স্বাধীনতার ঘোষণা ও শেখ মুজিব

কোনো আওয়ামীলীগারকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা কে দিয়েছিলো। সাথে সাথেই জবাব আসবে শেখ মুজিবুর রহমান।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমি এ পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানের কন্ঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা শুনিনাই। এমনকি শেখ মুজিব নিজেও কখনো বলেননাই, তিনি স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছিলেন।

লেখার এ পর্যায়ে এসে হয়তো অনেক আওয়ামীলীগার আমার উপর চটে যাবেন, তারা আমার চোখের সামনে আঙুল নাচিয়ে বলবেন, “আপনি কি আন্ধা, চোখে দেখেননা? আপনি কি বয়রা, কানে শোনেননা?”
অবশ্য সামনা সামনি হলে ব্যাপারটা ভিন্নও হতে পারে, আওয়ামী র‍্যাবের হাতে পড়লে ক্রস ফায়ার, আর ছাত্রলীগের হাতে পড়লে চাপাতির কোপ!

সে যাই হোক, যে ব্যাপারে বলছিলাম, তারা আমাকে ৭ই মার্চের বক্তব্য শুনিয়ে দিবেন, “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। যেহেতু শেখ মুজিব বলেছেন “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম", সেহেতু এটাই স্বাধীনতার ঘোষনা।
সুন্দর যুক্তি, এবার যদি প্রশ্ন করা হয়, বক্তব্যের শেষে স্লোগানে শেখ মুজিব “জয় বাংলা”র পরে পাকিস্থানের দীর্ঘ জীবন কামনা করেছিলেন কেনো? তখনই তারা আকাশ হতে পরবেন, “না, শেখ মুজিব একথা বলতে পারেননা”।

মূলত ৭১সালটাই ছিলো শেখ মুজিবের জন্য চরম আতঙ্কের একটি সময়। শেখ মুজিব জানতেন, যদি তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা দেন, তবে সেনাবাহিনী তাকে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে হত্যা করবে। আবার যদি তিনি স্বাধীনতার ঘোষনা না দেন, তবে স্বাধীনতাপন্থীরা তাকে হত্যা করবে। শেখ মুজিব উভয় সংকটে পড়ে গিয়েছিলেন।

তার এই আশঙ্কার কথাই তিনি ব্যাক্ত করেছিলেন, গভর্ণরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর নিকট। ১৯৭১ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী শেখ মুজিব বলেন, “আমার অবস্থা দু পাশের আগুন- মাঝখানে আমি দাঁড়িয়ে। হয় সেনাবাহিনী আমাকে মেরে ফেলবে না হয় আমার দলের চরমপন্থীরা আমাকে মেরে ফেলবে। কেন আপনারা আমাকে গ্রেফতার করছেন না”।( সিদ্দিক সালিকের নিয়াজীর আত্মসমর্পনের দলিল পৃঃ ৫৬)

তৎকালীণ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহাম্মদ ২৫ মার্চ রাত নয়টায় একটি টেপ রেকর্ডার আর একটি ক্যাসেট নিয়ে শেখ মুজিবের ঘরে গিয়ে বলেছিলেন, আজ স্বাধীনতার ঘোষণাটি দিয়ে যান। আমরা সেটি রিলে করে রেডিওর মাধ্যমে প্রকাশ করব। জনগণ জানতে পারবে আপনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু শেখ মুজিব রাজী হন নাই। তিনি বলেছিলেন, ঘোষণাটা দিয়ে কি রাষ্ট্রদ্রোহীতায় পড়ব? আমি এটা পারব না।

মূলত শেখ মুজিবুর রহমান নিজেও স্বাধীনতা চাননাই। তিনি চেয়েছিলেন, অখন্ড পাকিস্থানের প্রেসিডেন্ট হতে। পূর্ণাঙ্গ একটি দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও, সেই দেশের অর্ধেকের প্রেসিডেন্ট হতে কে চাইবে, শেখ মুজিব কি গাধা ছিলো?!
শেখ মুজিব মূলত এদেশের মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা করেছিলো। এদেশের জনগণের মনমানসে উগ্রজাতীয়তাবাদের আগুন প্রজ্বলিত করে ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিল করেছিলো।

যারা বলেন, শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ঘোষণাটাই হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা, তাদের প্রতি অনুরোধ রইলো, আপনারা আজ হতে ২৬মার্চের পরিবর্তে ৭ই মার্চকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করুন। ২৬মার্চ স্বাধীনতা দিবস আপনাদের জন্য নয়।

লেখাঃ স্বাধীনতার ঘোষণা ও শেখ মুজিব
© শামীম রেজা
০৭/০৩/২০১৪

Post Comment

No comments:

Post a Comment