সরকার পতনের উপায় সমূহ


বেগম খালেদা জিয়া বক্তব্য রাখলেন, উপজেলা নির্বাচনের পরে কঠোর আন্দোলন করবেন। সম্ভবত জাতিকে নতুন করে কিছুটা আশার আলো দেখানোর জন্যই তিনি এই বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি’র এই কঠোর আন্দোলনের ঘোশণাকে সাধারণ জনতা মগা হারবালের ঔষধের চাইতে মূল্যবান কিছু মনে করে বলে মনে হয়না।
বিগত পাঁচটি বছর ধরে জনগণ কখনো রমজানের ঈদের পরে, কখনোবা কোরবানীর ঈদের পরে, আবার কখনোবা এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার পরে বিএনপির এই কঠোর আন্দোলনের নামে মস্কারী দেখতে পেয়েছে।
এই ঘোশণাটি যদি জামায়াতের কাছ হতে আসতো, তাহলে সাধারণ জনতা সেখানে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখতে পেতো বলে মনে করি। যদিও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সদম্ভেই ঘোশণা করছে, প্রচলিত পদ্ধতীর আন্দোলন করে এই সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব নয়, কারণ আন্দোলনে দেশ জাহান্নামে গেলেও আওয়ামীলীগের কিছু আসে যায়না।

অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে আগামী পাঁচ বছর কিংবা তারো অধিক সময়ের জন্য আওয়ামীলীগ সরকারকে মেনে নিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। আসলে মেনে নেয়া ছাড়া এই দুটি দলের সামনে আর বিকল্প কিছু রয়েছে বলেও দেখছিনা।
কথায় আছে, সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়। আওয়ামীলীগ সরকার যখন জামায়াতের উপর জুলুম-নির্যাতন শুরু করলো, বিএনপি তখন বসে বসে তামাসা দেখছিলো। এমনকি জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে একের পর এক ফাঁসির আদেশ দেয়ার পরেও বিএনপি এর বিরুদ্ধে মুখে খোলেনাই। এই সুযোগটিকে ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে আওয়ামীলীগ, চিরতরের বিএনপির বন্ধ মুখে সেলাই করে দিয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে।
এখন বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে বিদেশী দূতাবাসের দিকে। বিএনপির ধারণা, ইউরোপ আমেরিকা এসে বিএনপিকে চ্যাঙদোলা করে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে।

অনেকেই মনে করছেন সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকারের পতন হতে পারে। সে সম্ভাবনাকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া যায়না, তবে সেখানেও সমস্যা রয়ে গেছে। সাভারের জিওসি শেখ হাসিনার আত্মীয়, আর ঢাকার অধিকাংশ সিনিয়র সেনা অফিসার কট্টর চাটুকার আওয়ামী সমর্থক।
সেনা অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যার্থ হওয়ার ব্যাপারে সব চাইতে বড় হুমকি যেটা তা হচ্ছে
(পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী) বাংলাদেশে ‘র’ (RAW) এর হেড কোয়ার্টার এখন ক্যান্টনমেন্টের অভ্যান্তরেই। যে কোনো অভ্যুত্থান প্রচেস্টা ভারতের হস্তক্ষেপে ব্যার্থ হয়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী যদি স্বৈরাচারী হাসিনার সরকারকে উৎখাত করার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সেক্ষেত্রে দেখা যাবে সেনাবাহিনীর ভারত পোষ্য একটা অংশ সে প্রচেষ্টা রুখে দাড়াবে। সে দিক বিবেচনা করলে সেনা অভ্যুত্থানের আশা ছেড়ে দিতে হবে।

তবে এখানেও একটা ফাঁক কিন্তু থেকেই যায়, বাংলাদেশের ঘটে যাওয়া সামরিক অভ্যুত্থানগুলোর গতি-প্রকৃতি বিবেচনা করলে দেখা যায়, বিপদ কোন দিক থেকে আসবে সেটা আগে থেকে আঁচ করা সম্ভব নয়।
শেখ মুজিব ভেবেছিলেন, অভ্যুত্থান হলে সিনিয়র অফিসারদের পক্ষ হতে আসবে, তাই তিনি সিনিয়র অফিসারদের উপর নজরদারী চালিয়েছিলেন। কিন্তু ঘটে গেলো উল্টোটা, অভ্যুত্থান করে ফেললো জুনিয়র অফিসাররা। অভ্যুত্থানের ব্যাপারে সিনিয়ররা জানতে পারলো শেখ মুজিবের মৃত্যুর পরে। আবার খালেদ মোশররফ এর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান করলো বিক্ষুব্ধ সৈনিকরা, যেখানে অফিসারদের কোনো ভূমিকাই ছিলোনা। তাই সেনা অভ্যুত্থানের আশঙ্কা পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া যায়না।

সরকার পতনের আরেকটি সম্ভাব্য উপায় ইদানিং চোখে পড়ছে, তবে নিশ্চিত ভাবেই সেটাও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। ওয়ান-ইলেভেনের আগে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুশিল সমাজ নামে একটি শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছিলো। কি তাদের উদ্দেশ্য, দেশের সাধারণ মানুষ সেটা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র আন্দাজ করতে পারেনাই। জনগণ বুঝতে পারলো তখন, যখন মঈন উদ্দিন এবং ফখরুদ্দিনরা ক্ষমতা দখল করে নিলো।
ইদানিং আমরা দেখতে পাচ্ছি, মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা চৌষট্টি জেলা সফরে বের হয়েছেন। আপাত দৃষ্টিতে তার এই সফরকে নিরীহ মনে হলেও তার এই সফর নিয়ে আওয়ামীলীগ যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
অবশ্য আওয়ামীলীগের উদ্বিগ্ন হওয়ার পেছনে যথেষ্ট কারণও বিদ্যমান রয়েছে। আমেরিকা কি করবে বা কি করতে চাচ্ছে সেটা আগে থেকেই ধারণা করা সম্ভব নয়। তারা শিকার ধরার জন্য জাল ফেলার সময় কেউ বুঝতেও পারেনা যে জাল ফেলা হয়েছে। যখন জাল গুটিয়ে নিতে শুরু করে, তখন সেই জালে উঠে আসে বড় বড় সব রুই কাতলা।
ড্যান ডব্লিউ মজিনা তার নিজ দেশ থেকে ফিরে এসে, ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতদের সাথে বৈঠক পরবর্তীতে, চৌষট্টিটি জেলা সফরের নামে যে জাল ফেলছেন, তার পরিণতি কি হবে, সেটা নিয়ে আওয়ামীলীগের শঙ্কার যথেষ্ট কারণ বিদ্যমান।

পরিশেষে সরকার পতন যেভাবেই হোক, আজ হোক বা কাল হোক, অথবা পাঁচ বছর পরেই হোক, আওয়ামীলীগের পরিণতি হবে পঁচাত্তর পরবর্তী আওয়ামীলীগের মতো। দীর্ঘমেয়াদে তাদের ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে হবে। অতিরিক্ত ভারত তোষণ এবং জন অধিকার লঙ্ঘনের অপরাধে জনগণ ইতোমধ্যেই তাদের প্রত্যাক্ষান করেছে।

© শামীম রেজা
০৪/০৩/২০১৪

Post Comment

No comments:

Post a Comment