জনপ্রিয় লেখক তৈরীতে আমাদের করণীয়

facebook link


আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় বাংলাদেশের বিখ্যাত দু’জন লেখকের নাম বলেন, আপনার মাথায় প্রথম যে দু’জন লেখকের নাম ভেসে উঠবে তারা হচ্ছেন হুমায়ূন আহম্মদ এবং জাফর ইকবাল। একটা সময় বাংলাদেশের বইয়ের দোকান গুলো ছিলো ভারতীয় লেখকদের দখলে। সম্ভবত শুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষ এতই সাহিত্যপ্রেমী সেখানে বাস,ট্রেন,লঞ্চে গল্প-উপন্যাসের বই বিক্রি হয়। অথচ এই বাংলাদেশের মানুষই জিম্মি হয়েছিলো পশ্চিম বঙ্গের হিন্দুঘেষা এবং ধর্মবিদ্বেষী লেখকদের কাছে।

বাংলাদেশের মানুষকে এই পশ্চিম বঙ্গীয় সাহিত্য থেকে টেনে এনে নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের সাহিত্যের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয়ার একচেটিয়া কৃতিত্ব অবশ্যই হুমায়ূন আহম্মদের প্রাপ্য। তার পথচলায় অনুপ্রাণীত হয়ে আরো অনেক কথাসাহিত্যিকের জন্ম হয়েছে এদেশে। অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন হুমায়ূন আহাম্মদ নাস্তিক ছিলেন, হয়তো তাদের অভিযোগ সত্য অথবা মিথ্যা কিন্তু সেটা মূখ্য বিষয় নয়। হুমায়ূণ আহাম্মেদ সাহিত্য রচনা করেছিলেন এদেশের প্রেক্ষাপটে, মুসলিম পারিবারিক জীবন ছিলো তার লেখার উপজীব্য, এদেশের পাঠকের মনমানসিকতার দিকেও তিনি ছিলেন সজাগ দৃস্টির অধিকারী। তিনি তার সাহিত্যে ঢালাও ভাবে নাস্তিকতার প্রচার করেননি, যেটা করেছেন ভারতীয় লেখকরা। সেদিক থেকে হলেও, নাই মামার চেয়ে কানা মামা নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট থাকতে পারি।

আলহামদুলিল্লাহ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের উপর পর্যাপ্ত বই রয়েছে, যেসব বইয়ের ঘাটতি আছে সেগুলো অনুবাদ করা হয়েছে। অভাব যেটা সেটা হচ্ছে মানসম্পন্ন ইসলামীক ভাবধারার গল্প-উপন্যাসের। এখন যদি আমি প্রশ্ন করি, ইসলামীক গল্প-উপন্যাস লিখবেন এমন ভালোমানের সাহিত্যিক এদেশের সৃস্টি হচ্ছেনা কেনো? তাহলেই অনেকে রেডিমেইড উত্তর দিবেন, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। অথবা অন্য আরেকজন হয়তো জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব নিয়ে বলবেন ওই সব ডানপন্থী-বামপন্থী দেখে সাহিত্যিক সৃস্ট হয়না, সাহিত্য রচনা হচ্ছে জন্মগত প্রতিভা। যারা পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের কথা উল্লেখ করবেন তাদের যুক্তি হয়তো এমন হতে পারে, 'অন্য প্রকাশে'র মতো খ্যাতিমান প্রকাশনী সংস্থা আমাদের নাই। অথবা ভালোমানের পরিবেশক প্রতিষ্ঠানও আমাদের নেই।

আমরা ডানপন্থী অঙ্গনে জনপ্রিয় উপন্যাস 'সাইমুম সিরিজে'র কথা উল্লেখ করতে পারি, কিন্তু জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে সেটা হুমায়ূন আহম্মদের 'মিসির আলী'র ধারের কাছেও নেই, এর কারণ কি? এটাকি শুধুমাত্র ভালোমানের পরিবেষক এবং প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানের অভাবের কারণে! আসলে যুক্তিটা কতটুকু ধোপে টিকবে? আমরা সবাই সিএইচপি বা স্পন্দন অডিও ভিজ্যুয়াল সেন্টারের নাম জানি, তাদের ক্যাসেট বাংলাদেশের কয়টা দোকানে পাওয়া যায়? শতকরা হিসেব করলে বলা যায় অতি নগন্য। অথচ এই সিএইচপি যখন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মাহফিলের ক্যাসেট বাজারজাত করে তখন মানুষ লাইন করে সেই ক্যাসেট কিনে নিয়ে যায়। তার মানে বিষয় পরিস্কার, ‘অন্য প্রকাশ’ হুমায়ূন আহম্মদকে জনপ্রিয় করেনাই, বরং হুমায়ূন আহম্মদই ‘অন্যপ্রকাশ’কে জনপ্রিয়তার শিখড়ে নিয়ে গেছে। একজন পাঠক যখন বইয়ের দোকানে গিয়ে বলে আবুল আসাদের সাইমুম সিরিজ আছে? তখন দোকানদার তার দোকানে সাইমুম রাখতে বাধ্য হয়, এটাই নিয়ম।

ঘুরে ফিরে আবার একই প্রশ্ন এসে হানা দেয় তাহলে আমাদের দূর্বলতা কোথায়? আমাদের সাহিত্যকর্ম, যেমন সাইমুম সিরিজ এবং অনুবাদ সাহিত্য ক্রুসেড সিরিজ জনপ্রিয়তা পাচ্ছেনা কেনো? এখানে আমি দু’টি বিষয়কে সামনে নিয়ে আসবো, একটা হচ্ছে আমরা পাঠক মন বুঝে সাহিত্য রচনা করিনা দুই হচ্ছে আমাদের মধ্যে লেখনি শক্তির অভাব।

হুমায়ূন আহম্মদকে আমরা নাস্তিক হিসেবে আখ্যায়িত করি, ব্যক্তিগত জীবনে হুমায়ূন আহম্মদের বিশ্বাস যাই হোকনা কেনো, একজন পাঠক অনুবিক্ষণ যন্ত্র দিয়ে সার্চ না করলে তার লেখায় নাস্তিকতা খুজে পাওয়া অসম্ভব ব্যাপার, কারণ তিনি মুসলিম পাঠকদের জন্য সাহিত্য রচনা করেছেন, উল্টাপাল্টা কিছু লিখলে পাঠক হারাতে হবে সেটা তিনি ভালো করেই জানতেন। 
অন্যদিকে আমরা যদি জাফর ইকবালের সাহিত্যের দিকে তাকাই তাহলে দেখবো অনেকটা প্রকাশ্যেই তিনি তার উপন্যাসে নাস্তিকতার প্রচার করছেন, তারপরেও তার লেখার জনপ্রিয়তার কারণ হচ্ছে তিনি পাঠকের চাহিদা পূরণ করতে পারছেন। পাঠক সায়েন্স ফিকশন পড়তে চাচ্ছে, বাংলাতে বিকল্প ভালো মানের সায়েন্স ফিকশন না থাকাতে বাধ্য হয়ে একটু কনসিডার করে হলেও পাঠক তার সাহিত্যই গিলছে। 

এবার আসি আমাদের মানসম্পন্ন লেখকের অভাব প্রসঙ্গে, অতীতের কথা বাদ দিলেও এখন যদি আমরা অনলাইন জগতে ভালোমানের লেখকদের দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে তাদের ৭৫% হচ্ছেন বাম ভাবধারার লেখক। এর কারণ কি? লেখকরা কি জন্ম থেকেই বাম হয়ে জন্মগ্রহণ করে? মূল সমস্যা হচ্ছে বাম অঙ্গনে সাহিত্যের যতটুকু চর্চা হয় তার তুলনায় আমাদের অঙ্গন ফাঁকা! আমরা সাহিত্য চর্চা করিনা এটাই হচ্ছে আসল কথা, যাও করি ব্যক্তিগত উদ্যগে দুই’চার লাইন লিখে একদিন হাওয়া। ফলশ্রুতিতে লেখা-লেখি যাদের রক্তে মিশে আছে এমন নিরপেক্ষ মনমানসিকতার তরুণ প্রজন্ম সাহিত্য চর্চা করতে গিয়ে, বামদের সংষ্পর্ষে নিজের অজান্তেই একজন চরমপন্থী বাম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

লেখার মূল টপিক ছিলো, জনপ্রিয় লেখক তৈরীতে আমাদের করণীয়। উপরের আলোচনাতেই মূল বিষয়গুলো চলে এসেছে। নিজস্ব প্লাটফর্মে সাহিত্যচর্চার পরিবেশ সৃস্টি, উদীয়মান লেখকদের একই প্লাটফর্মে যুক্ত করা, সর্বোপরী প্রকাশনা সহ সর্বাত্মক পৃষ্ঠপোষকতার ব্যবস্থা করা। একটা কথা আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে, মায়ের গর্ভ থেকে কেউ উপন্যাসিক হয়ে জন্ম নেয়না, লিখতে লিখতেই লেখক। হয়তো আমাদের মধ্য হতেই বেরিয়ে আসবে যুগশ্রেষ্ঠ কোনো সাহিত্যিক, স্বপ্ন দেখতেতো পাপ নেই!

১৮জুন২০১৩

Post Comment

সিটি নির্বাচনে বিজয় পরবর্তী প্রচার কৌশল


facebook link

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সরকারের একটা ফাঁদ মাত্র। সরকার এই নির্বাচন নিরপেক্ষ করে নিজেদের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার কৌশল করেছে, তারা এই নির্বাচনে হেরে গিয়ে বড় কিছু পাওয়ার আশায় ছোট কিছু ছাড় দিয়েছে।


গত দুই দিন ধরে এই টাইপের ফেসবুকে স্টাটাস দেখে দেখে মনে হচ্ছে সিটি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি জামায়াত মারাত্মক অন্যায় করে ফেলেছে, তাদের এই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া উচিত হয়নাই।

নির্বাচনে পরাজিত হয়ে যে কথা আওয়ামীলীগ বলার কথা, আঙুর ফল টক বলতে বলতে যে শেয়াল জিভের জ্বল ফেলেও আপসোস করতে করতে বিদায় হওয়ার কথা। সে কথাগুলো আমরাই বলে দিচ্ছি, তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছি, মুখ রক্ষার অস্ত্র।

আওয়ামীলীগ যে কতটা নিরপেক্ষ সিটি নির্বাচন উপহার দিয়েছে সেটা আমরা নির্বাচনের দিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দেখতে পেয়েছি। রাজশাহীতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা সাময়ীক ভাবে বন্ধ করে দেয়া হলো। বরিশালে পোলিং এজেন্টকে মারধর করে বের করে দেয়া হলো। প্রিজাইডিং অফিসার অতিরিক্ত ব্যালট সরবরাহ করতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা খেয়ে বহিস্কৃত হলো, এগুলো হচ্ছে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দৃশ্য। 

যেই কাজটি করা দরকার ছিলো আমাদের, সেটা আওয়ামী শিবির করে যাচ্ছে। তারা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের শোচনীয় পরাজয়ের কারণ উদ্ঘাটনের চেস্টা করছে, এটা নিয়ে স্টাটাসের পর স্টাটাস দিচ্ছে, কিভাবে জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া যাবে, জনগণ কেনো তাদের ভোট দেয়নাই, এই বিষয়গুলো তাদের লেখনীতি উঠে আসছে। আর আমরা অজ্ঞ-মূর্খের দল, পরে আছি, তত্ত্বাবধায় দিবে কি দিবেনা এই থিওরী কপচানোর জন্য। 

তত্ত্বাবধায় কেউ সাধে দিবেনা, আদায় করে নিতে হবে। এই বিষয়টি আমাদের মাথায় যতদিন না ঢুকবে ততদিন পর্যন্ত মখা আলমগীররা মন্ত্রীর চেয়ারে বসে পুলিশকে গুলি করার কমান্ড দিয়েই যাবে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবেনা।

এই মূহুর্তে আমাদের ফেসবুক আন্দোলন হওয়া উচিত, চারটি সিটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে জনগণ কেনো প্রত্যাক্ষাণ করেছে সে কারণগুলো বেশি বেশি করে হাইলাইট করে জনগণের কাছে স্পষ্ট করে তোলা, যাতে জাতীয় নির্বাচনেও জনতা একই বিষয় সামনে রেখে ভোটাধীকার প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়।

নির্বাচনে আওয়ামীলীগের পতনের কারণ হিসেবে আপাতত আমরা যে বিষয়গুলো গুলো হাইলাইট করবো সেগুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে বিশ্ববরেণ্য মুফাসসীরে কোরাণ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আদালতের অবিচার, এবং হেফাজতের সমাবেশে সরকারের নির্মম গণহত্যা। সরকারকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে, সবকিছু সহ্য করলেও ইসলাম ও আলেম ওলামাদের উপর নির্যাতন এদেশের মুসলমানরা মেনে নিবেনা। এবিষয়ে সাঈদী সাহেবের মামলার রায় ঘোষণা পরবর্তী বিশ্বব্যাপী যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃস্টি হয়েছিলো সেটাকেও আমরা সামনে নিয়ে আসতে পারি। জনতার স্বতস্ফূর্ত আন্দোলনের ফলে সরকার পতনের যে সমূহ সম্ভাবনা সৃস্টি হয়েছিলো সেটাও তুলে ধরতে হবে।

প্রতিটা স্টাটাস দেয়ার পূর্বে আমাদের অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে, আমরা সরকারের হাতে কোনো যুক্তি ভিত্তিক অস্ত্র তুলে দিচ্ছি নাতো!

১৭জুন২০১৩

Post Comment

একটি স্বপ্নের অকাল মৃত্যু

fecebook link

অসম্ভব মেধাবী ছাত্র রায়হান, কলেজ লাইফে মৌলবাদী ছাত্র রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ঠতা থাকলেও ভার্সিটি লাইফে এসে রঙিণ জগতের হাতছানিতে বামপন্থার সাথে যুক্ত হয়ে গেলো। কট্টর বিরোধী হয়ে গেলো ধর্মের নামে রাজনীতির, নামাজ/রোজা সেতো পরের কথা, আগে বলতে হবে ঈশ্বর কি সত্যিই অস্তিত্বশীল?

স্বকীয় প্রতিভায় গড়ে তুললো নাট্য সংগঠন, স্বপ্ন আকাশ ছোয়ার, অনেক দূরে এগিয়ে যাবার। ফেসবুকে গ্রুপ তৈরী করা হলো সংগঠনের নামে, তুমুল হিট রায়হান! স্টাটাস দেয়া মাত্র লাইকের বন্যা, হাজার হাজার লাইক। অসংখ্য মেয়ে ফ্যান যুক্ত হয়ে গেলো ফ্রেন্ড এবং ফলোয়ার লিস্টে, ভাইয়া ভাইয়া ডেকে অস্থির! নাট্য সংগঠনের মেম্বারও বাড়তে থাকলো হু হু করে। 

প্রচারেই প্রসার, বড় বড় কয়েকটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দৃস্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হলো রায়হান। তারাও প্রস্তাব লুফে নিলো, এলিট ফ্যামেলির এত এত ছেলে এখানে আছে, এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবেনা! তাদের স্পন্সরেই লক্ষাধিক টাকা ব্যায় করে জাকজমকপূর্ণ ভাবে মঞ্চায়ীত হলো বেশ কয়েকটি নাটক। দেশের প্রথিতযশা ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হলো সেই সব অনুষ্ঠানে। প্রচারিত হলো টেলিভিশিন এবং জাতীয় সংবাদপত্রে, ফেসবুকেও তুমুল আলোচনা। হুহু করে বাড়তে থাকলো সংগঠনের সদস্য। উজ্বল ভবিষ্যতের হাতছানি, লক্ষ লক্ষ টাকার কন্ট্রাক্ট!

সংগঠন যতো বড় হতে থাকলো, অভ্যান্তরীণ রাজনীতি বিস্তৃত হতে শুরু করলো, শুরু হলো নেতৃত্বের কোন্দল। তিল তিল করে গড়ে তোলা সংগঠনের নেতৃত্ব ছিনিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র শুরু হলো। একপর্যায় ষড়যন্ত্রকারীদের স্বরুপ উন্মোচন হলো রায়হানের কাছে, সর্বসম্মতিক্রমে প্রামান্যদলীল নিয়ে গ্রুপ হতে বহিস্কার করা হলো দুষ্টচক্রের হোতা জাহিদকে। অপরাধের ব্যাপারে কোনো স্বীকারোক্তি কিংবা জবাব না দিয়েই চোরের মতো মাথা নিচু করে সভাস্থল ত্যাগ করলো জাহিদ। হাফ ছেড়ে বাচলো রায়হান।

সন্ধার দিকে রায়হানের মোবাইলে একটা কল আসলো, জাহিদ ফোন করেছে। চরম বিরক্তি নিয়ে কল রিসিভ করে বললো, 
হ্যা জাহিদ কি খবর? 
দোস্ত তোর মনে আছে, তুই একবার আমার পিসি থেকে ফেসবুকে লগিন করেছিলি?
হ্যা মনে আছে, কিন্তু সেকথা কেনো?
না এমনিই, কারেন্ট চলে গিয়েছিলো পরে আর লগআউট করতে পারিস নাই, সেটা মনে আছে?
কি বলবি স্পষ্ট করে বল, কথা প্যাচাচ্ছিস কেনো?
এত উত্তেজিত হচ্ছিস কেনো? এখনতো কিছুই বলিনাই, পরে আরো বলবো। আপাতত তোর ফেসবুক ইনবক্সটা একটু চেক করে দেখ, তোর চ্যাট হিস্টরীর কিছু স্ক্রীণসট পাঠিয়েছি।

আতঙ্কে সাদা হয়ে গেলো রায়হানের মুখ। দ্রুত পায়ে বাসায় গিয়ে ল্যাপটপের উপর ঝাপিয়ে পড়লো। যা ধারণা করেছিলো তাই ঘটেছে। কিছু মেয়ে বন্ধুর সাথে রায়হানের পার্সোনাল কিছু কথাবার্তার স্ক্রীনসট পাঠিয়ে দিয়েছে জাহিদ।

গোটা দুনিয়াটাই অন্ধকার হয়ে গেলো রায়হানের কাছে, তিল তিল করে গড়ে তোলা ইমেজ। বুক ভরা স্বপ্ন, সব ধুলিস্মাৎ হয়ে যাবে? আজ কিংবা কাল ভোরে যদি এই স্ক্রীনসট গুলো সবার ওয়ালে শেয়ার হতে থাকে? আর ভাবতে পারেনা রায়হান, প্রচন্ডভাবে মাথা ঘুরছে। তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে রায়হান! চিরতরে ডিএক্টিভেট করে দেয় ফেসবুক একাউন্ট-গ্রুপ। পরিণতি, একটি স্বপ্নের অকাল মৃত্যু!

(ইসলামপন্থী ভাই/বোনেরা, ইনবক্স পরিচ্ছন্ন আছেতো! নাকি আবর্জনা দিয়ে পূর্ণ করে রেখেছেন?)

২৬জুন২০১৩

Post Comment

বিপ্লবের সুবাতাস দেখেছি, সাইমুম দেখার অপেক্ষায় আছি।

facebook link

তুমুল আড্ডা হয়ে গেলো আজ ক্লাস রুমে, স্যার আসতে দেরী হওয়াতে নানা প্রসঙ্গ উঠে আসছিলো আলোচনায়।
হঠাৎ করে আলোচনায় রাজনীতি ঢুকে গেলো, আর রাজনীতি যেখানে ঢুকেছে জামায়াত সেখানে অবশ্যই আসবে। আমি চুপচাপ রাজনীতি বিষয়টাই বুঝিনা এমন একটা গোবেচারা টাইপের ভাব নিয়ে বসে রইলাম, মাঝে মাঝে আলোচনার মোড় ঘুড়ে যেতেই আবার জামায়াত ইস্যুতে ঠেলে দিচ্ছিলাম, আলোচনা যাই করো টপিক জামায়াত!
একজন বললো, আরে জামায়াতকে সরকার কিভাবে দমন করবে? কি করেনাই জামায়াত, কোথায় নেই তারা? স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি, ব্যাংক, বীমা হাসপাতাল নানা রকমের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে তারা।

তার কথায় সম্মতি জানিয়ে আরেক জন বলে উঠলো, আপনি লক্ষ করে দেখবেন জামায়াত সকল সেক্টরে পরিকল্পিত ভাবে লোক পাঠিয়ে দিয়েছে। বিসিএসে তারা টার্গেট নিয়ে নামে এই বছরে এত জন লোক ঢুকাতে হবে, প্রচুর পড়াশোনা করে ছেলেগুলো। তাদেরকে কিভাবে দমন করবেন? অন্যান্য দল যেখানে গোড়া মজবুত না করে আগা নিয়ে ব্যস্ত থাকে সেখানে জামায়াত গোড়া শক্তিশালী করতেছে।

মাঝখান থেকে আরেকজন বলে উঠলো, আপনি শুনলে অবাক হবেন তাদের মধ্যে কেমন আন্তরিকতা কাজ করে। সেদিন গ্রাম থেকে জামায়াতের এক লোক চট্টগ্রামের একটা বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসেছিলো, তার বিল এসেছে ২৫হাজার টাকা। এক লোক ফোন করে বললো, তিনি আমাদের দ্বীনি ভাই তার কাছ হতে কিছু কমিয়ে রাইখেন। ২৫হাজার টাকার বিল হয়ে গেলো ১০হাজার টাকা। বুঝে দেখেন, আওয়ামীলিগ বিএনপি এগুলো করবে?

একজন বললো জামায়াতকে নাকি নিষিদ্ধ করবে? সাথে সাথে অন্যজন তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, আরেনা! নিষিদ্ধ করে লাভ নাই। জামায়াতের যে সিস্টেম কালকেই দেখবেন তারা অন্য নাম নিয়ে আসছে, এদের নিষিদ্ধ করলে কিছু হবেনা।
পেছনের দিক থেকে আরেকজন বললো, লেবার পার্টি/কল্যান পার্টি এগুলোর যেকোনো একটা দলকে জামায়াত সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। তাদের দলের সবাই শিক্ষিত, কেন্দ্র থেকে ঘোশণা দিলেই সবাই নতুন দলের সদস্য হয়ে যাবে, এখানে মার্কা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাবেনা।

আলোচনার মোড় অন্যদিকে ঘুড়ে যাচ্ছিলো, অজ্ঞ টাইপের চেহারা নিয়ে আমি বলে ফেললাম, আচ্ছা জামায়াত নাকি বিএনপি থেকে বের হয়ে আলাদা নির্বাচন করবে?
একজন সাথে সাথেই বললো, না! না! জামায়াত এটা কখনোই করবেনা, সরকার অনেক চেস্টা করেছে জামায়াতকে তাদের জোটে নিতে, জামায়াত গেলে আগেই যেতো। আর এখন মাঠতো জামায়াতের দখলে, জামায়াত এই অবস্থান হারাবে কেনো? বিএনপি দল হিসেবে অস্তিত্ব হারিয়েছে, আগামীতে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় গেলে জামায়াতই সরকার চালাবে।

একজন কোথা হতে একটা অর্থনীতিবিদের রেফারেন্স নিয়ে বললো, বাংলাদেশের অর্থনীতির ১৭% নিয়ন্ত্রণ করে জামায়াত। আপনি লক্ষ করলে দেখবেন, আমরা চাকরী খুজে পাইনা, অন্যদিকে শিবিরের পোলাপাইনরে চাকরীতে খুজে। জামায়াতের এত এত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শিবিরের পোলাপাইনদের খুজে খুজে চাকরী দেয়।

আরেকজন প্রশ্ন করলো, আচ্ছা সরকার জামায়াতের প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে এত কথা বলে, ইসলামী ব্যাংক বন্ধ করেনা কেনো? অন্যজন জবাব দিলো, কেমনে বন্ধ করবে? দেশের বড় বড় দূর্যোগে যখন সরকার ত্রাণ তহবিল খুলে তখন ইসলামী ব্যাংক তাকিয়ে থাকে কে কত টাকা দান করে। দেশের সব প্রতিষ্ঠান মিলে যদি সরকারকে ৫০কোটি টাকা দান করে, সেখানে ইসলামী ব্যাংক একাই সরকারকে ১০০কোটি টাকা দেয়। সরকার কি নিজের পায়ে কুড়াল মারবে?

এখানে ৭-৮জন তরূনের কথোপকথন তুলে ধরলাম, সবাই এমবিএর ছাত্র। আমার জানামতে তারা কেউই রাজনীতির সাথে জড়িত নয়।
বুঝলাম, প্রাথমিকভাবে তারূণ্যের আস্থার স্থানটি জামায়াত দখল করতে সক্ষম হয়েছে। বিপ্লবের সুবাতাস প্রবাহিত হচ্ছে, এখন দেখার অপেক্ষায় বিপ্লবের সাইমুম সৃস্টি করতে জামায়াত কতটুকু সফলতা লাভ করে।


১৫জুন২০১৩

Post Comment

বিয়ে মুবারক! ভাবিয়া করিয় কাজ, করিয়া ভাবিওনা।


তিনটি সত্য ঘটনা, পাত্র-পাত্রীর নাম গুলো পরিবর্তিত।

এক
রাসেদ এবং তানিয়ার বিয়ে হয়ে গেলো, মহা ধুম ধামের বিয়ে। তানিয়া রক্ষণশীল পরিবারের ভদ্র মেয়ে, অন্যদিকে রাসেদ মহা আধুনিক পরিবারের ডিজুস ছেলে, সংসার জীবন ভালোই চলছিলো, বাচ্চাও হয়েছে। 
বিয়ের পর থেকেই তানিয়ে লক্ষ করলো রাসেদের মধ্যে কিছু প্রব্লেম আছে। ভাবলো ইয়াং বয়স, বাচ্চা কাচ্চা হয়ে গেলে সংসারী হবে, সংসারের প্রতি দায়ীত্ববোধ বাড়বে। কিন্তু কল্পনা এক বাস্তবতা আরেক। রাসেদ এক সময় সম্পূর্ণ কন্ট্রোলের বাইরে চলে গেলো, রাত করে বাড়ি ফেরা, মাঝে মাঝে লাল পানি খেয়ে গায়ে হাত তোলা, একাধিক মেয়ে বন্ধু মেইনটেন করা, সবই চললো সমান তালে, স্ত্রী’র প্রয়োজনীয়তা রাসেদের নেই। 
তানিয়া মাঝে মাঝে গুমড়ে গুমড়ে কাদে, অভিমান করে। কিন্তু তার অভিমান ভাঙাবে কে? শ্বশুর শ্বাশুরীর কাছে এগুলো কোনো ব্যাপারই না, এই বয়সে ছেলেরা একটু আধটু এমন হবেই এটা নিয়ে কান্নাকাটি হুলস্থুল করার কিছুনেই।

শিক্ষাঃ দুনিয়াতেই জাহান্নামের আজাবের ঘ্রাণ গ্রহণ করতে হলে কু-চরিত্রের ছেলে/মেয়ে বিয়ে করার বিকল্প নেই।

দুই
হাসান এবং জেরিন একই ক্লাসে পড়ে। অসাধারণ সুন্দরী মেয়ে জেরিন, অসাধারণ বলতে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায় এমন সুন্দরী। কিন্তু প্রব্লেম হলো কাপড় পাল্টানোর মতো করেই প্রেমিক পাল্টায় জেরিন, আজকে এর সাথে তো কালকে ওর সাথে, এভাবেই চলছিলো। হাসানও মনে মনে জেরিনকে পছন্দ করে, কিন্তু সিরায়াল পাচ্ছিলোনা, একদিন হয়ে গেলো, সবাইকে টেক্কা দিয়ে হাসানের সাথে জেরিনের প্রেম হয়ে গেলো।
হাসান আবার ভীষণ চালাক ছেলে, প্রেম গরম থাকতে থাকতেই একা একা বিয়ে করে ফেললো জেরিনকে, বিয়ে মানে পাকা পাকি সম্পর্ক। বিয়ে এমনই সম্পর্ক চাইলেই কেউ কাউকে সহজে ছেড়ে যেতে পারবেনা। উভয় পক্ষের গার্জিয়ানরা প্রথম দিকে ক্যা-কু করলেও পরবর্তীতে মেনে নিতে বাধ্য হলো। নিশ্চিন্ত হাসান, কিন্তু সেটা বেশিদিনের জন্যনা। সংসারের ভিত্তি মজবুত করার লক্ষে বছর খানেকের মধ্যেই ঘর আলো করে সন্তান এলো। হাফ ছেড়ে বাচলো হাসান, যাক আর দূর্ঘটনার সম্ভাবনা নেই।
অভ্যাস হচ্ছে কুত্তার লেজ, বারো বছর চোঙের ভেতরে রাখলেও সোজা হয়না। অথবা বলা যায় কয়লা ধুইলে ময়লা যায়না। একদিন হুট করে হাসানের বন্ধুর সাথে পালিয়ে গেলো জেরিন, বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে বউকে ফিরিয়ে আনা হলো। বছর খানেক পরে অন্য এক ছেলের সাথে আবার পালিয়ে গেলো, বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে নাকি নিজের কাপুরুষতার কারণে জানিনা, আবারো ফিরিয়ে আনা হলো জেরিনকে। এখনো তারা সংসার করছে, এটাকে কি সংসার বলা হয়, নাকি একসাথে থাকা বলা হয়, বিজ্ঞজনেরাই সেটা ভালো বলতে পারবেন।

শিক্ষাঃ প্রেম কইরা রোমান্টি/পোলা মাইয়া বিয়ে করার পরেও যদি তাদের রোমান্টিকটা আগের মতো চলতে থাকে তবে মাইন্ড করার কিছু নাই।

তিন
নাম তার শিমু, চমৎকার সেই মেয়ে, অসাধারণ তার চুল। ডাগর ডাগর চোখের কোণে যেনো জাহাজ ডুবে যায়, প্রথম দেখাতেই মনে হয় কোথায় যেনো দেখেছি। প্রেম মানেনা নিয়ম কানুন, নবম শ্রেণীতে থাকা অবস্থাতেই একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গেলো। সুখের সংসার, ভালোবাসার সংসার, সুখ উপচে পড়ছে দু’জনার জীবনে। জীবিকার তাগিদে একদিন ছেলেটি বিদেশ পাড়ি দিলো, চোখের জলে গাল ভাসিয়ে, বুক ভাসিয়ে বিদায় দিলো প্রেয়সি।
বিরহেই কাটতে থাকলো শিমুর দিনগুলো, কিন্তু সেটা বেশি দিনের জন্য নয়। মনের বন্দরে নোঙর করলো নতুন জাহাজ। একদিন সেই জাহাজে করেই স্বামীর সংসার ত্যাগ করলো শিমু।
বেচারা স্বামী! বিদেশে বসে বুক ফাটা আর্তনাদ করা ছাড়া কিছুই করার ছিলোনা।

শিমু নতুন সংসার, নতুন জীবন। সুখে দুঃখে ভালোই কাটছিলো দিনগুলো, কিন্তু ভালোবাসা দিয়ে মন ভরলেও পেট ভরেনা। পেটের জন্য চাই টাকা, অনেক টাকা। নতুন স্বামীও একদিন উড়াল দিলো বিদেশের উদ্দেশ্যে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিমু এখন তিন নম্বর স্বামীর সংসার করছে। এটাও নাকি ভালোবাসার সংসার, এখানেও সুখ আছে, ভালোবাসা আছে, তবে ভালোবাসা বাড়াবাড়ি রকমের উপচে পড়ছে কিনা জানিনা।

শিক্ষাঃ অপরের সুন্দরী বউ কিংবা পয়সা ওয়ালা স্বামীকে কেড়ে নিয়ে তার ঘর ভাঙার প্রস্তুতি নিচ্ছেন? অপেক্ষা করেন আরেক জন আসছে সে আপনার ঘর ভাঙবে।


১৪জুন২০১৩

Post Comment

জামায়াত নেতাদের ফাঁসি ও আল্লাহর ফয়সালা



বাংলাদেশের ইসলাম প্রিয় জনতার প্রাণপ্রিয় নেতা অধ্যাপক গোলাম আজমের কারাজীবন নতুন নয়, এর পূর্বেও তিনি কারাগারে গিয়েছিলেন, আর ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য কারাজীবন হচ্ছে আল্লাহর নিয়ামত, এবং রাসূল (সঃ) এর সুন্নত। অধ্যাপক গোলাম আযম সম্পর্কে বলতে গিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা শামসুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম নিয়ে তার কোনো মাথাব্যাথা নেই, ট্রাইব্যুনালে কি হচ্ছে সেটা নিয়ে তার কোনো আগ্রহ নেই। তিনি সবসময় দোয়া করছেন আল্লাহ যেনো তাকে শহীদি মৃত্যু দান করেন। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা মৃত্যুভয়ের পরোয়া করেনা, তারা মৃত্যুকে খুজে বেড়ায়।

আল্লাহর রাসূল (সঃ)কে মৃত্যদন্ড দেয়া হয়েছিলো, উল্লাসিত কাফেরের দল তাকে হত্যা করতে গিয়েছিলো। কিন্তু আল্লাহ উত্তম কৌশলী, কাফেরদের কৌশল ব্যর্থ হলো। শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর বেশে আল্লাহর রাসূল (সঃ) মক্কায় ফিরে এলেন।
হজরত ইসা (আঃ) কেও মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিলো, আল্লাহ তাকে আসমানে তুলে নিলেন, পরিনামে হত্যাকারী নিজেই হত্যার শিকার হলো।
ইব্রাহীম (আঃ) কেও মৃত্যু দন্ড দেয়া হয়েছিলো আল্লাহ আগুনকে ঠান্ডা করে দিলেন, বিপুল সংখ্যক মানুষ সেই দৃশ্য দেখে ইসলাম গ্রহণ করলেন।
হজরত যাকারীয়া (আঃ) কে করাত দিয়ে মাঝা মাঝি দুই ভাগে বিভক্ত করে হত্যা করা হয়েছিলো।
রাসূল(স) এর চাচা হযরত হামজা (রাঃ) কে হত্যা করে তার কলিজা ভক্ষণ করা হয়েছিলো। 
তাতে করে তাদের মর্যাদা কমে যায়নি আল্লাহর দরবারে তাদের মর্যাদা বহুগুনে বৃদ্ধি ঘটেছিলো।

আল্লাহ তায়াল তার প্রিয় বাগানের সবচাইতে সুন্দর ফুলটিকেই তুলে নেন নিজের কাছে, জামায়াত নেতৃবৃন্দকে যদি তিনি কবুল করেন সেটা হবে তাদের জন্য অমূল্য পাওয়া, দুনিয়ার সবচাইতে সেরা উপহার। 

সুতরাং ইসলামী আন্দোলনের জন্য মৃত্যুদন্ড নতুন কিছু নয়, আল্লাহ যাকে বিজয় দান করবেন দুনিয়ার সকল শক্তি মিলেও তাকে দমন করতে পারবেনা, বাতিলের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে তারা বিজয়ীর বেশে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন ইনশাআল্লাহ্‌।
১১জুন২০১৩

Post Comment

যুগের বেলাল এবং আবু বকর

facebook link

নবম হিজরী, প্রচন্ড গরমে উত্তপ্ত আরবের মরুবালু, চারিদিকে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে তাবুকের অভিযানের, রাসূল (সাঃ) আহ্বান করলেন দান করার জন্য, ওমর রাঃ বেশ কিছু টাকা-পয়সা রাসুলুল্লাহ সাঃ এর দরবারে হাজির করলেন। রাসুলুল্লাহ সাঃ জিজ্ঞেস করলেন ওমর, পরিবরের জন্য কি রেখে এসেছো? তিঁনি জবাব দিলেন, আমার সমুদয় সম্পদের অর্ধেক রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সমিপে দ্বীনের জন্য হাজির করলাম, আর অর্ধেক পরিবারের জন্য রেখে আসলাম। এরি মধ্যে আবু বকর রাঃ তার ছদকা নিয়ে এসে হাজির। রাসুলুল্লাহ সাঃ জিজ্ঞেস করলেন, আবু বকর, পরিবারের জন্য কি রেখে এসেছো? আবু বকর রাঃ বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার পরিবারের জন্য আল্লাহ ও তার রাসুলের সন্তুষ্ঠি ছাড়া আর কিছুই রেখে আসি নি! ওমর রাঃ তখন আফসোস করে বললেন, হায়, আমি কখনো আবু বকরের সাথে পাল্লা দিয়ে পারলাম না।

তারো অনেক পূর্বের কথা, হজরত বেলাল (রাঃ) তখন সবেমাত্র ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তিনি ছিলেন কৃতদাশ। দূর্বলের উপর সবলের অত্যাচার কত প্রকার হতে পারে কাফেররা তা দেখিয়ে দিলো, আরবের উত্তপ্ত বালু এবং পাথর কুচির উপর তাকে শুইয়ে রেখে বুকে বসিয়ে দেয়া হতো বিশাল আকৃতির পাথর, গলায় রশি বেঁধে মক্কার শিশুদের হাতে ছেড়ে দেয়া হতো। প্রচন্ড রোধে যখন তিনি মূমূর্ষু হয়ে পড়তেন তখন তাকে বলা হতো তুমি ঈমান ছেড়ে দাও, তিনি শুধু একটি উত্তরই দিতেন আহাদ, আহাদ, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। এতে করে জালিমের নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যেতো। তার এই করুন অবস্থা দেখে হজরত আবু বকর(রা) রাসূল(সাঃ) এর অনুমতি সাপেক্ষে তাকে ক্রয় করে মুক্তি দান করেন। জালিমের জুলুমের হাত থেকে মুক্তি লাভ করেন ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন।

এটা ছিলো চৌদ্দশত বছর আগের ঘটনা, এখন ২০১৩সাল। বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের উপর চলছে স্মরণকালের ভয়াবহতম নির্যাতন। দেশের আনাচে কানাচে যুগের বেলালদের উপর চলছে নির্মম অত্যাচার, রিমান্ডের নামে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে ইসলামী আন্দোলনের অকুতোভয় মুজাহিদের। অসংখ্যভাই অন্ধত্ব বরণ করেছেন রিমান্ড নির্যাতনের ফলে, হাসপাতালে মৃত্যুর পথে পাঞ্জা লড়ছে আমাদের ভাইয়েরা।
ইসলামী আন্দোলনের সিপাহ শালার দেলাওয়ার হোসাইন ভাই এখন কারাবন্দী, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক দিন রিমান্ড নির্যাতন চালানো হয়েছে তার উপর। প্লাস দিয়ে চাপ দিয়ে থেতলে দেয়া হয়েছে হাতের আঙুল, ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে কোমড়, শরীরের বিশেষ অঙ্গে দেয়া হয়েছে ইলেক্ট্রিক শক, ক্রমাগত রক্তক্ষরণ হচ্ছে প্রসাবের সাথে। অমানুষিক অত্যাচারের ফলে তিনি বেশিক্ষণ একভাবে বসতে কিংবা শুয়ে থাকতে পারছেননা, কারাগার থেকে আদালতে আসার পথে তাকে বেশ কয়েকবার শুয়ে এবং বসে কাটাতে হয়, এমনকি কারাগারের ভেতরেও হুইল চেয়ার দিয়ে চলাচল করেন এই টগবগে যুবক। কিন্তু জালিমরা জানেনা জুলুম করে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের দমন করা যায়না, বরং এই জুলুমের পথ ধরেই দৃঢ়তর হয়ে মজলুমের ঈমান। কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার ভাই তার মাকে বলেছিলেন মা আমি খাব্বাব খুবাইব(রা)-এর নির্যাতনের কাহিনী পড়েছি, এখন আমি সহ আমার ভাইয়েরা সে পরীক্ষা দিচ্ছি আমার জন্য চিন্তা করনা।
প্রতিরাতে আমরা যখন আলিশান রুমে নরম বিছানায় ঘুমাতে যাই ঠিক সেই সময়টাতে হয়তো দেশের কোনোনা কোনো প্রান্তে পুলিশের হাতে নির্মম রিমান্ড নির্যাতন ভোগ করছে ইসলামী আন্দোলনের কোন এক মুজাহিদ ভাই, হয়তোবা হাসপাতালের বেডে মৃত্যুযন্ত্রনায় ছটফট করছে কোনো মায়ের সন্তান। তারা অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে কোন এক আবুবকরের, আল্লাহর সাহাজ্য নিয়ে যিনি হাজির হবেন মুক্তির রাজপথে।

(ইসলামী ছাত্রশিবিরের কারাবন্দী নেতাকর্মীদের জন্য আইনী সহায়তা এবং অসংখ্য আহত ভাইয়ের সুচিকিৎসা জন্য দেশব্যাপী বিশেষ সহায়তা গ্রহণ করা হচ্ছে। আগ্রহী ভাইয়েরা সংগঠনের নিকটস্থ দায়িত্বশীলের সাথে যোগাযোগ করে আপনার সহায়তা পৌছে দিন। হয়তো আপনার এই সামান্য আর্থিক কোরবানীর বিনিময়ে মহান রব্বুল আলামীন মুক্তি দিবেন যুগের কোন এক বেলালকে)


১১জুন২০১৩

    Post Comment

    নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংশ এবং ঐতিহাসিক মিথ্যাচার

    Shamim Reja
    8/6/2013

    সেদিন এক অনলাইন বন্ধুর একটা পোস্ট দেখে কিছুটা খটকা লাগলো, তিনি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধবংশের জন্য ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজিকে দায়ী করে ক্ষোভ এবং হতাশা প্রকাশ করছিলেন। যে মাহামানবের হাত ধরে বাংলায় ইসলামের প্রবেশ ঘটলো, সেই মহামানবকে নিয়ে এমন বিদ্বেষমূলক অপপ্রচার বর্ণবাদী হিন্দু ঐতিহাসিকদের প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া অন্য কিছু নয়। 

    মূলত হিন্দুরাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে বখতিয়ার খলজি বাংলার মানুষকে মুক্তি দান করেন। অত্যাচারিত নির্যাতিত বৌদ্ধরা দুবাহু বাড়িয়ে বখতিয়ার খলজিদের স্বাগত জানালো। ড. দীনেশচন্দ্র সেনের ভাষায়-‘বৌদ্ধ ও নিম্নবর্ণের হিন্দুরা ব্রাহ্মণ্যবাদীদের আধিপত্য ও নির্মূল অভিযানের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে বাংলার মুসলিম বিজয়কে দু'বাহু বাড়িয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। ড. নিহার রঞ্জন রায় বাঙালির ইতিহাস আধিপূর্বে উল্লেখ করেছেন-‘যে বঙ্গ ছিলো আর্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে কম গৌরবের ও কম আদরের সেই বঙ্গ নামেই শেষ পর্যন্ত তথাকথিত পাঠান মুসলিম আমলে বাংলার সমস্ত জনপদ ঐক্যবদ্ধ হলো।'

    সবচাইতে মজার যে ব্যাপার সেটা হচ্ছে বখতিয়ার খলজি বঙ্গ বিজয় করেন ১২০৪সালের ১০মে, স্যার যদুনাথ সরকার বখতিয়ারের বঙ্গ আক্রমণের সময়কাল বলছেন ১১৯৯ খৃস্টাব্দ। অন্যদিকে অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে বৌদ্ধদের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করা হয় ১১৯৩খৃস্টাব্দে। যে লোকটি ১২০৪খৃস্টাব্দে বঙ্গে প্রবেশ করেন সে কিভাবে ১১৯৩ খৃস্টাব্দে নালন্দা ধবংশ করেন এটা ইতিহাস বিকৃতি কারীরাই ভালো বলতে পারবেন।

    বখতিয়ার খলজি মাত্র ১৭জন সঙ্গী নিয়ে ঝাড়খন্ডের জঙ্গলের ভেতর দিয়ে দ্রুত বেগে ঘোড়া ছুটিয়ে কৌশলে সেনরাজা লক্ষণ সেনের প্রাসাদে হামলা করেন। এসময় লক্ষণ সেন দুপুরের খাবার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বখতিয়ারের আগমনের খবর পেয়ে ভয়ে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান, প্রায় বিনারক্তপাতে বঙ্গবিজয় করেন বখতিয়ার খলজি। সুতরাং বখতিয়ার কতৃক নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধবংশের ঘটনা একটা মিথ্যা অপবাদ ছাড়া কিছুনয়।

    নালন্দার ধ্বংস হয় সর্বোমোট তিনবার, এর মধ্যে প্রথমবার মধ্য এশিয়ার যুদ্ধবাজ হানদের দ্বারা, দ্বিতীয়বার ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অনুসারী বাংলার শাসক শশাঙ্ক দ্বারা ও শেষবার অত্যাচারী সেনরাজাদের দ্বারা। নালন্দাকে প্রথম দুইবার ধ্বংসস্তুপ থেকে দাঁড় করানো গেলেও তৃতীয়বার সম্ভব হয়নি গুপ্ত ও পাল রাজাদের মতো পৃষ্ঠপোষক না থাকায়। দূর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, বর্ণহিন্দু ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের ফলে ভারতবর্ষ থেকে বৌদ্ধদের ব্যাপকহারে দেশত্যাগ ও বৌদ্ধদের জ্ঞানার্জনের চেয়ে তান্ত্রিকতার প্রসারও এর জন্য দায়ী।

    বখতিয়ার খলজির অভিযান ছিলো সেনরাজা লক্ষণসেনের বিরুদ্ধে, বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে নয়। বৌদ্ধরা বখতিয়ারের অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছিলো। সুতরাং বিনারক্তপাতে বঙ্গবিজয়ের পরে বৌদ্ধদের বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করার কাহিনী মুসলিম বিজয়ীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অপপ্রচার বৈ অন্য কিছু নয়।
     


    তথ্যসূত্রঃ http://www.storyofbangladesh.com/ebooks/dui-polasi-dui-mirzafar/93-chapter-1.html
    http://www.shodalap.org/shams/8918/
    http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=93844


    ৮জুন২০১৩

    Post Comment

    এগারো বছরের হিন্দু মেয়েক ধর্ষণ ও সাম্প্রদায়ীক হলুদ সাংবাদিকতা।


    এক
    কারাগারে আমার ওয়ার্ডে জুয়েল নামে এক তরুণ ছিলো, দম ফাটানো হাসির খোরাক যোগাতো ছেলেটি। তার অভিনয় দক্ষতা এত চমৎকার ছিলো মূহুর্তেই যে কাউকে আপন করে নেয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিলো তার। তার বিরুদ্ধে মামলা ছিলো ধর্ষণ মামলা, প্রমাণীত হলে ৩২বছরের জেল! এই ছেলেটি ধর্ষণের মতো এত জঘন্য একটি কাজ করতে পারে, বিশ্বাস করতে কস্ট হচ্ছিলো, তাই মূল ঘটনা জানতে চাইলাম। জুয়েল জানালো, এলাকার এক মেয়ের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, একদিন ঘুরতে বের হয়েছিলো সমুদ্র দেখবে বলে, বাসায় ফিরতে দেরী হওয়ায় মেয়েটি বাবা-মায়ের ভয়ে বাসায় যেতে অস্বীকার করে, বাধ্য হয়ে জুয়েল তার খালার বাসায় মেয়েটিকে রেখে চলে যায়। পরের দিন ক্ষুব্ধ মেয়ের অভিভাবক উচিত শিক্ষা দিবে বলে জুয়েলের বিরুদ্ধে ধর্ষন মামলা দিয়ে দেয়, ফলশ্রুতিতে জুয়েল কারাগারে আর মেয়েটি বাবা মায়ের হেফাজতে, তার আর কি করার আছে!? সেদিন জুয়েল ফোন করেছিলো, জামিন হয়েছে। মেয়েটির খবর জানতে চাইলে বললো মেয়ে এখন পালিয়ে বিয়ে করতে চাইছে, জুয়েল তখন মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করেছিলো, আমি যখন জেলে ছিলাম তখন তোমার এই ভালোবাসা কোথায় ছিলো? আদালতে গিয়ে একটি স্বাক্ষী দিলেতো মামলার অস্তিত্ব থাকতোনা!!

    দুই
    আমার পরিচিত এক ছেলে বান্ধবীকে নিয়ে হাওয়া, পালিয়ে বিয়ে করে কিছুদিন রোমান্স অতঃপর মোহভঙ্গ। টিভি মিডিয়াতে প্রেম ভালোবাসার ক্রমাগত ব্রান্ডিং দেখে এর প্রতি ছেলে-মেয়েদের একটা ফ্যান্টাসি তৈরী হয়, বিয়ের পরে দেখে এই ফ্যান্টাসি ভাঙ্গা ঘরে চাদের আলোর পরিবর্তে বৃস্টির পানি এবং পায়ের নিচে ফুলেল গালিচার পরিবর্তে কাদামাটি, দরজা দিয়ে অভাব ঢুকতেই ভালোবাসা পরিমরি করে জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়।
    মেয়ের বাবা-মা ছেলেটির বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দিয়ে দেয়। পুলিশ যখন ছেলে-মেয়ে উভয়কে গ্রেপ্তার করে তখন মেয়েটি হাউ-মাউ করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বাবা মায়ের মাইরের ভয়ে সব দোষ ছেলেটির উপর চাপিয়ে দেয়, আমি যেতে চাইনি ওইতো আমাকে জোড় করে নিয়ে গেছে। মেয়েটির ১৮বছর পূর্ণ হয়নি, তাই ছেলেটির বিরুদ্ধে ধর্ষণ,অপহরণ,জোরপূর্বক বিয়ে ও আরো হাবি-জাবি বেশ কিছু ধারা যুক্ত একটি মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।

    তিন
    আমার বন্ধুর ছোট বোন, দুই দুইবার একটি ছেলের সাথে পালিয়ে যায় প্রেমের টানে, কিন্তু দু’বারই কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরে আসে। ছেলেটি নাকি তাকে জোড় করে নিয়ে গিয়েছিলো সে যেতে চায়নি! সত্যি ঘটনা হচ্ছে, পালিয়ে গিয়ে একা একা বিয়ে করার সাহস পায়নি তাই ফিরে এসেছে।

    চার
    গাজিপুরের ১১বছরের একটি হিন্দু মেয়েকে চকরিয়াতে নিয়ে গিয়ে প্রথমে মুসলমান বানানো হয়েছে, পরে বিয়ে করা হয়েছে এবং সর্বশেষ ৫৫দিন ধরে ধর্ষন করা হয়েছে, এটা কালের কন্ঠের নিউজ। আমাদের ফেসবুক চুশিলরা এটা নিয়ে হেব্বি কান্নাকাটি শুরু করেছে, তাদের চোখের পানিতে ফেসবুক ভেসে যাচ্ছে।
    এবার খবরটি একটু বিশ্লেষণ করা যাক, একজন ধর্ষক একটি ছোট মেয়েকে ধর্ষণ করবে, তার কি ঠেকায় পড়েছে মেয়েটিকে হিন্দু থেকে মুসলিম বানাতে হবে? আচ্ছা ধরে নিলাম হিন্দু ধর্ষণ করতে রুচিতে বেঁধেছে তাই মুসলিম বানিয়ে নিয়েছে, এবার দ্বিতীয় প্রশ্ন, ধর্ষণ করতে কি বিয়ে করার দরকার আছে? মূল ব্যাপারটি বুঝতে পেরছেন? ৫৫দিন ধরে লোকালয়ে আটকে রেখে একটা মেয়েকে ধর্মান্তরিত করণ, বিয়ে করা এবং সর্বশেষ ধর্ষণ করা এটা কি মগের মুল্লুক নাকি আফ্রিকার জঙ্গলের ঘটনা?
    আপনি না বুঝলেও মূল ঘটনা আমি বলছি ওই সব দালাল মিডিয়া কান নিয়ে গেছে বলছে, আর আপনি আমি কানের জন্য কান্নাকাটি করছি মূল ঘটনা বোঝার চেস্টা করছিনা।
    যেই লোককে অপরাধী বলা হচ্ছে তার সাথে মেয়েটির সম্ভবত প্রেমের সম্পর্ক ছিলো, আর আমাদের দেশে যেহেতু বয়স চুরি করা ঐতিহ্যগত ব্যাপার সেক্ষেত্রে মেয়েটির বয়স ১১ এটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়, খবরের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য হয়তো বয়স কমিয়ে বলা হয়েছে। মেয়েটি প্রেমের টানে, বলা যায় আবেগের ঠেলায় ছেলেটির হাত ধরে পালিয়ে যায়, এক্ষেত্রে ছেলের বন্ধুরা যেটা করে থাকে তাকে সহযোগীতা করেছিলো। ছেলেটির যেহেতু নিয়্যত ভালো ছিলো তাই সে মেয়েটিকে বিয়ে করলো, কিন্তু ইসলামেতো পৌত্তলিক বিয়ে করার অনুমতি নেই তাই মেয়ের সম্মতিতেই তাকে মুসলিম বানানো হলো।
    কিছুদিন পরেই মেয়েটির মোহ ভেঙ্গে যায়, ভালোবেসে বিয়ে করা আর বাবা-মা ত্যাগ করে ভিন্ন ধর্ম গ্রহণ করা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যপার। মেয়ের বাবা মায়ের মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করার পরে মেয়েটি নিজেকে নির্দোষ দাবী করে, সব দোষ ছেলেটির উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। বলির পাঠা বানানো হয় প্রেমিক ছেলেটিকে।
    আর আমাদের দেশের মিডিয়া যেহেতু অতিরিক্ত রকমের ভারতপন্থী এবং ইসলাম বিদ্বেষী সেহেতু তারা এটাকে রং মাখিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে সেটাই স্বাভাবিক।
    ফাসিক ব্যক্তি খবর নিয়ে এলে যাচাই করে নিন, অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করে কারও প্রতি জুলুম করবেননা।

    দৈনিক কালের কন্ঠে যে নিউজটি প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে বেশ কিছু তথ্যগত প্রতারণা করা হয়েছে
    ১। মেয়েটির বয়স উল্লেখ করা হলেও ছেলেটির বয়স উল্লেখ করা হয়নি, কারণ তাতে করে প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসতে পারে।
    ২। মেয়েটির অবস্থান হিসেবে বলা হয়েছে চকরিয়া, কিন্তু চকরিয়ার কোন এলাকায় ছিলো সেকথা কিন্তু উল্লেখ করা হয়নি, অন্য কেউ যদি প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করে সে ভয়ে।
    ৩। মেয়েটিকে যে স্থানে রাখা হয়েছে তার আশে পাশের কোনো প্রতিবেশি কিংবা প্রত্যক্ষদর্শী কারও সাক্ষাৎকার দেয়া হয়নাই।
    ৪। মেয়েটিকে অপহরণ করা হয়েছে গাজীপুর থেকে, সেখান থেকে তাকে আনা হয়েছে কক্সবাজার চকরিয়াতে, সুদীর্ঘপথ অতিক্রম করা হয়েছে। তারপর হুজুর ডেকে তাকে মুসলমান বানানো হয়েছে, বিয়ে করা হয়েছে, দীর্ঘ পঞ্চান্নদিন ধরে তার সাথে সংসার করা হয়েছে অথচ একটিবারের জন্য কারও কাছে মেয়েটি অভিযোগ করেনাই, "আমাকে জোর করে ধরে আনা হয়েছে আমাকে উদ্ধার করেন"।
    ৫। নিউজটিতে বলা হয়েছে মেয়েটির স্বামী ছাড়াও তার বন্ধুরা তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করার চেস্টা করেছিলো। এর মানে কি? আপনি যদি বন্দী হয়ে থাকেন তবে চেস্টা করার কি আছে? ধর্ষণতো সেখানে নিশ্চিত ছিলো!! যেহেতু ছেলেটির বন্ধুরা মেয়েটিকে ধর্ষণ করতে সক্ষম হয়নাই এবং শুধুমাত্র তার স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে সেহেতু বোঝা যাচ্ছে এটা ধর্ষণ ছিলোনা, সম্পূর্ণভাবে স্বাধীণ অবস্থান থেকে মেয়েটি তার স্বামীর সাথে বসবাস করেছে এবং শেষ দিকে এসে মা-বাবার টানে কিংবা ধর্মীয় কারণে উল্টে গেছে, আবেগ শেষ হয়ে গেছে।

    আল্লাহ আমাদের সত্য মিথ্যার পার্থক্য উপলব্ধী করার তাওফীক দান করুন, আমিন।

    ৪জুন২০১৩

    Post Comment

    অদেখা ভ্যাও-এর আতঙ্কে পার হয় জীবন



    প্রচন্ড কৌতুহল নিয়ে শিশুটি জানালার বাহিরে তাকিয়ে থাকে, লাল-নীল ডানা মেলা প্রজাপতির উড়াউড়ি কিংবা ঝিঁঝিঁ পোকার অবিরত ডাকাডাকি কৌতুহলি চোখে অবলোকন করে। দাওয়ায় বসে দেখে রোদের লুকোচুরি খেলা, দরজার ওপাশের ঘাশের ডগায় শিশির বিন্দু তাকে হাতছানি দিয়ে আহ্বান করে। শিশুটি হেসে ওঠে, ছুটে যেতে চায় প্রকৃতির বুকে, অজানা জগতটাকে জানার অদম্য আকর্ষনে ছুটে যেতে চায় প্রকৃতির কোলে। কোথা হতে ছুটে আসে মা, ঘুম পাড়ানি গান শুনিয়ে তাকে ভুলিয়ে দিতে চায় প্রকৃতির হাতছানি, অবুঝ শিশুর তীব্র কৌতুহলী মন বারবার ছুটে যেতে চায় জানালার ওপাশে। মা তাকে ভয় দেখান ওখানে ‘ভ্যাও’ আছে, ভ্যাও তোমাকে কামড়ে দিবে। ভয়ে কুকড়ে যায় শিশু হৃদয়, সে জানেনা ভ্যাও দেখতে কেমন হয়, তবে এটুকু অন্তত বিশ্বাস করে মা নিশ্চই মিথ্যে বলবেনা! অদেখা ভ্যও-এর আতঙ্কে কেটে যায় শিশুর প্রতিটি সকাল দুপুর সন্ধ্যা।

    মাদ্রাসা’র জানালায় বসে, সদ্য কৈশর উত্তীর্ণ ছাত্রটি অবাক তাকিয়ে রয়। দাড়ি নেই টুপি নেই একদল ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্র কোরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছে। না তারা মাদ্রাসায় পড়েনা, তাহলে তারা ইসলাম শিখলো কোথা থেকে? অবাক ছাত্রটি হাতড়ে বেড়ায় তার প্রশ্নের জবাব। শ্রদ্ধেও শিক্ষককে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, এখন জিহাদের সময় আসেনি, আগে ঈমান মজবুত করো। হতবাক ছেলেটি অবাক তাকিয়ে রয়, এত এত বছর কোরআনের প্রশিক্ষণ নিয়েও শিক্ষক মহাশয়ের ঈমান কি মজবুত হয়নি! তাহলে তিনি কেনো জিহাদ করছেননা। যে ছেলেটি তপ্ত বুলেটের সামনে বুক পেতে দিচ্ছে কোরআনের রাজ প্রতিষ্ঠার জন্য তার ঈমানে ঘাটতি আছে! বিশ্বাস করতে কস্ট হয় তরুণ ছাত্রটির। অন্ধকারে হাতড়ে বেড়ায় নিজের প্রশ্নের জবাব, কোন সে মহান শিক্ষক তাদের চোখে বুনে দিয়েছেন ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন। একসময় ছাত্রটি পেয়ে যায় তার প্রশ্নের জবাব। তিনি এক মহান দার্শনিক, যিনি অসংখ্য পুস্তক রচনা করেছেন, প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি ইসলামী সংগঠন, যে সংগঠন মাদ্রাসার গন্ডি ছাড়িয়ে গিয়ে কলেজ ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের কাছে ইসলামকে উপস্থাপন করেছেন সহজ সরল এবং আধুনিক পদ্ধতীতে। শত শত বছর মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা যেখানে একদল মরণজয়ী মুজাহিদ তৈরি করতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে তার লেখা বই পড়ে একজন ভার্সিটি ছাত্র এগিয়ে আসছে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে।
    ছাত্রটি আবার ফিরে যায় তার শিক্ষকের কাছে, জানতে চায় সেই দার্শনীক সম্পর্কে, আত্মগর্বে বলিয়ান শিক্ষকটি দ্বিধায় পড়েযায়, আতঙ্কিত বোধ করে কতৃত্ব হারানোর প্রশ্নে।
    শিক্ষক ছাত্রকে আদেশ করে ওই বই পড়োনা, ওই বইতে ভুল আছে, তুমি গোমরাহ হয়ে যাবে। ঘৃণায় পূর্ণ হয়ে যায় ছাত্রটির হৃদয়, সে জানেনা কোথায় কোথায় ভুল আছে, তবে এটুকু অন্তত বিশ্বাস করে, শিক্ষক নিশ্চই মিথ্যা বলবেননা। অদেখা ভুল এর বিশ্বাসে কেটে যায় ছাত্রটির সারাটি জীবন, তার সন্তানদেরকেও শিখিয়ে যায় ওই বই পড়োনা ওখানে ভুল আছে!

    ২৩মে২০১৩

    Post Comment

    কলঙ্কিত পিতার সম্মান রক্ষা



    এক
    গ্রামের এক নামকড়া চোর ছিলো, নাম বলতে বদনাম ছিলো হেব্বি। তার কাজ ছিলো কবরস্থানের লাশের কাফনের কাপড় চুরি করা।
    একদিন মৃত্যু শয্যায় চোরটি তার সকল ছেলেকে ডাক দিয়ে বললেন, বাবারা তোমরা জানো আমি জীবনে অনেক গুনাহ করেছি, মানুষ আমাকে অনেক খারাপ জানে, তোমরা এমন কিছু করবে যাতে মানুষ আমাকে ভালো বলে, আমাকে গালি না দেয়। ছেলেরা কথা দিলো তারা পিতার সম্মান রাখবে। অবশেষে চোরটি মারা গেলো।
    কিছুদিন পরে দেখা গেলো, ছেলেরা কবর থেকে কাফনের কাপড় চুরি করে, লাশের পেছনের দিকে বাঁশ ঢুকিয়ে ঝুলিয়ে রাখছে।
    লোকে বলাবলি শুরু করলো, বাপেতো এর চাইতে অনেক ভালো ছিলো, শুধু চুরি করতো অন্য কিছু করতোনা, ছেলেরা এত খারাপ কেমনে হইলো!?

    দুই
    এক দেশে মস্তবড় এক রাজনৈতিক নেতা ছিলেন, চোরের খনিতেই যিনি বসবাস করতেন। কথায় কথায় মানুষ হত্যা করতে যিনি আনন্দিত হতেন। শত্রুকে হত্যা করে, সংসদে দাড়িয়ে হুংকার ছেড়ে বলতেন কোথায় অমুক!? বিরোধী রাজনৈতিক দলের চল্লিশ হাজার রাজনৈতিক নেতা হত্যা করেছিলেন সেই নেতা। দেশের সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। বাকস্বাধীনতার কন্ঠরোধ করে সবগুলো পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। মানুষ চরমভাবে ঘৃনা করতে শুরু করলো এই নেতাকে, ক্ষুব্ধ দেশপ্রেমিকরা তাকে হত্যা করলো। মানুষ পেলো স্বাধীনতা, মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস গ্রহণের অনুভূতি।
    মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে সেই নেতা তার পরিণতি বুঝতে পেরে তার মেয়েকে কাছে ডেকে বলেছিলেন, মা দেশের মানুষ যেভাবে ক্ষিপ্ত হয়েছে আমি হয়তো আর বেশিদিন বাচতে পারবোনা, দেশের মানুষ আমাকে 'বাকশাল' বলে গালি দেয়। তুই আমার সম্মান রাখিস, এমন কিছু করবি যাতে মানুষ আমাকে গালি দিতে না পারে।

    মেয়ে তার কথা রেখেছিলো, পিতার সম্মান রক্ষার স্বার্থে ক্ষমতায় বসে প্রথমেই সেনা অফিসারদের হত্যা করলো পিলখানাতে, তারপরে গণহত্যা চালালো সাঈদী মুক্তি আন্দোলনের কর্মীদের উপর। শ্রমিকরাইবা বাদ থাকবে কেনো, নিজের দলের নেতাকে উস্কানী দিয়ে সাভারে হত্যা করা হলো হাজার হাজার পোষাক শ্রমিককে। না, পিতার বদনাম এতেও ঘুচে নাই! এবার তিনি নজর দিলেন দেশের সর্বজন শ্রদ্ধেও আলেমদের উপর, মতিঝিলে হত্যা করা হলো হাজার হাজার আলেম ওলামাকে। পিতার চাইতেও ভয়াবহ ভাবে দেশের বিরোধী মতের সকল টিভি এবং পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হলো, গ্রেপ্তার করে রিমান্ড নির্যাতন করা হলো সম্পাদককে। তালা মারা হলো বিরোধী দলের অফিসে, অঘোষিত ভাবে দেশের সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একমাত্র সরকারীদল করার অনুমতি দান করা হলো।
    পিতার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, এখন মানুষ বলাবলি করছে, এর চাইতেতো তার পিতা অনেক ভালো ছিলো, পিতা মানুষ হত্যা করলেও দেশের উপকার করেছে, কিন্তু মেয়েতো দেশকে ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছে! মেয়ে এতো খারাপ হইলো কেমনে!?
    এখন আর মানুষ 'বাকশালী' বলে গালি দেয়না, সবাই এখন 'আওয়ামীলীগ' বলে গালি দেয়!!

    ১৩মে২০১৩

    Post Comment

    সংকটে হেফাজত



    কওমী মাদ্রাসা কেন্দ্রীক সংগঠন হিসেবে আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচীতে ঘোষণা করতে বিপাকে পরেছে হেফাজতে ইসলাম। একদিকে সরকারের মামলার হুমকি, অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে মাদ্রাসা সমূহে হামলার আশঙ্কা থেকেই এই সংকটের শুরু।
    গণহত্যা ইস্যুতে প্রবল জনমত এখন হেফাজতের সমর্থনে, অন্যদিকে সংগঠনের ভেতর থেকেও আন্দোলনের জন্য তীব্র চাপের সম্মুখিন হেফাজত নেতৃবৃন্দ। রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী নেতৃবৃন্দ যেখানে সরকারের মামলার মুখে আত্মগোপন করেও আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারছে, সেক্ষেত্রে মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠন হওয়ায় হেফাজতের জন্য ব্যাপারটা প্রায় অসম্ভব। মাদ্রাসা বন্ধ করে শিক্ষকরা পালিয়ে গেলে শিক্ষাকার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হবে। অন্যদিকে ছোট ছোট মাদ্রাসা গুলোতে স্থানীয় আওয়ামীলিগের সন্ত্রাসীরা নিয়মিতই হামলা ভাংচুর করে মাদ্রাসা বন্ধ করে দিতে পারে। এমতাবস্থায় মাদ্রাসা শিক্ষা টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই আন্দোলন শুরু করার পূর্বে দ্বিতীয়বার ভাবতে হচ্ছে হেফাজতকে। রবিবারের হরতাল প্রত্যাহারের মাধ্যমেই ব্যাপারটি প্রকাশ্য আসে।
    এমতাবস্থায় রাজপথে শহীদের লাশ ফেলে রেখে ঘরে ফিরে যেতে পারছেনা হেফাজতে ইসলাম, অন্যদিক দাবী আদায়ে কঠিন কর্মসূচীও দিতে পারছেনা। হেফাজতে ইসলামের সামনে এখন দুটো বিকল্প খোলা আছে, প্রথমত তারা মাদ্রাসা ছেড়ে বিকল্প নেতৃত্বের আওতায় আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারে। অথবা, প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে গোপন সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করতে পারে। তবে দ্বিতীয় অপশনটি সম্ভবত চলমান বিশ্বপরিস্থিতির কারণে গ্রহণ করবেনা হেফাজতে ইসলাম।
    তবে ভবিষ্যতই বলে দিবে কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয় হেফাজতে ইসলাম এবং ১৩দফারই বা ভবিষ্যত কি!
    এদুটি বিকল্পের বাইরেও আল্লাহর সাহাজ্য বলে একটা ব্যাপার আছে, আমরা অপেক্ষায় আছি আল্লাহর সহায়তার।

    ৯মে২০১৩

    Post Comment

    সম্পূর্ণ ইসলামের পক্ষের একটি বিশ্লেষণ (নিরপেক্ষ নয়)।



    একান্তই আমার নিজস্ব অভিমত, কারও অনুভুতিতে আঘাত লাগলে কমেন্টে জবাব দেয়ার জন্য অনুরোধ রইলো।

    মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করছেন তারা নিশ্চই লক্ষ করে থাকবেন, হেফাজতে ইসলামের যতগুলো কর্মসূচী ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে প্রতিটি প্রগ্রামে সম্পূর্ণ প্রগ্রাম ম্যানেজমেন্টের দায়ীত্ব তারা নিজেরাই সম্পন্ন করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মঞ্চ নিরাপত্তা ও খাবারের সরবরাহের দায়ীত্ব দেয়া হয়েছে জামায়াত-শিবিরের হাতে। এবং এটাও নিশ্চই লক্ষ করে থাকবেন, কওমী মাদ্রাসা কেন্দ্রীক আলেমদের মধ্যে জামায়াত শিবিরের প্রতি যে ঘৃণা ও তাচ্ছিল্য ছিলো, সেটার বিন্দুমাত্র কমতি ছিলোনা তাদের কর্মসূচীতে স্বেচ্ছাসেবকদের আচরনে। যদিও জামায়াত নেত্রীবৃন্দের কাছে সহায়তা চাওয়ায় জামায়াত তার ঐতিহ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ জনশক্তি সরবরাহ করেছে হেফাজতের কর্মসূচীগুলোতে এবং সেক্ষেত্রে জামায়াত-শিবির নিজস্ব ব্যানার ইউজ না করে হেফাজতের সাইনবোর্ড ব্যবহার করেই সে সমস্ত প্রগ্রামে হাজির হয়েছে।
    ৫মে সরকার পতনের সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিলো এবং সেটা হেফাজতকে সামনে রেখেই পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। বিএনপির নীতি নির্ধারকরা দেখতে পাচ্ছিলো, জামায়াতের একাত্তর ইস্যুতে একটা কলঙ্ক আছে কিন্তু সেক্ষেত্রে হেফাজত একেবারে ফ্রেশ। সরকার পতনের পরে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেটা করা হবে জোটগত ভাবেই, আসন বন্টনের ক্ষেত্রে জামায়াত বিগত ৫বছরের আন্দোলন সংগ্রামের মূল্যায়ন চাইতে পারে কিন্তু হেফাজতকে অল্পতেই তুষ্ট করা যাবে। বিএনপি এটা ভালো করেই জানে কওমী আলেমদের সাথে জামায়াতের একটা দূরত্ব আছে। বিএনপি কৌশলী হলো, তারা এই দূরত্বকে কাজে লাগাতে চাইলো, রাজনৈতিক ময়দানে জামায়াতকে কোণঠাসা করে ফায়দা উঠানোর পরিকল্পনা হাতে নিলো।
    বিএনপির এই পরিকল্পনারই বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পাই ৪মে এর সমাবেশে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের মাধ্যমে। আমরা যদি খালেদা জিয়ার বিগত বক্তব্য সমূহ পর্যালোচনা করি সেখানে দেখতে পাই, সবগুলো বক্তব্যে তিনি জামায়াত শিবিরের ত্যাগের মূল্যায়ন করে বক্তব্য রেখেছেন, আন্দোলন সংগ্রামে জামায়াত-শিবিরের সাহসীকতার প্রশংসা করেছেন। কিন্তু ৪তারিখের জনসভায় খালেদা জিয়া সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম বক্তব্য রাখলেন, তার বক্তব্যে জামায়াত শিবিরের ত্যাগের মূল্যায়নতো দূরের কথা নামই উল্লেখ করলেননা, অন্য দিকে ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল কনটিনিউ করার ঘোষণা দিলেন।
    বিএনপি একপ্রকার নিশ্চিত ছিলো সরকার পতন হতে যাচ্ছে, তাই তারা একঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিলো। আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে হেফাজতের চাহিদা ছিলো স্বল্প কিন্তু জামায়াতের রাজনৈতিক চাহিদা ছিলো অনেক, তাই বিএনপি জামায়াতকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে হেফাজতকে নিয়েই এগোতে চাচ্ছিলো। হাসিনার সরকারের পতন হলে বিএনপির কাছে জামায়াতের রাজনৈতিক প্রয়োজন ফুরিয়ে যেতো।
    জামায়াত পরে যেতো উভয় সংকটে একদিকে জামায়াত ইমেজ সংকটেরে কারণে আওয়ামীলীগের দিকে ভিরতে পারতোনা, অন্যদিক আওয়ামীলীগও এতদিনের অপপ্রচারের পরে রাজনৈতিক ভাবে মার খাওয়ার ভয়ে জামায়াতের সাথে জোট করতে চাইতোনা। ফলে বিএনপির যেকোনো শর্তে জামায়াত জোটে থাকতে রাজি হতে বাধ্য ছিলো। হয়তো আসন ভাগাভাগির প্রশ্নে বিশাল একটা ছাড় দিয়ে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় নেত্রীবৃন্দের মুক্তির শর্তেই জামায়াত জোটে থাকতে রাজী হয়ে যেতো।
    অন্যদিক বাংলাদেশের মুসলিমদের মধ্যে যে বৃহত্তর ইসলামী ঐক্যের স্বপ্ন সেটা ধুলিস্মাত হয়ে যেতো। হেফাজতের আন্দোলনের ফলে সরকার পতন হলে হেফাজত ঘোষণা দিতো আমরাই একমাত্র আল্লাহর পক্ষের শক্তি ইসলামীক দল, তাই অল্প সময়েই আল্লাহ আমাদের বিজয় দান করেছেন। জামায়াত ভ্রান্ত পথে আন্দোলন করছে, এব্যাপারে তাদের যে ধারনা সেটাই বদ্ধমূল হতো। আল্লাহ হয়ে যেতো হেফাজতে ইসলামীর একক সম্পত্তি, জামায়াত হয়ে যেতো ইসলামের কুপুত্র।
    শাহদাত চত্বরের সেদিনের নৃশংস গণহত্যায় মুসলিম উম্মাহর মূল্যবান সম্পদ রাসূল (সঃ) এর উত্তরসূরী অসংখ্য আলেম ওলামা শহীদ হওয়াতে হয়তো সাময়ীক ভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি কিন্তু এর প্রভাব সূদূর প্রসারী। এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মুসলিমরা আত্মপর্যালোচনার সূযোগ পাবে, নিজেদের অনৈক্যের কারণেই যে প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হয়েছে এই বিষয়টি সামনে চলে আসবে। জামায়াত সহ অন্যন্য ইসলামী দলেরপ্রতি মিডিয়ার অপপ্রচারের একমাত্র কারণ যে ইসলাম সেটা অবশ্যই পরিস্কার হবে। আল্লামা শফিকে এতদিন সবাই সর্বজন শ্রদ্ধেও আমিরুল মুমিনীন হিসেবেই চিনতেন কিন্তু যখনি তিনি ইসলামের পক্ষ নিয়ে প্রকাশ্য অবস্থান নিলেন তখনি তিনি একাত্তরেরে রাজাকার কিংবা পাকিস্থানের স্বপক্ষের মুজাহিদ কমিটির প্রধান হিসেবে আখ্যায়িত হলেন।
    ঘুমন্ত মুসলিমদের চোখ খুলে দেয়ার জন্য এমন একটি ঝাঁকুনি অতি প্রয়োজন ছিলো। মহান রব্বুল আলামীন সেই ঝাঁকুনিই মুসলমানদের দিয়ে দিলেন, আশা করি বৃহৎ ইসলামী ঐক্যের পথে এই ঘটনাটি ব্যপক ভূমিকা রাখবে।

    ৮মে২০১৩

    Post Comment