দরকার আছে? মূল ব্যাপারটি বুঝতে পেরছেন? ৫৫দিন ধরে লোকালয়ে আটকে রেখে একটা মেয়েকে ধর্মান্তরিত করণ, বিয়ে করা এবং সর্বশেষ ধর্ষণ করা এটা কি মগের মুল্লুক নাকি আফ্রিকার জঙ্গলের ঘটনা?
আপনি না বুঝলেও মূল ঘটনা আমি বলছি ওই সব দালাল মিডিয়া কান নিয়ে গেছে বলছে, আর আপনি আমি কানের জন্য কান্নাকাটি করছি মূল ঘটনা বোঝার চেস্টা করছিনা।
যেই লোককে অপরাধী বলা হচ্ছে তার সাথে মেয়েটির সম্ভবত প্রেমের সম্পর্ক ছিলো, আর আমাদের দেশে যেহেতু বয়স চুরি করা ঐতিহ্যগত ব্যাপার সেক্ষেত্রে মেয়েটির বয়স ১১ এটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়, খবরের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য হয়তো বয়স কমিয়ে বলা হয়েছে। মেয়েটি প্রেমের টানে, বলা যায় আবেগের ঠেলায় ছেলেটির হাত ধরে পালিয়ে যায়, এক্ষেত্রে ছেলের বন্ধুরা যেটা করে থাকে তাকে সহযোগীতা করেছিলো। ছেলেটির যেহেতু নিয়্যত ভালো ছিলো তাই সে মেয়েটিকে বিয়ে করলো, কিন্তু ইসলামেতো পৌত্তলিক বিয়ে করার অনুমতি নেই তাই মেয়ের সম্মতিতেই তাকে মুসলিম বানানো হলো।
কিছুদিন পরেই মেয়েটির মোহ ভেঙ্গে যায়, ভালোবেসে বিয়ে করা আর বাবা-মা ত্যাগ করে ভিন্ন ধর্ম গ্রহণ করা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যপার। মেয়ের বাবা মায়ের মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করার পরে মেয়েটি নিজেকে নির্দোষ দাবী করে, সব দোষ ছেলেটির উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। বলির পাঠা বানানো হয় প্রেমিক ছেলেটিকে।
আর আমাদের দেশের মিডিয়া যেহেতু অতিরিক্ত রকমের ভারতপন্থী এবং ইসলাম বিদ্বেষী সেহেতু তারা এটাকে রং মাখিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে সেটাই স্বাভাবিক।
ফাসিক ব্যক্তি খবর নিয়ে এলে যাচাই করে নিন, অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করে কারও প্রতি জুলুম করবেননা।

দৈনিক কালের কন্ঠে যে নিউজটি প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে বেশ কিছু তথ্যগত প্রতারণা করা হয়েছে
১। মেয়েটির বয়স উল্লেখ করা হলেও ছেলেটির বয়স উল্লেখ করা হয়নি, কারণ তাতে করে প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসতে পারে।
২। মেয়েটির অবস্থান হিসেবে বলা হয়েছে চকরিয়া, কিন্তু চকরিয়ার কোন এলাকায় ছিলো সেকথা কিন্তু উল্লেখ করা হয়নি, অন্য কেউ যদি প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করে সে ভয়ে।
৩। মেয়েটিকে যে স্থানে রাখা হয়েছে তার আশে পাশের কোনো প্রতিবেশি কিংবা প্রত্যক্ষদর্শী কারও সাক্ষাৎকার দেয়া হয়নাই।
৪। মেয়েটিকে অপহরণ করা হয়েছে গাজীপুর থেকে, সেখান থেকে তাকে আনা হয়েছে কক্সবাজার চকরিয়াতে, সুদীর্ঘপথ অতিক্রম করা হয়েছে। তারপর হুজুর ডেকে তাকে মুসলমান বানানো হয়েছে, বিয়ে করা হয়েছে, দীর্ঘ পঞ্চান্নদিন ধরে তার সাথে সংসার করা হয়েছে অথচ একটিবারের জন্য কারও কাছে মেয়েটি অভিযোগ করেনাই, "আমাকে জোর করে ধরে আনা হয়েছে আমাকে উদ্ধার করেন"।
৫। নিউজটিতে বলা হয়েছে মেয়েটির স্বামী ছাড়াও তার বন্ধুরা তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করার চেস্টা করেছিলো। এর মানে কি? আপনি যদি বন্দী হয়ে থাকেন তবে চেস্টা করার কি আছে? ধর্ষণতো সেখানে নিশ্চিত ছিলো!! যেহেতু ছেলেটির বন্ধুরা মেয়েটিকে ধর্ষণ করতে সক্ষম হয়নাই এবং শুধুমাত্র তার স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে সেহেতু বোঝা যাচ্ছে এটা ধর্ষণ ছিলোনা, সম্পূর্ণভাবে স্বাধীণ অবস্থান থেকে মেয়েটি তার স্বামীর সাথে বসবাস করেছে এবং শেষ দিকে এসে মা-বাবার টানে কিংবা ধর্মীয় কারণে উল্টে গেছে, আবেগ শেষ হয়ে গেছে।

আল্লাহ আমাদের সত্য মিথ্যার পার্থক্য উপলব্ধী করার তাওফীক দান করুন, আমিন।

৪জুন২০১৩

Post Comment

No comments:

Post a Comment