তোমার জন্য মরতে পারি

“তোমার জন্য মরতে পারি, ও সুন্দরী, তুমি গলার মালা”! শেষ পর্যন্ত ছেলেটি তলিয়ে গেলো হাতির ঝিলের পানির নিচে, আর মেয়েটি ঝুলে রইলো ব্রিজের রেলিং-এ।
সুন্দরী কিন্তু মরে নাই, ঠিকই দুইদিন পরে আরেকজনকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার করে যাবে।
কেনো ভাই, তুই মরতে গেলি? হাতির ঝিঁলের চাইতে কি বাসার পাশের ওই কাজী অফিসটা কাছে ছিলোনা? জীবন দেয়ার চাইতে বিয়ে করা কি সহজ ছিলোনা?।

বন্ধুর বন্ধু রাহাত, তুমুল প্রেম ছিলো সোনিয়ার সাথে, যাকে বলে গলায় গলায় প্রেম। আধুনিক প্রেমে যা হবার তাই হলো, সব কিছু লুটে নেয়ার পরে সোনিয়াকে এভোয়েড করা শুরু করলো রাহাত।
ছ্যাকা খাওয়া সোনিয়া এখন এর হাত ধরে, ওর হাত ধরে, কান্নাকাটি করে। আর রাহাত? বন্ধু মহলে বলে বেড়ায়, “আরে ধুর বাদ দে, আমি ওকে পাত্তাই দেইনা, ওইতো এতোদিন আমার পেছনে ঘুড় ঘুড় করছে! আমার পেছনে কত্ত মেয়ে ঘুড়ে!”

নিশাতের সাথে রায়হানের দারুণ প্রেম, নিশাতই হচ্ছে রায়হানের জানু। প্রেমে ব্যার্থ হয়ে একদিন জানুর জানটা বের করে দিলো রায়হান। কুপিয়ে হত্যা করলো, নিশাত এবং তার মাকে।
নিশাতের অপরাধ, রায়হানকে বাদ দিয়ে নিশাত নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছে! তাই এক কোপ, দুই কোপ, তিন কোপ, এভাবে ছয়টি কোপ। রায়হানের ভালোবাসা হচ্ছে ধারালো ছুড়ির ছয়টি কোপ, যেটা সে নিশাতকে দিয়ে এসেছে!
একটা মেয়ে বিয়ের পূর্বেই প্রেমিককে ফাঁকি দিয়ে নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছে, এর মানে হচ্ছে সেই মেয়েটির চারিত্রিক প্রব্লেম আছে।
এই মেয়েকে যদি বিয়ে করতো নিঃসন্দেহে বৈবাহিক জীবনে রায়হান অসুখী হতো। রায়হানেরতো খুশি হওয়া উচিৎ ছিলো যে, ঝামেলা মিটে গেছে, একটা বাজে মেয়ের হাত হতে আল্লাহ তাকে মুক্ত করেছেন।
কিন্তু রায়হান এটা কি করলো? আমরা কোন সমাজে বসবাস করছি? এই সমাজে ধারালো দায়ের কোপ দিয়ে নিজের ভালোবাসার গভীরতা প্রকাশ করা হয়! দায়ের কোপ যত গভীর হবে, ভালোবাসা ততটা গভীর!

হাইস্কুলের গন্ডি পেরোনোর পূর্বেই এখনকার বাচ্চারা মোবাইলে গুজুর গুজুর, ফুসুর ফাসুর শুরু করে দেয়। পার্কের চিপায় চাপায় ভালোবাসার প্রাসাদ নির্মান করে, বিশাল বিশাল সেই প্রাসাদ, আট তলা, দশ তলা, বারো তলা এভাবে বাড়তেই থাকে। তার পর একদিন ছেলের বাবা কিংবা মেয়ের বাবা যখন ছেলে-মেয়েকে ঘরে নিয়ে কানের দুই আঙুল নিচে কষে একটা চটকানা লাগিয়ে দেয়, তখন সেই ভালোবাসার প্রাসাদ ফাটা বেলুনের মতো চুপসে যায়।

টিভি মিডিয়ার কল্যানে আমাদের অনুভূতিগুলো ভোঁতা হয়ে গেছে। পরিণতি চিন্তা না করেই আমরা সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছি। সিনেমার গল্পের মতোই নায়ক নায়িকার সাথে ধাক্কা খেলো আর শুরু হয়ে গেলো গান, প্রেম হয়ে গেলো। অতঃপর ভিলেন হিসেবে নায়ক-নায়িকার বাবাদের আগমন এবং একটি দূর্ঘটনা। লোকাল বাসের পেছনে লেখা থাকে, "একটি দূর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না"

জাফর ইকবাল সাহেবদের থিওরী এপ্লাই করে আমরা যদি নাচতে ইচ্ছে হলে নাচি, গাইতে ইচ্ছে হলে গাই, এবং প্রেম করতে ইচ্ছে হলে প্রেম করি। তবে একসময় দেখা যাবে এভাবে মাঝে মধ্যে মরতে ইচ্ছে হলে, আমরা হাতির ঝিলে ঝাপ দিবো! আবার মারতে ইচ্ছে হলে, দায়ের কোপে প্রেমিকার প্রতি ভালোবাসার গভীরতা প্রকাশ করে আসবো।

আমাদের বোধহয় সচেতন হওয়ার সময় এসেছে, নয়তো আজ, আগামীকাল অথবা পরশু দিন, এই ইচ্ছে মাফিক কাজের খেসারত দিতে হবে, আপনার, আমার, সবার। বাল্য বিবাহ কিংবা অধিক বয়সে বিবাহ নয়, উপযুক্ত বয়সেই সন্তানের বিয়ে দিয়ে সমাজের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। সন্তানকে ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে মনুষত্ববোধ জাগ্রত করার দায়িত্ব আমাদেরই।

লেখাঃ তোমার জন্য মরতে পারি
© শামীম রেজা
২৯/০৩/২০১৪

Post Comment

No comments:

Post a Comment