আমার দুলাভাই কট্টর আওয়ামী সমর্থক মানুষ! জামায়াত শিবিরের নাম দুই কানে শুনতে পারেননা। তবে কথার প্যাচে পড়লে নিজেকে আওয়ামী পরিচয় দিতেও চাননা। বলেন, আমি সরকারী কর্মকর্তা, আমি সরকারী দল করি, যেই দল সরকারে আসবে আমি সেইদল।
যাই হোক, তিনি মাঝে মধ্যেই একটা কথা বলেন সেটা হচ্ছে, “বাংলাদেশে সুদি ইউনূসের পরে সব চাইতে বড় সুদ খোড় হচ্ছে তোমাদের জামায়াতের লোকেরা”।
আমি অবাক হই! যেই জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ সর্ব প্রথম ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে, সেই জামায়াতের লোকদের দুলাভাই সুদ খোড় বলছেন? অদ্ভুত!!
দুলাভাইয়ের যুক্তির সূত্র ধরেই বলছি, বাংলাদেশের আনাচে কানাচে গ্রামে গঞ্জে সাবেক শিবির কর্মীদের হাতে (অধিকাংশই বহিস্কৃত, কারণ সুদি ব্যাংকে চাকরী করে এমন কেউ জামায়াতের রুকন হতে পারেনা) গড়ে উঠেছে অসংখ্য মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি। এবং সব চাইতে মজার যে বিষয় সেটা হচ্ছে এইসব মাল্টিপারপাসের সবগুলোর আগেই ইসলামীক লাগানো আছে!
এই মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির অধিকাংশরই মূল ব্যবসা হচ্ছে সুদে টাকা খাটানো, কিন্তু যেহেতু এর সাথে জামায়াত-শিবিরের লোকেরা জড়িত আছে তাই এটা ইসলামীক সুদ!!
এবার আসি ইসলামীক গালির প্রসঙ্গে, ইদানিং ফেসবুকে ঢুকলেই যেই বিষয়টা কষ্ট দেয় সেটা হচ্ছে গালি। একটা সময় ছিলো ব্লগিং করতাম, নাস্তিক এবং আওয়ামী ব্লগারদের বিপরীতে পরিচ্ছন্ন ব্লগার হিসেবে ইসলামপন্থীদের একটা সুনাম ছিলো। কিন্তু এখন দিন বদলাইছে আমরা ডিজিটাল হয়েছি, আমরা পেছনে পড়ে থাকবো কেনো? আমরাও গালি দেয়া শুরু করলাম, আমরা যেই গালি গুলো ব্যবহার করি, সেগুলো হচ্ছে ইসলামীক গালি! যেহেতু আমরা শিবির করি, তাই আমাদের “চ” অধ্যাক্ষরের গালি গুলো ফিল্টার হয়ে ইসলামীক হয়ে যায়।
সেদিন একটা জনপ্রিয় ইসলামীক পেইজের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে ওয়াল পোস্ট করেছিলাম, আমার পোস্টে এসে অনেকেই আমাকে গালি দিলো, এবং সেই পেইজের পক্ষ থেকে ম্যাসেজ দিয়ে ঐ গালি গুলোর কথা উল্লেখ করে আমাকে বিদ্রুপ করা হলো। আমার বিরুদ্ধে গালি ব্যবহার করাতে তারা আনন্দ পেয়েছেন।
ইদানিং আরো একটা বিষয় খুব ভালো লাগছে, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, সঙ্কীর্ণতার উর্ধ্বে উঠছি। তবে নিজেকে নিয়ে দুঃখ হয়, আমি সেই সঙ্কীর্ণ মানষিকতার মানুষই রয়ে গেলাম।
যে লেখা গুলোর সাথে আমি চটি সাহিত্যের কোনো পার্থক্য করতে পারিনা, যে লেখাগুলো পড়তে গেলে আশে পাশে দুইবার করে তাকিয়ে দেখতে হয়, কেউ আমাকে দেখছে কিনা, সেই লেখাগুলোই আমার ওয়ালে বারবার ভেসে ওঠে, আমাদেরই কতিপয় ভাই-বোনের লাইক এবং লুলায়িত কমেন্টের মাধ্যমে।
আলহামদুলিল্লাহ, আমরা ইসলামীক চটি রচনা করতে শিখেছি, এবং আমাদের বোনদের বাহবাও পাচ্ছি। সারাদিন কোরান হাদিসের বয়ান শেষে ক্লান্ত মনে এমন একটু আধটু বিনোদন না পেলে কি চলে?
আমরা চটি সাহিত্যিককে বাহবা জানাই, “আপনিই সঠিক পথে আছেন, আপনার গালি গুলো আমি ভালো পাই, আমার আফসোস আমি আপনার মতো গালি দিতে পারিনা, আপনার মতো শরীর বৃত্তিয় বিষয়গুলোকে এমন প্রতিবাদী ভাষায় উপস্থাপন করতে আমি ব্যার্থ। আপনি সফল হয়েছেন, আপনাকে মোবারকবাদ”।
আমরা আরো সুন্দর শালীন করে বলি, “আপনার গালি গুলোর মর্মার্থ মূর্খ পাব্লিকেরা বুঝবেনা, আপনি চালিয়ে যান, আপনার ইসলামীক চটি সাহিত্যের জন্য আমরা অধীর হয়ে অপেক্ষায় থাকি”।
শেষ কথা, আমরা ইসলামীক সুদ পেলাম, ইসলামীক গালি পেলাম, ইসলামীক চটি সাহিত্য পেলাম, ইসলামীক পর্ণ ভিডিও পেতে কত দেরী পাঞ্জেরী?
লেখাঃ ইসলামীক পর্ণ ভিডিও পেতে কত দেরী পাঞ্জেরী? © শামীম রেজা
২১/০৩/২০১৪
No comments:
Post a Comment