কয়েকদিন
আগে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা গিয়েছিলাম। মাগরিবের সময় হলো, শাহী জামে
মসজিদে ঢুকতে ঢুকতে জামায়াত রুকুতে চলে গিয়েছে, জুতার বাক্সে জুতাটা ছুড়ে
দিয়ে কোনো ক্রমে রুকু ধরলাম।
নামাজ শেষ, আমার জুতাও শেষ!! চোরে নিয়ে গেছে, শুধু আমারটাইনা, আরো বেশ কয়েকজনের জুতা গায়েব।
পকেটে খুব একটা টাকা ছিলোনা, সব মিলিয়ে হাজার খানেক। দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে খালি পায়েই ভবঘুরের মতো নিউ মার্কেটের পথে হাটা শুরু করলাম। অন্য রকম এক ফিলিংস, এই পথ ধরে খালি পায়ে কখনো হাটা হয়নাই। শির শিরে বাতাস এসে খোলা পায়ে পরশ বুলিয়ে দিচ্ছিলো, ঠান্ডা ঠান্ডা একটা অনুভূতি। খালি পায়ে নগর ভ্রমন ভালোই লাগছিলো, পায়ের নিচে পিচ ঢালা রাজপথ, নুড়ি পাথর, বালু, মানুষের অদ্ভুত চাহনী, সব মিলিয়ে আমি অন্য মানুষ।
আমতলা মোড়ে চোরাই জুতার পশরা সাজিয়ে সাড়ি সাড়ি বসে আছে শ'খানেক জুতা ব্যবসায়ী, দেশী বিদেশী নানান রকম জুতা। সদ্য মসজিদ হতে চুরি করে আনা নতুন জুতাও দেখা যাচ্ছে। মানুষ দলে দলে জুতো কিনছে, ৫হাজার টাকার জুতো ৫শত টাকা দিয়েই পাওয়া যাচ্ছে, মানুষ কিনবেনা কেনো?
একটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো, বাংলাদেশের একটি ইসলামী সংগঠনের দুই কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল গিয়েছিলেন ভারত সফরে, সম্ভবত ভারতের কোনো ইসলামী সংগঠনের দাওয়াতে কোনো কনফারেন্স যোগ দিতে। নামাজের সময় হলো, রাস্তার ধারেই এক মসজিদে ঢুকলেন নামাজ আদায় করতে।
আমাদের বাংলাদেশীদের অভ্যেস মতোই তারা মসজিদের দরজার সামনে জুতো খুলে, জুতো হাতে নিয়ে মসজিদে ঢুকলেন। এই দৃশ্য দেখেই মুসল্লিরা ছুটে এলো, কেউ কেউতো মারমুখি ভঙ্গিতে হম্বি-তম্বি শুরু করলো। ব্যাটা বেয়াদ্দব মসজিদ অবমাননা করে, কতবড় সাহস মসজিদে জুতা ঢুকিয়েছে! হতভম্ব দায়িত্বশীল দ্বয় ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলেন, পরে উত্তেজিত মুসল্লিদের কোনো রকমে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিবৃত করলেন যে, আসলে বাংলাদেশে মসজিদে জুতো চুরি হয়, তাই জুতো চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে তারা জুতো হাতে মসজিদে প্রবেশ করে।
কাহিনী শুনেতো তারা অবাক! মুসল্লিদের জুতা চুরি করে, এমন খারাপ মানুষ দুনিয়াতে আছে?!! দায়িত্বশীল দ্বয়ও কম অবাক হননাই, ভারতের মতো হিন্দু প্রধান দেশে মুসলমানরা মসজিদে জুতো চুরির আশংকা করেনা, অথচ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশের মানুষ চোরের ভয়ে, মসজিদের ভেতর নাপাক জুতো সামনে রেখে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা প্রদান করে!
যাই হোক যে কথা বলছিলাম, চট্টগ্রামের আমতলা মোড় কিংবা ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সস্তা দামে যে জুতো বিক্রয় করা হয়, সেগুলো কোথা হতে আসে? এই বিপুল সংখ্যক জুতোর অধিকাংশই আসে মসজিদের মুসল্লিদের কাছ থেকে চোরের মাধ্যমে।
আপনি আমি যদি সস্তায় পেয়ে সেই চোরাই জুতো কিনি তাহলে প্রকারান্তরে আপনি-আমিও মসজিদের জুতো চুরি করলাম।
আপনি যদি চোরাই জুতো না কেনেন, তবে চোরেরা জুতো চুরি করবে কেনো? আপনি কিনছেন বলেই তারা চুরি করছে। এবং আপনি সেই চুরিতে শরীক হচ্ছেন।
এইযে মসজিদে জুতো চুরি হচ্ছে এর পরিণতি কি, এটা কি শুধুই জুতো চুরি, নাকি অন্য কিছু? আজকে যে লোকটির ৫হাজার টাকা দামের জুতো মসজিদ হতে চুরি হয়ে গেলো, কালকে সেই ব্যাক্তি নতুন জুতো নিয়ে মসজিদে যেতে ১০বার চিন্তা করবে। সবাইতো আর আপনার মতো ঈমানদার ব্যাক্তিনা, জুতো চুরির ভয়ে অনেক মুসল্লিই টাইম মতো জামায়াতে নামাজ আদায় করেনা।
সর্বেশেষ যে প্রশ্নটি করেই লেখাটি শেষ করবো সেটা হচ্ছে, আপনার বিবেকের কাছেই প্রশ্ন করুন, আপনি কি চকচকে বিদেশী জুতো দেখে, মসজিদের চোরাই জুতো ক্রয় করেছেন?
তাহলে আপনি একটা জুতা চোর! হ্যা, আপনি মুসল্লিদের জুতো চোর!
লেখাঃ আপনি জুতো চোর
(c) শামীম রেজা
১০/০৩/২০১৪
নামাজ শেষ, আমার জুতাও শেষ!! চোরে নিয়ে গেছে, শুধু আমারটাইনা, আরো বেশ কয়েকজনের জুতা গায়েব।
পকেটে খুব একটা টাকা ছিলোনা, সব মিলিয়ে হাজার খানেক। দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে খালি পায়েই ভবঘুরের মতো নিউ মার্কেটের পথে হাটা শুরু করলাম। অন্য রকম এক ফিলিংস, এই পথ ধরে খালি পায়ে কখনো হাটা হয়নাই। শির শিরে বাতাস এসে খোলা পায়ে পরশ বুলিয়ে দিচ্ছিলো, ঠান্ডা ঠান্ডা একটা অনুভূতি। খালি পায়ে নগর ভ্রমন ভালোই লাগছিলো, পায়ের নিচে পিচ ঢালা রাজপথ, নুড়ি পাথর, বালু, মানুষের অদ্ভুত চাহনী, সব মিলিয়ে আমি অন্য মানুষ।
আমতলা মোড়ে চোরাই জুতার পশরা সাজিয়ে সাড়ি সাড়ি বসে আছে শ'খানেক জুতা ব্যবসায়ী, দেশী বিদেশী নানান রকম জুতা। সদ্য মসজিদ হতে চুরি করে আনা নতুন জুতাও দেখা যাচ্ছে। মানুষ দলে দলে জুতো কিনছে, ৫হাজার টাকার জুতো ৫শত টাকা দিয়েই পাওয়া যাচ্ছে, মানুষ কিনবেনা কেনো?
একটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো, বাংলাদেশের একটি ইসলামী সংগঠনের দুই কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল গিয়েছিলেন ভারত সফরে, সম্ভবত ভারতের কোনো ইসলামী সংগঠনের দাওয়াতে কোনো কনফারেন্স যোগ দিতে। নামাজের সময় হলো, রাস্তার ধারেই এক মসজিদে ঢুকলেন নামাজ আদায় করতে।
আমাদের বাংলাদেশীদের অভ্যেস মতোই তারা মসজিদের দরজার সামনে জুতো খুলে, জুতো হাতে নিয়ে মসজিদে ঢুকলেন। এই দৃশ্য দেখেই মুসল্লিরা ছুটে এলো, কেউ কেউতো মারমুখি ভঙ্গিতে হম্বি-তম্বি শুরু করলো। ব্যাটা বেয়াদ্দব মসজিদ অবমাননা করে, কতবড় সাহস মসজিদে জুতা ঢুকিয়েছে! হতভম্ব দায়িত্বশীল দ্বয় ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলেন, পরে উত্তেজিত মুসল্লিদের কোনো রকমে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিবৃত করলেন যে, আসলে বাংলাদেশে মসজিদে জুতো চুরি হয়, তাই জুতো চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে তারা জুতো হাতে মসজিদে প্রবেশ করে।
কাহিনী শুনেতো তারা অবাক! মুসল্লিদের জুতা চুরি করে, এমন খারাপ মানুষ দুনিয়াতে আছে?!! দায়িত্বশীল দ্বয়ও কম অবাক হননাই, ভারতের মতো হিন্দু প্রধান দেশে মুসলমানরা মসজিদে জুতো চুরির আশংকা করেনা, অথচ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশের মানুষ চোরের ভয়ে, মসজিদের ভেতর নাপাক জুতো সামনে রেখে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা প্রদান করে!
যাই হোক যে কথা বলছিলাম, চট্টগ্রামের আমতলা মোড় কিংবা ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সস্তা দামে যে জুতো বিক্রয় করা হয়, সেগুলো কোথা হতে আসে? এই বিপুল সংখ্যক জুতোর অধিকাংশই আসে মসজিদের মুসল্লিদের কাছ থেকে চোরের মাধ্যমে।
আপনি আমি যদি সস্তায় পেয়ে সেই চোরাই জুতো কিনি তাহলে প্রকারান্তরে আপনি-আমিও মসজিদের জুতো চুরি করলাম।
আপনি যদি চোরাই জুতো না কেনেন, তবে চোরেরা জুতো চুরি করবে কেনো? আপনি কিনছেন বলেই তারা চুরি করছে। এবং আপনি সেই চুরিতে শরীক হচ্ছেন।
এইযে মসজিদে জুতো চুরি হচ্ছে এর পরিণতি কি, এটা কি শুধুই জুতো চুরি, নাকি অন্য কিছু? আজকে যে লোকটির ৫হাজার টাকা দামের জুতো মসজিদ হতে চুরি হয়ে গেলো, কালকে সেই ব্যাক্তি নতুন জুতো নিয়ে মসজিদে যেতে ১০বার চিন্তা করবে। সবাইতো আর আপনার মতো ঈমানদার ব্যাক্তিনা, জুতো চুরির ভয়ে অনেক মুসল্লিই টাইম মতো জামায়াতে নামাজ আদায় করেনা।
সর্বেশেষ যে প্রশ্নটি করেই লেখাটি শেষ করবো সেটা হচ্ছে, আপনার বিবেকের কাছেই প্রশ্ন করুন, আপনি কি চকচকে বিদেশী জুতো দেখে, মসজিদের চোরাই জুতো ক্রয় করেছেন?
তাহলে আপনি একটা জুতা চোর! হ্যা, আপনি মুসল্লিদের জুতো চোর!
লেখাঃ আপনি জুতো চোর
(c) শামীম রেজা
১০/০৩/২০১৪
No comments:
Post a Comment