৭১
সালের সেপ্টেম্বর মাসে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের সাথে ভারতের যে সাত দফা
গোলামী চুক্তি করা হয়, তার একটি হচ্ছে, বাংলাদেশের নিজস্ব কোনো সামরিক
বাহিনী থাকবেনা। অভ্যান্তরিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য একটি আধাসামরিক বাহিনী
গঠন করা হবে।
১৯৭২সালের শুরুতে, ভারতীয় মেজর জেনারেল উবানের নেতৃত্বে গঠন করা হয় রক্ষী বাহিনী, তার সাথে ভারত থেকে আসেন জেনারেল মালহোত্রা। শেখ মণির অনুসারী মুজিব বাহিনীকে নিয়েই গঠন করা হয় এই রক্ষিবাহিনী। রক্ষি বাহিনীর সদস্যরা দেশে প্রেমের পরিবর্তে শেখ মুজিবের আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করতো।
ভারতের সাথে চুক্তি অনুসারে সেনাবাহিনীকে বিলুপ্ত করার কথা থাকলেও, সেনাবাহিনীর ক্ষোভের ভয়ে শেখ মুজিব তা করেন নাই। বরং ধুকে ধুকে মারার ব্যবস্থা করেছিলেন।
এ ব্যাপারে বিগ্রেডিয়ার মঞ্জুর বলেছিলেন, “আমাদের জোয়ানদের খাবার নেই, অস্ত্র নেই। তাদের জার্সি নেই, গায়ের কোট নেই, পায়ে দেয়ার বুট পর্যন্ত নেই। শীতের রাতে তাদেরকে কম্বল গায়ে দিয়ে ডিউটি করতে হয়। আমাদের অনেক সিপাহী লুঙ্গি পরে কাজ করছে। তাদের কোনো ইউনিফর্ম নেই। পুলিশ আমাদের লোকদেরকে পেটাতো”।
অপর দিকে রক্ষী বাহিনীর ছিলো চক চকে বুট, আধুনিক অস্ত্র, দামী ইউনিফর্ম, এবং বিলাসী জীবন।
এমনকি শেখ মুজিবুর রহমান সেনাবাহিনীকে অস্ত্র দিতে পর্যন্ত দ্বিধা করতেন। ১৯৭৩ সালে আরব ইসরাইল যুদ্ধে শেখ মুজিব মিশরের জন্য উন্নত মানের চা পাতা প্রেরণ করেন।
যুদ্ধ শেষে শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে মিশর সরকার বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর জন্য ৩০টি, T-54 ট্যাঙ্ক উপহার দিতে চাইলেন।
যেখানে টাকা দিয়েও আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র সংগ্রহ করা অনেক কঠিন ব্যাপার, সেখানে বিনামূল্যে ট্যাঙ্ক পেয়েও শেখ মুজিব সেই ট্যাঙ্ক গ্রহণ করতে গরিমসি শুরু করলেন। শেখ মুজিব সেনাবাহিনীকে আধুনিক বাহিনীতে রুপান্তরের বিরোধী ছিলেন, পরবর্তীতে উপদেষ্টাদের পরামর্শে মিশর সরকারকে খুশি করতে শেখ মুজিব সেই ট্যাঙ্ক গ্রহণ করলেন।
সেনাবাহিনীর প্রতি এতো বৈষম্য, এতো অবিশ্বাসই শেখ মুজিবের জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছিলো। শুধুমাত্র দেশের টানে, দেশপ্রেমের কারণে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে বিপ্লবী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন মেজর ফারুক সহ দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর জুনিয়র অফিসাররা। ফলাফল ঘুরে দাড়ায় বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, ভারতের তাবাদারীর বিরুদ্ধে ঘুড়ে দাড়ায় বাংলাদেশ।
সজীব ওয়াজেদ জয়, ভারতীয় পত্রিকায় স্বাক্ষাতকার প্রদান করলেন, সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান করার মতো আর কেউ অবশিষ্ট্য নেই। অভ্যুত্থান করতে হলে শেখ হাসিনা পর্যন্ত পৌছাতে হবে, সেই ক্ষমতা কারো নেই। কারণ শেখ হাসিনাকে পাহাড়া দিয়ে রেখেছে তার বিশ্বস্ত লোকেরা। এই বিশ্বস্ত লোক কারা? ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এদেশীয় এজেন্টরা?!
বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে বিলুপ্ত করার এজেন্ডা ভারত এখনো ত্যাগ করেনাই, বিভিন্ন সময়ে “র” এর চিহ্নিত এজেন্ট শাহরিয়ার কবিররা পত্রিকায় কলাম লিখেছে, সেনা বাহিনী বিলুপ্ত করার ইন্ধন দিয়ে। তাদের দাবী গরীব দেশে টাকা খরচ করে সেনাবাহিনী রাখার প্রয়োজন কি?
আসল কথা হচ্ছে, শক্তিশালী সেনাবাহিনী থাকলেতো বাংলাদেশ সরকার ভারতের তাবাদারী করবেনা।
এবার আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এসেই ভারতের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সেনাবাহিনীর চিহ্নিত চৌকস দেশপ্রেমিক অফিসারদের পিলখানাতে হত্যা এবং চাকরিচ্যুত করে। রক্ষিবাহিনীর ভূমিকায় দাড় করানো হয় এলিট ফোর্স র্যাবকে। পুলিশকে দলীয় করণ করার উদ্যেশ্যে ত্রিশ হাজারের অধিক দলীয় ক্যাডারকে পুলিশে নিয়োগ দেয়া হয়।
না, এতো কিছু করার পরেও শেখ হাসিনার সেনাবাহিনী ভীতি কমেনাই বরং বেড়েছে দ্বিগুন, তিনগুণ, বহুগুণ। সেনাবাহিনীর অভ্যান্তরেও বেড়েছে ক্ষোভ, দেশপ্রেমিক ফারুকরা মরেনা, তারা ফিরে আসে যুগে যুগে জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে।
গত বছর বিজয় দিবস এবং এবছর স্বাধীনতা দিবসে সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ বাতিল করা হয়েছে। ভালো করেই বোঝা যাচ্ছে এই সরকারের পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বুঝে গেছে, ক্ষুব্ধ সামরিক বাহিনী প্যারেড অনুষ্ঠানেই তাকে দিল্লি পাঠিয়ে দিতে পারে।
আমরা যতই সেনাবাহিনীকে গালি দেই, ব্যার্থ বলি, নুপুংসক বলি, কিন্তু শেষ বেলাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীই ভারতীয় তাবেদার শেখ হাসিনা’র অবৈধ সরকারের মূল আতঙ্ক।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী সেনাবাহিনী কখনোই দেশের শত্রুকে চিনতে ভুল করেনাই, হয়তো ঘুড়ে দাড়াতে ব্যায় হয়েছে কিছুটা সময়।
অবস্থাদৃষ্টে বোঝা যাচ্ছে, শেখ মুজিবের পথ ধরেই শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছে। বাহাত্তরের সংবিধানে দেশ ফিরে গেছে, বাহাত্তরের পরে তিয়াত্তর আসে, পঁচাত্তর আসেনা। পঁচাত্তর আসে চুয়াত্তরের পরে।
আমাদেরকে অধৈর্য হলে চলবেনা, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে আগস্টের ১৫তারিখেই সমাধান মিলে যায়।
লেখাঃ স্বাধীনতা ও সামরিক বাহিনী
© শামীম রেজা
২৬/০৩/২০১৪
১৯৭২সালের শুরুতে, ভারতীয় মেজর জেনারেল উবানের নেতৃত্বে গঠন করা হয় রক্ষী বাহিনী, তার সাথে ভারত থেকে আসেন জেনারেল মালহোত্রা। শেখ মণির অনুসারী মুজিব বাহিনীকে নিয়েই গঠন করা হয় এই রক্ষিবাহিনী। রক্ষি বাহিনীর সদস্যরা দেশে প্রেমের পরিবর্তে শেখ মুজিবের আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করতো।
ভারতের সাথে চুক্তি অনুসারে সেনাবাহিনীকে বিলুপ্ত করার কথা থাকলেও, সেনাবাহিনীর ক্ষোভের ভয়ে শেখ মুজিব তা করেন নাই। বরং ধুকে ধুকে মারার ব্যবস্থা করেছিলেন।
এ ব্যাপারে বিগ্রেডিয়ার মঞ্জুর বলেছিলেন, “আমাদের জোয়ানদের খাবার নেই, অস্ত্র নেই। তাদের জার্সি নেই, গায়ের কোট নেই, পায়ে দেয়ার বুট পর্যন্ত নেই। শীতের রাতে তাদেরকে কম্বল গায়ে দিয়ে ডিউটি করতে হয়। আমাদের অনেক সিপাহী লুঙ্গি পরে কাজ করছে। তাদের কোনো ইউনিফর্ম নেই। পুলিশ আমাদের লোকদেরকে পেটাতো”।
অপর দিকে রক্ষী বাহিনীর ছিলো চক চকে বুট, আধুনিক অস্ত্র, দামী ইউনিফর্ম, এবং বিলাসী জীবন।
এমনকি শেখ মুজিবুর রহমান সেনাবাহিনীকে অস্ত্র দিতে পর্যন্ত দ্বিধা করতেন। ১৯৭৩ সালে আরব ইসরাইল যুদ্ধে শেখ মুজিব মিশরের জন্য উন্নত মানের চা পাতা প্রেরণ করেন।
যুদ্ধ শেষে শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে মিশর সরকার বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর জন্য ৩০টি, T-54 ট্যাঙ্ক উপহার দিতে চাইলেন।
যেখানে টাকা দিয়েও আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র সংগ্রহ করা অনেক কঠিন ব্যাপার, সেখানে বিনামূল্যে ট্যাঙ্ক পেয়েও শেখ মুজিব সেই ট্যাঙ্ক গ্রহণ করতে গরিমসি শুরু করলেন। শেখ মুজিব সেনাবাহিনীকে আধুনিক বাহিনীতে রুপান্তরের বিরোধী ছিলেন, পরবর্তীতে উপদেষ্টাদের পরামর্শে মিশর সরকারকে খুশি করতে শেখ মুজিব সেই ট্যাঙ্ক গ্রহণ করলেন।
সেনাবাহিনীর প্রতি এতো বৈষম্য, এতো অবিশ্বাসই শেখ মুজিবের জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছিলো। শুধুমাত্র দেশের টানে, দেশপ্রেমের কারণে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে বিপ্লবী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন মেজর ফারুক সহ দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর জুনিয়র অফিসাররা। ফলাফল ঘুরে দাড়ায় বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, ভারতের তাবাদারীর বিরুদ্ধে ঘুড়ে দাড়ায় বাংলাদেশ।
সজীব ওয়াজেদ জয়, ভারতীয় পত্রিকায় স্বাক্ষাতকার প্রদান করলেন, সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান করার মতো আর কেউ অবশিষ্ট্য নেই। অভ্যুত্থান করতে হলে শেখ হাসিনা পর্যন্ত পৌছাতে হবে, সেই ক্ষমতা কারো নেই। কারণ শেখ হাসিনাকে পাহাড়া দিয়ে রেখেছে তার বিশ্বস্ত লোকেরা। এই বিশ্বস্ত লোক কারা? ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এদেশীয় এজেন্টরা?!
বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে বিলুপ্ত করার এজেন্ডা ভারত এখনো ত্যাগ করেনাই, বিভিন্ন সময়ে “র” এর চিহ্নিত এজেন্ট শাহরিয়ার কবিররা পত্রিকায় কলাম লিখেছে, সেনা বাহিনী বিলুপ্ত করার ইন্ধন দিয়ে। তাদের দাবী গরীব দেশে টাকা খরচ করে সেনাবাহিনী রাখার প্রয়োজন কি?
আসল কথা হচ্ছে, শক্তিশালী সেনাবাহিনী থাকলেতো বাংলাদেশ সরকার ভারতের তাবাদারী করবেনা।
এবার আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এসেই ভারতের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সেনাবাহিনীর চিহ্নিত চৌকস দেশপ্রেমিক অফিসারদের পিলখানাতে হত্যা এবং চাকরিচ্যুত করে। রক্ষিবাহিনীর ভূমিকায় দাড় করানো হয় এলিট ফোর্স র্যাবকে। পুলিশকে দলীয় করণ করার উদ্যেশ্যে ত্রিশ হাজারের অধিক দলীয় ক্যাডারকে পুলিশে নিয়োগ দেয়া হয়।
না, এতো কিছু করার পরেও শেখ হাসিনার সেনাবাহিনী ভীতি কমেনাই বরং বেড়েছে দ্বিগুন, তিনগুণ, বহুগুণ। সেনাবাহিনীর অভ্যান্তরেও বেড়েছে ক্ষোভ, দেশপ্রেমিক ফারুকরা মরেনা, তারা ফিরে আসে যুগে যুগে জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে।
গত বছর বিজয় দিবস এবং এবছর স্বাধীনতা দিবসে সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ বাতিল করা হয়েছে। ভালো করেই বোঝা যাচ্ছে এই সরকারের পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বুঝে গেছে, ক্ষুব্ধ সামরিক বাহিনী প্যারেড অনুষ্ঠানেই তাকে দিল্লি পাঠিয়ে দিতে পারে।
আমরা যতই সেনাবাহিনীকে গালি দেই, ব্যার্থ বলি, নুপুংসক বলি, কিন্তু শেষ বেলাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীই ভারতীয় তাবেদার শেখ হাসিনা’র অবৈধ সরকারের মূল আতঙ্ক।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী সেনাবাহিনী কখনোই দেশের শত্রুকে চিনতে ভুল করেনাই, হয়তো ঘুড়ে দাড়াতে ব্যায় হয়েছে কিছুটা সময়।
অবস্থাদৃষ্টে বোঝা যাচ্ছে, শেখ মুজিবের পথ ধরেই শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছে। বাহাত্তরের সংবিধানে দেশ ফিরে গেছে, বাহাত্তরের পরে তিয়াত্তর আসে, পঁচাত্তর আসেনা। পঁচাত্তর আসে চুয়াত্তরের পরে।
আমাদেরকে অধৈর্য হলে চলবেনা, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে আগস্টের ১৫তারিখেই সমাধান মিলে যায়।
লেখাঃ স্বাধীনতা ও সামরিক বাহিনী
© শামীম রেজা
২৬/০৩/২০১৪
No comments:
Post a Comment