নামের আগে হজরত এবং নামের শেষে শাহ লাগিয়ে দিলেই হবে, মাঝখানে যাই থাকুক, আপনি একটি মাজারের মালিক!
চট্টগ্রামে একটি মাজার আছে নাম হজরত বদনা শাহ্’র মাজার। এ প্রসঙ্গে ফুরফুরার পীর সাহেব এক মাহফিলে বলেছিলেন, “এখন যেখানে যাই সেখানেই দেখি “শরীফ”। আজমীর শরীফ, ভান্ডার শরীফ, ওমুক শরীফ, তমুক শরীফ। শরীফে শরীফে এখন এমন অবস্থা হইছে যে, যদি বলি কই যান? জবাব দিবে, বদনা শরীফ নিয়ে, টয়লেট শরীফে যাচ্ছি!”
চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় মাজার বিষয়ক একটি প্রচলিত শব্দ হচ্ছে “মাজার গরম”। এখানে “মাজার গরম” বলতে সেসব মাজারকে বোঝানো হয়ছে যেসব মাজারের মরহুম বাবাকে টাকা-পয়সা এবং নাচ-গান করে সন্তুষ্ট করে, কিছু চাইলেই সহজে পাওয়া যায়। আর যদি মাজারের মরহুম পীর সাহেবের সাথে কোনোভাবে বেয়াদ্দবী হয়ে যায় তবে খবর আছে! বাবার অভিশাপে সব লন্ড-ভন্ড হয়ে যাবে।
মাজারে একটি ব্যাপার কাজ করে সেটা হচ্ছে মরহুম পীর সাহেবের কাছে নালিশ করা যায়, এবং বিচারের রায় নিজের পক্ষে নেয়ার জন্য ঘুশ দেয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে! একটি উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটি ক্লিয়ার হয়ে যাবে, ধরেন আপনার সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে, এখন আমি যদি চট্টগ্রামের মাজার ভক্ত কেউ হয়ে থাকি, তবে আপনাকে শায়েস্তা করার জন্য আমি যেটা করবো সেটা হচ্ছে, দুইটা মোমবাতি এবং কিছু আগর বাতি নিয়ে মরহুম পীর সাহেবের কবরের সামনে গিয়ে হাজির হবো। বাবাকে মোমবাতি এবং আগরবাতি ঘুশ দিয়ে বলবো, বাবা ওকে শায়েস্তা করে দেন।
আবার ধরেন, আপনার মেয়ের বিয়ে হচ্ছেনা, মাজারে গিয়ে কিছু মোমবাতি, আগরবাতি এবং মরহুম বাবার পায়ের কাছের দানবাক্সে কিছু টাকা দিয়ে আসবেন। এবার শুধু নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমাবেন, বাবা কবে আপনার ইচ্ছা পূরণ করে দেয়!
এই “মাজার গরম” নিয়ে দুটি ঘটনা’র উল্লেখ করছি। একবার মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী চট্টগ্রামে আসছিলেন, তাফসীরুল কোরআন মাহফিলে বক্তব্য রাখার জন্য। তার গাড়ি বহর যখন সীতাকুন্ডের “বার আউলিয়া” নামক মাজারের সামনের সড়ক অতিক্রম করছিলো, তখন সেই মাজারের একদল খাদেম তার গাড়ি আটকে দেয়। তাদের দাবি এই “মাজার গরম” মাজারের সামনে দিয়ে গাড়ি স্লো করে যেতে হবে। এখান দিয়ে যদি গাড়ি জোড়ে চলে তবে বাবার সাথে বেয়াদ্দবী করা হবে!
বার আউলিয়া’র মাজারের খাদেমদের সেই ফাইজলামি ছোট বেলায় আমিও দেখেছি, এখন অবশ্য তাদের দৌড়াত্ব অনেক কমে গেছে। গাড়ি স্লো করার আসল মুজিজা হচ্ছে, এই সড়ক দিয়ে যাত্রীবাহী গাড়ি যাবে, আর তার প্যাসেঞ্জাররা মাজারে টাকা ছুড়ে দিতে সুবিধা হবে!
আমরা অনেকেই সুফি মিজানের নাম শুনেছি, তিনি পিএইচপি গ্রুপের মালিক। চরম মাজার ভক্ত এই মানুষটি, হাতে তসবি এবং দাড়ি টুপি পরে নানা রকমের কু-কর্মের জন্য ব্যাপক সমালোচিত।
সেদিন শুনলাম, এই সুফি মিজান নাকি একটি মাজারের কবরে এসি ফিট করে দিয়েছেন। মাজারে এসি ফিট করার কারণ হচ্ছে “মাজার গরম”, মরহুম বাবাকে এসি’র হাওয়া খাইয়ে ঠান্ডা রাখা!
সিলেটে বেড়াতে গিয়েছিলাম, শাহজালাল (রঃ) এর মাজার দর্শন শেষে গেলাম শাহপরান (রঃ) এর মাজার দর্শন করতে। কিছু লোক দেখলাম কবরের উপর ছিটানো গোলাপ জল হাত দিয়ে মুছে, মাথায় এবং মুখে মাখছে, অশেষ বরকতময় বাবার মাজারের এই গোলাপজল, আপনার মনের সকল আশা পূরণ করে দিবে! একলোক দেখি, কবরের খুটির সাথে মাথা ঠুকে ঠুকে চেঁচাতে চেঁচাতে বলছে, “বাবা দে, বাবা দে, তুই না দিলে কে দিবো?!”
সেদিন পত্রিকায় দেখলাম ভারতের আজমীর শরীফে হিন্দী সিনেমার নায়ক নায়িকারা দোয়া নিতে যায়। কেউ কেউ আবার অশ্লীল নাচ-গানের সিডি বাবার কবরের পাশে রেখে আসে। মনে সুপ্ত আকাঙ্খা, বাবার দোয়ায় ক্যাটরিনা-ঐশ্বরিয়াদের কোমড়ের ভাজ দর্শক হৃদয়ে আলোড়ন তুলবেই!
বাংলাদেশে সম্ভবত সবচাইতে বেশি মাজারের সংখ্য চট্টগ্রামে, এই জেলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য মাজার। চট্টগ্রামের নাজিরহাটে বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ফজরের নামাজের পরে বন্ধুর পিচ্চি ভাইকে নিয়ে এলাকা ঘুরতে বের হলাম। এক যায়গায় দেখি পাশাপাশি পাঁচটি কবর এবং একটা কবরের সাথে আরেকটা কবরের দূরত্ব অনেক কম, একেবারে গায়ে গা লাগানো অবস্থা।
কিছুটা কৌতুহল নিয়েই ছোট ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম, এগুলা কার কবর?
ছোট ভাই জবাব দিলো, এগুলা কবর না। এইটা হচ্ছে মাজার, পাঁচ পীরের আস্তানা।
অবাক হয়েই জানতে চাইলাম, কবর না হলে কবরের মতো আকৃতি কেনো? আর পাঁচ পীরের আস্তানা নামইবা কেনো?
ছোট ভাই জবাব দিলো, আমার নানা স্বপ্নে দেখেছে, এখানে পাঁচজন পীর বসে আছে। তাই এখানে পাঁচজন পীরের কবর বানিয়ে মাজার তৈরী করা হয়েছ। এখন প্রতিবছর এখনে ওরস করা হয়।
সৌভাগ্যক্রমে নাকি দূর্ভাগ্যক্রমে জানিনা, সেদিনই ছিলো ওরসের দিন। মাইকে ব্যাপক গান-বাজনা এবং ভক্তদের দেয়া মহিষ জবাই করে ওরস উদযাপন করা হলো।
চট্টগ্রামের কয়েকটি মাজারের নাম এবং তার কেরামতি উল্লেখ করছি।
বদনা শাহ’র মাজারঃ মাজারের গেটের দুইপাশে দুইটা মদনা ঝুলানো আছে। উপরে লেখা, হজরত বদনা শাহ (রঃ) এর মাজার।
মিসকিন শাহঃ এই “শাহ” সম্ভবত মিসকিন ছিলেন, বাংলা সিনেমাতে যেমন আকাশ স্বাক্ষী, বাতাস স্বাক্ষী করে নায়ক-নায়ীকারা বিয়ে করে। ঠিক তেমনি করেই, অনেক প্রেমিক প্রেমিকা এখানে এসে বাবার কবর স্বাক্ষী করে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে। কাগজপত্র এবং কলেমার প্রয়োজন হয়না।
গরম বিবির মাজারঃ এই বিবি কেমনে গরম হইছে সেটা আমি জানিনা, তবে সম্ভবত স্বামী প্রতিদিন তার হাতে ধোলাই খাইতো। এই মাজার নাকি খুবই গরম, আপনার শত্রু যদি মাজারে মোমবাতি দিয়ে আপনাকে অভিশাপ দেয়, তবে আপনি শ্যাষ!
ডাইল-চাইল শাহ’র মাজারঃ চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে আছে হজরত ডাইল-চাইল শাহ’র মাজার। মিসকিন শাহ যদি ডাইল-চাইল শাহ’র সাথে খাতির করতে পারতেন, তবে তিনি সম্ভবত আর মিসকিন থাকতেননা।
ল্যাংটা বাবার মাজারঃ আমার এক বন্ধু একবার গিয়েছিলো ল্যাংটা বাবার মাজার দেখতে। বিশ টাকা টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকে দেখে, ময়লা শরীরের এক পাগল বসে আছে, বাস্তবিক অর্থেই নামের দিক থেকে তিনি সঠিক ছিলেন। বন্ধুটি হাসতে হাসতে বলছিলো, গিয়েছিলাম বাবার দোয়া নিতে, কিন্তু এইটা আমি কি দেখলাম!!
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একবার প্যারেড ময়দানের তাফসির মাহফিলে বলছিলেন। “সতর ঢাকা ফরজ। ল্যাংটা বাবা তাইলে বাবা হইলো কেমনে?!”
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো, হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে ভেদাভেদ নিরসন করা। মাজার ভক্তরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পুরণ করার ক্ষেত্রে একশত পার্সেন্ট সফল হয়েছে। আজ দরগা ও দুর্গার মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। “তোমাদের যা দূর্গা, আমাদের তা দরগা!”
আসুন মাজার পূজারীদেরকে বঙ্গবন্ধু পদক প্রদান করে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠন করি।
লেখাঃ মাজার নিয়ে মজারু
© শামীম রেজা
০৫/০৩/২০১৪
চট্টগ্রামে একটি মাজার আছে নাম হজরত বদনা শাহ্’র মাজার। এ প্রসঙ্গে ফুরফুরার পীর সাহেব এক মাহফিলে বলেছিলেন, “এখন যেখানে যাই সেখানেই দেখি “শরীফ”। আজমীর শরীফ, ভান্ডার শরীফ, ওমুক শরীফ, তমুক শরীফ। শরীফে শরীফে এখন এমন অবস্থা হইছে যে, যদি বলি কই যান? জবাব দিবে, বদনা শরীফ নিয়ে, টয়লেট শরীফে যাচ্ছি!”
চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় মাজার বিষয়ক একটি প্রচলিত শব্দ হচ্ছে “মাজার গরম”। এখানে “মাজার গরম” বলতে সেসব মাজারকে বোঝানো হয়ছে যেসব মাজারের মরহুম বাবাকে টাকা-পয়সা এবং নাচ-গান করে সন্তুষ্ট করে, কিছু চাইলেই সহজে পাওয়া যায়। আর যদি মাজারের মরহুম পীর সাহেবের সাথে কোনোভাবে বেয়াদ্দবী হয়ে যায় তবে খবর আছে! বাবার অভিশাপে সব লন্ড-ভন্ড হয়ে যাবে।
মাজারে একটি ব্যাপার কাজ করে সেটা হচ্ছে মরহুম পীর সাহেবের কাছে নালিশ করা যায়, এবং বিচারের রায় নিজের পক্ষে নেয়ার জন্য ঘুশ দেয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে! একটি উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটি ক্লিয়ার হয়ে যাবে, ধরেন আপনার সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে, এখন আমি যদি চট্টগ্রামের মাজার ভক্ত কেউ হয়ে থাকি, তবে আপনাকে শায়েস্তা করার জন্য আমি যেটা করবো সেটা হচ্ছে, দুইটা মোমবাতি এবং কিছু আগর বাতি নিয়ে মরহুম পীর সাহেবের কবরের সামনে গিয়ে হাজির হবো। বাবাকে মোমবাতি এবং আগরবাতি ঘুশ দিয়ে বলবো, বাবা ওকে শায়েস্তা করে দেন।
আবার ধরেন, আপনার মেয়ের বিয়ে হচ্ছেনা, মাজারে গিয়ে কিছু মোমবাতি, আগরবাতি এবং মরহুম বাবার পায়ের কাছের দানবাক্সে কিছু টাকা দিয়ে আসবেন। এবার শুধু নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমাবেন, বাবা কবে আপনার ইচ্ছা পূরণ করে দেয়!
এই “মাজার গরম” নিয়ে দুটি ঘটনা’র উল্লেখ করছি। একবার মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী চট্টগ্রামে আসছিলেন, তাফসীরুল কোরআন মাহফিলে বক্তব্য রাখার জন্য। তার গাড়ি বহর যখন সীতাকুন্ডের “বার আউলিয়া” নামক মাজারের সামনের সড়ক অতিক্রম করছিলো, তখন সেই মাজারের একদল খাদেম তার গাড়ি আটকে দেয়। তাদের দাবি এই “মাজার গরম” মাজারের সামনে দিয়ে গাড়ি স্লো করে যেতে হবে। এখান দিয়ে যদি গাড়ি জোড়ে চলে তবে বাবার সাথে বেয়াদ্দবী করা হবে!
বার আউলিয়া’র মাজারের খাদেমদের সেই ফাইজলামি ছোট বেলায় আমিও দেখেছি, এখন অবশ্য তাদের দৌড়াত্ব অনেক কমে গেছে। গাড়ি স্লো করার আসল মুজিজা হচ্ছে, এই সড়ক দিয়ে যাত্রীবাহী গাড়ি যাবে, আর তার প্যাসেঞ্জাররা মাজারে টাকা ছুড়ে দিতে সুবিধা হবে!
আমরা অনেকেই সুফি মিজানের নাম শুনেছি, তিনি পিএইচপি গ্রুপের মালিক। চরম মাজার ভক্ত এই মানুষটি, হাতে তসবি এবং দাড়ি টুপি পরে নানা রকমের কু-কর্মের জন্য ব্যাপক সমালোচিত।
সেদিন শুনলাম, এই সুফি মিজান নাকি একটি মাজারের কবরে এসি ফিট করে দিয়েছেন। মাজারে এসি ফিট করার কারণ হচ্ছে “মাজার গরম”, মরহুম বাবাকে এসি’র হাওয়া খাইয়ে ঠান্ডা রাখা!
সিলেটে বেড়াতে গিয়েছিলাম, শাহজালাল (রঃ) এর মাজার দর্শন শেষে গেলাম শাহপরান (রঃ) এর মাজার দর্শন করতে। কিছু লোক দেখলাম কবরের উপর ছিটানো গোলাপ জল হাত দিয়ে মুছে, মাথায় এবং মুখে মাখছে, অশেষ বরকতময় বাবার মাজারের এই গোলাপজল, আপনার মনের সকল আশা পূরণ করে দিবে! একলোক দেখি, কবরের খুটির সাথে মাথা ঠুকে ঠুকে চেঁচাতে চেঁচাতে বলছে, “বাবা দে, বাবা দে, তুই না দিলে কে দিবো?!”
সেদিন পত্রিকায় দেখলাম ভারতের আজমীর শরীফে হিন্দী সিনেমার নায়ক নায়িকারা দোয়া নিতে যায়। কেউ কেউ আবার অশ্লীল নাচ-গানের সিডি বাবার কবরের পাশে রেখে আসে। মনে সুপ্ত আকাঙ্খা, বাবার দোয়ায় ক্যাটরিনা-ঐশ্বরিয়াদের কোমড়ের ভাজ দর্শক হৃদয়ে আলোড়ন তুলবেই!
বাংলাদেশে সম্ভবত সবচাইতে বেশি মাজারের সংখ্য চট্টগ্রামে, এই জেলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য মাজার। চট্টগ্রামের নাজিরহাটে বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ফজরের নামাজের পরে বন্ধুর পিচ্চি ভাইকে নিয়ে এলাকা ঘুরতে বের হলাম। এক যায়গায় দেখি পাশাপাশি পাঁচটি কবর এবং একটা কবরের সাথে আরেকটা কবরের দূরত্ব অনেক কম, একেবারে গায়ে গা লাগানো অবস্থা।
কিছুটা কৌতুহল নিয়েই ছোট ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম, এগুলা কার কবর?
ছোট ভাই জবাব দিলো, এগুলা কবর না। এইটা হচ্ছে মাজার, পাঁচ পীরের আস্তানা।
অবাক হয়েই জানতে চাইলাম, কবর না হলে কবরের মতো আকৃতি কেনো? আর পাঁচ পীরের আস্তানা নামইবা কেনো?
ছোট ভাই জবাব দিলো, আমার নানা স্বপ্নে দেখেছে, এখানে পাঁচজন পীর বসে আছে। তাই এখানে পাঁচজন পীরের কবর বানিয়ে মাজার তৈরী করা হয়েছ। এখন প্রতিবছর এখনে ওরস করা হয়।
সৌভাগ্যক্রমে নাকি দূর্ভাগ্যক্রমে জানিনা, সেদিনই ছিলো ওরসের দিন। মাইকে ব্যাপক গান-বাজনা এবং ভক্তদের দেয়া মহিষ জবাই করে ওরস উদযাপন করা হলো।
চট্টগ্রামের কয়েকটি মাজারের নাম এবং তার কেরামতি উল্লেখ করছি।
বদনা শাহ’র মাজারঃ মাজারের গেটের দুইপাশে দুইটা মদনা ঝুলানো আছে। উপরে লেখা, হজরত বদনা শাহ (রঃ) এর মাজার।
মিসকিন শাহঃ এই “শাহ” সম্ভবত মিসকিন ছিলেন, বাংলা সিনেমাতে যেমন আকাশ স্বাক্ষী, বাতাস স্বাক্ষী করে নায়ক-নায়ীকারা বিয়ে করে। ঠিক তেমনি করেই, অনেক প্রেমিক প্রেমিকা এখানে এসে বাবার কবর স্বাক্ষী করে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে। কাগজপত্র এবং কলেমার প্রয়োজন হয়না।
গরম বিবির মাজারঃ এই বিবি কেমনে গরম হইছে সেটা আমি জানিনা, তবে সম্ভবত স্বামী প্রতিদিন তার হাতে ধোলাই খাইতো। এই মাজার নাকি খুবই গরম, আপনার শত্রু যদি মাজারে মোমবাতি দিয়ে আপনাকে অভিশাপ দেয়, তবে আপনি শ্যাষ!
ডাইল-চাইল শাহ’র মাজারঃ চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে আছে হজরত ডাইল-চাইল শাহ’র মাজার। মিসকিন শাহ যদি ডাইল-চাইল শাহ’র সাথে খাতির করতে পারতেন, তবে তিনি সম্ভবত আর মিসকিন থাকতেননা।
ল্যাংটা বাবার মাজারঃ আমার এক বন্ধু একবার গিয়েছিলো ল্যাংটা বাবার মাজার দেখতে। বিশ টাকা টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকে দেখে, ময়লা শরীরের এক পাগল বসে আছে, বাস্তবিক অর্থেই নামের দিক থেকে তিনি সঠিক ছিলেন। বন্ধুটি হাসতে হাসতে বলছিলো, গিয়েছিলাম বাবার দোয়া নিতে, কিন্তু এইটা আমি কি দেখলাম!!
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একবার প্যারেড ময়দানের তাফসির মাহফিলে বলছিলেন। “সতর ঢাকা ফরজ। ল্যাংটা বাবা তাইলে বাবা হইলো কেমনে?!”
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো, হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে ভেদাভেদ নিরসন করা। মাজার ভক্তরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পুরণ করার ক্ষেত্রে একশত পার্সেন্ট সফল হয়েছে। আজ দরগা ও দুর্গার মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। “তোমাদের যা দূর্গা, আমাদের তা দরগা!”
আসুন মাজার পূজারীদেরকে বঙ্গবন্ধু পদক প্রদান করে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠন করি।
লেখাঃ মাজার নিয়ে মজারু
© শামীম রেজা
০৫/০৩/২০১৪
No comments:
Post a Comment