মুজিব বনাম হাসিনা।

শেখ মুজিবের শাসনামলের ঘটনা, টঙ্গীতে মেজর নাসের তিন ব্যক্তিকে আটক করেন। আটক এই তিন ব্যক্তি ছিলো, আওয়ামীলীগ নেতা মোজাম্মেল ও তার দুই সহযোগী, এদের অপরাধ ছিলো জঘন্য। এক নব বিবাহিত দম্পত্তির গাড়িতে হামলা করে স্বামী এবং গাড়ির ড্রাইভারকে হত্যা করে, মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যায় মোজাম্মেল ও তার বাহিনী। তিনদিন পরে ধর্ষিতা মেয়েটির লাশ পাওয়া যায় একটি ব্রিজের পাশে।

মোজাম্মেল তার মুক্তির জন্য তিনলক্ষ টাকা ঘুশ অফার করে। দম্ভ করেই মোজাম্মেল বলছিলো, আজ হোক কাল হোক আমাকে ছেড়ে দিতেই হবে, শুধু শুধু ঝামেলা না করে টাকাটা নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেন।
মোজাম্মেলের কথা শুনে ক্ষিপ্ত মেজর নাসের তাকে আদালতে সোপর্দ করে। নাসেরের ইচ্ছে ছিলো, এই নৃশংস ঘটনার জন্য ওই ব্যাক্তিকে ফাঁসিতে ঝোলানো। কিন্তু শেখ মুজিবের নির্মম পরিহাস! কিছুদিনের মধ্যেই মোজাম্মেল মুক্তি অবস্থায় গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরা ফেরা করতে লাগলো।

১৯৭৪ সালের জুলাই মাস, সন্ত্রাস বিরোধী এক বিশেষ অভিযানে মেজর ফারুক এক ডাকাত সর্দারকে গ্রেপ্তার করে। এই ডাকাত সর্দার নিজ হাতে একুশ জন মানুষকে হত্যা করেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে সেই ডাকাত সর্দার বলে, যাই করেছি ওস্তাদের নির্দেশে করেছি। তার ওস্তাদের কথা জানতে চাইলে, ডাকাত সর্দার জানিয়ে দেয়, তার ওস্তাদ হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমান!

২০০০সালের ১৮সেপ্টেম্বর, লক্ষিপুরের বিএনপি নেতা এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামকে তার বাড়ি হতে অপহরণ করে নিয়ে যায় আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসী কুখ্যাত তাহের বাহিনীর প্রধান আবু তাহেরের ছেলে বিপ্লব। এই তাহের বাহিনী লক্ষিপুরের অধিবাসীদের নিকট মূর্তিমান আতঙ্ক।
এক জনসভায় তাহের বাহিনীর প্রধান আবু তাহের দম্ভ করেই উচ্চারণ করেছিলো, "আমার বিরুদ্ধে যে সাংবাদিক কলম ধরে, আমি সেই সাংবাদিকের হাত-পা কেটে নেই!"
বিপ্লব তার বাহিনী নিয়ে নুরুল ইসলামকে অপহরণ করার পরেই পুলিশ তাকে উদ্ধারে নানা মুখী অভিযান পরিচালিত করে। অবশেষে তাহের বাহিনীর প্রধান আবু তাহের পুলিশকে আশ্বস্ত করে, এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামকে মুক্তি দেয়া হবে।
শেষ পর্যন্ত আবু তাহের এবং তার ছেলে বিপ্লব কথা রাখে নাই। জনাব নুরুল ইসলামকে হত্যা করে তার লাশ টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়।
জনাব নূরুল ইসলামের স্ত্রী আক্ষেপ করে বলছিলেন, “আমার স্বামীকে হত্যা করার পর বিপ্লবরা তার লাশটি পর্যন্ত ফেরত দেয়নি। টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিল”।

অপরাধ সন্দেহাতীত ভাবে প্রামানীত হওয়ায় বিপ্লবের ফাঁসির রায় দেয়া হয়। কিন্তু শেখ হাসিনার কি নির্মম পরিহাস! এক ঘোশণার মাধ্যমে পুতুল রাষ্ট্রপতি বিপ্লবকে ক্ষমা করে দিলেন।
সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আওয়ামীলীগের এই শাসনামলে রাষ্ট্রপতি ৩০জন খুনিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন!

আমার এলাকার একটি ঘটনা উল্লেখ করেই লেখাটি শেষ করবো। তখন আমি ছাত্রশিবিরের একটি সাংগঠনিক ইউনিট সভাপতি, নতুন এলাকায় দায়িত্ব নিয়ে যে মানুষটির আন্তরিক সহযোগীতায় আমি মুগ্ধ, তিনি হচ্ছেন জাহিদ ভাই। এমন কোনো দিন নাই, তার সাথে দেখা হয়েছে আর তিনি থেমে দাড়িয়ে আমার খোঁজ নেন নাই। সদা হাস্যময় এই মানুষটির হাসি মুখ দেখলেই যে কারো মনে হবে কতদিনের চেনা, কত আপন।
একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে কর্মরত জাহিদ ভাই অফিস হতে ফিরে যতটুকু সময় পান পরিবার এবং সংগঠন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন।

১৪ ডিসেম্বর ২০১৩, অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক নিয়মে ছোট্ট একটা ফুট-ফুটে মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে রাতের খাবার সেরে ঘুমাতে গেলেন।
কিন্তু এই স্বাভাবিকতার আন্তরালেই কি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি বিরাজ করছে জাহিদ ভাই সেটা কল্পনাও করতে পারেন নাই।

রাত একটার দিকে স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা তার বাসায় হামলা করলো। দরজার ধুম ধাম লাথি এবং গালাগালির শব্দে হত-চকিত হয়ে দরজা খুলে দিলেন তিনি। হুড় মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়লো একদল আওয়ামী সন্ত্রাসী।
যে যা পারছে লুট করে নিচ্ছে, আলমারীর তালা খুলে স্ত্রীর স্বর্ণের যাবতীয় গয়না নিয়ে নিলো। ড্রয়ার থেকে নগদ টাকা, মোবাইল, ঘড়ি, যা যা নেয়া সম্ভব সবই লুট করা হলো। সব চাইতে ভয়াবহ যে ব্যাপার সেটা হচ্ছে, একজন তার ছোট্ট মেয়েটির গলায় ছুড়ি ঠেকিয়ে বললো, ‘হৈ-চৈ করলে জবাই করে ফেলবো!’
স্ত্রী-সন্তানের সামনেই নির্দয়ভাবে পেটানো হলো জাহিদ ভাইকে, একজন তার মটর সাইকেলের তালা ভেঙে সেটাও নিয়ে গেলো।
লুটপাট শেষ হলে জাহিদ ভাইকে ঘর থেকে বের করে আনা হলো, অতি উৎসাহী দুই-চারজন বলছিলো, ‘বউটাকেও নিয়ে চল’। পরবর্তীতে সন্ত্রাসীদের মধ্যে নেতা গোছের একজন তাতে হস্তক্ষেপ করে বললো, ‘মহিলাদের গায়ে হাত দিসনা!’

চোরের মতোই পেটাতে পেটাতে জাহিদ ভাইকে নিয়ে যাচ্ছিলো সন্ত্রাসীরা, পেছন থেকে চোখের পানি ফেলা ছাড়া কিছুই করার ছিলোনা তার স্ত্রীর। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আতঙ্কে পাড়া-প্রতিবেশি কেউই বেড়িয়ে আসেনাই এই পরিবারটিকে রক্ষা করতে।
সারা রাত ধরে জাহিদ ভাইকে আটকে রাখা হলো একটি বস্তিতে, চালানো হলো অমানুষিক নির্যাতন। এরই মধ্যে এক আওয়ামী নেতা বাসায় এসে হুমকি দিয়ে গেলো, “টাকা দিতে হবে, নয়তো জাহিদের লাশও খুঁজে পাওয়া যাবেনা”।

পরের দিন সকালে জাহিদ ভাইকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হলো, জাহিদ ভাইয়ের হাতে একটি পাইপগান! পুলিশ মামলা নথিবদ্ধ করলো, “স্থানীয় এলাকাবাসীর হাতে অস্ত্র সহ জামায়াত সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার”।

যার বাসা লুট করা হলো, সারাটি রাত ধরে যার উপর নির্যাতন চালানো হলো, তিনি হচ্ছেন সন্ত্রাসী। আর যারা নির্যাতন লুটপাট করে তার হাতে অস্ত্র দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিলো, তারা হচ্ছে এলাকাবাসী!! আলেকজান্ডার বেঁচে থাকলে হয়তো বলতেন, "সত্যি সেলুকাস, কি বিচিত্র এই বাকশালীরা!"

জাহিদ ভাই এখনো কারাগারে বন্দী আছেন, ছোট ফুট-ফুটে মেয়েটি এখনো তার বাবাকে খুঁজে ফিরে, এঘর, ওঘর, সারা বাড়ি।
জাহিদ ভাইয়ের সাথে দেখা করতে কারাগারে গিয়েছিলাম, মুখের সেই নির্মল হাসি এখনো অমলিন। ইসলামী আন্দোলনের সৈনিকরা সর্বাবস্থাই আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, তাদের হাসি অমলিন থাকে চিরদিন।

শেখ মুজিবের শাসনামল ও শেখ হাসিনার শাসনামলের যদি তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হয়, তবে স্বৈরশাসনে নোবেল পুরস্কার কাকে দেয়া যায় সেটা নিয়ে নোবেল কমিটি ভালোই দ্বিধায় পড়ে যাবে।

লেখাঃ মুজিব বনাম হাসিনা।
© শামীম রেজা
০৬/০৩/২০১৪

Post Comment

No comments:

Post a Comment