তুই পাকিস্থান চলে যা

কোথায় যেনো একটা গান শুনেছিলাম, “সময় এখন বর্ষা কাল, হরিণ খামচায় বাঘের গাল” বর্ষাকালের সাথে হরিণের শক্তির কি সম্পর্ক সেটা না জানলেও এক বর্ষাকালেই এক বাঘকে দেখেছিলাম, বিশাল দাড়ি ওয়ালা এক বাঘ। সেই বাঘ আবার রিকশা চালায়!

আমি আর মামুন ভাই কোথায় যেনো যাচ্ছিলাম, সারাদিন ধরে বৃষ্টি, তুমুল বৃষ্টিতে সয়লাভ চট্টলার দিক-দিগন্ত। এই বৃষ্টির দিনগুলো হচ্ছে প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য আদর্শ একটা সময়, হুড তোলা রিক্সার সামনে পর্দা টানিয়ে তুমুল রোমান্স, বাসর ঘর সাজাতে কতদেরী পাঞ্জেরী!

ঝাউতলা রেলগেটে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি, হুট করে একটা রিক্সা এসে আমাদের সামনে দাড়িয়ে গেলো, হুড়মুড় করে নেমে গেলেন রিক্সার ড্রাইভার, ইয়া বড় বড় দাড়ি, সম্ভবত রাজাকার দলের কেউ হবে। এই রাজাকাররা এখন সমাজের আনাচে কানাচে পৌছে গেছে। সামান্য রিক্সা চালক তারা পর্যন্ত জামায়াত করে! মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করে কানে ধরে সবগুলোকে পাকিস্থানে চালান করে দেই!
না না, আমাকে ভুল বুঝবেননা, আমি ওই দাড়ি ওয়ালা রিক্সা চালককে ঘৃণা করছিনা, আমি তার নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই তাকে পাকিস্থান পাঠাতে চাচ্ছি। দেশটা দিন দিন যেভাবে ভারতীয় সাংস্কৃতিতে সয়লাভ হয়ে যাচ্ছে, তাছাড়া পুলিশ,বিজিবি,সেনাবাহিনীকে যেভাবে ভারতীয়করন করা হচ্ছে, তাতে করে এইসব ধর্মভীরু মানুষের জন্য আমার ভয় হয়। তারা তাদের ঈমান এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে এদেশে থাকতে পারবেতো! নাকি নির্যাতনের শিকার হবে প্রতিটি মূহুর্তে।
সেদিন পত্রিকার পাতায় দেখলাম এক ষাটোর্ধ বৃদ্ধের দাড়ি ধরে নির্যাতন করছে ছেলের বয়সী এক ছাত্রলীগ কর্মী। এইতো সেদিনের ঘটনা, পাঞ্জাবী টুপি আর দাড়ি থাকার কারণে ঢাবিতে বেদম প্রহার করে পুলিশ তুলে দেয়া হলো এক মাদ্রাসা পাশ করা ঢাবি ছাত্রকে।
শুধু কি তাই! এদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় তার নিবন্ধে দাবী করেছেন, সেনাবাহিনীতে মাদ্রাসা পড়ুয়াদের সংখ্যা কমাতে হবে, এবং বোরখা পরিহীতা নারীর সংখ্যা নিয়ে জয় বেশ উদ্বিগ্ন। জয়ের ইচ্ছে, এদেশের নারীরা ইন্ডিয়ান নায়ীকাদের মতো পেট খোলা, পিঠ খোলা পোশাক পরিধান করে তরূণদের মনে বিনোদন যোগাবে।

সে যাই হোক, এসব ধর্মভীরু মানুষগুলোকে নিয়ে ভেবে আর কি হবে, যা হওয়ার তাতো হয়েই গেছে, লেন্দুপ দর্জির দল আমাদের এই প্রাণের বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দেয়ার সব রকম প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করে ফেলেছে, এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোশণাটাই বাকি আছে।

যা বলছিলাম, বর্ষা হচ্ছে কদম ফুলের মৌসুম, প্রিয়ার হাতে একটি কদম তুলে দিয়ে হৃদয়ের আকুতি প্রকাশ করার মৌসুম। সেই মৌসুমেই এক যুগল বেরিয়েছিলো আনন্দ বিলাসের ইচ্ছায়, তুমুল বৃষ্টি, হুড তোলা রিক্সার সামনের দিকটা পর্দায় ঘেরা। দাড়ি ওয়ালা রিক্সা চালক আমাদের সামনে এসেই ঘ্যাচাং করে রিক্সাটা থামিয়ে দিলেন, এক হাতে রিক্সার পর্দা তুলেই প্রচন্ড জোড়ে ধমকে উঠলেন, “নামেন আমার গাড়ি থাইক্কা”
ভ্যাবাচ্যাকা যাত্রীদ্বয় ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে! আবার ধমকে উঠলেন রিক্সা চালক, “নামেন কইতাছি! এই ধরণের প্যাসেঞ্জার আমি গাড়িতে তুলিনা, নোংরামি করতে অইলে বাসায় গিয়া করেন”।
নির্বাক যাত্রী, সুর সুর করে গাড়ি হতে নেমে গেলো, মেয়েটি দেখলাম ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলেছে!
রাগে গজ গজ করতে করতে রিক্সা ওয়ালা স্থান ত্যাগ করলো, মুখ থেকে বিড় বিড় করে বেরিয়ে আসছিলো, “আমার গাড়িটাই নষ্ট কইরা দিলো!”

শুনেছি অমি পিয়ালের লাল পর্দায় ঘেরা ফ্লাটের নাকি ভিডিও এসেছে, জাফর ইকবালের মেয়ে ইয়েশিমের মাতাল অবস্থায় নাচানাচি এবং মদের বোতল সহ ছবি ফেসবুকের এখানে সেখানে দেখা যাচ্ছে। শেখ হাসিনার সাথে মৃণাল কান্তি এবং জয়ের সাথে এক ভারতীয় শিখ নারীর প্রেমের কাহিনী বাজারে চাউর আছে।
এদেশের হর্তা-কর্তারা যেখানে পাপে লিপ্ত থাকে, সেখানে ধর্মভীরু মোল্লাদের এদেশে যায়গা হতে পারেনা, সত্যিই তাদের পাকিস্থান চলে যাওয়া উচিত।
সেই শরীয়তুল্লাহ, শাহজালাল, তীতুমীরের বাংলাদেশ এটা নয়। এটা এখন শেখ মুজিবের বাংলাদেশ, রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা। এদেশ মোল্লাদের নয়, এদেশ মোল্লাদের জন্য নিরাপদ নয়, এখানে ঈমান নিয়ে টিকে থাকতে হলে আপনাকে যুদ্ধ করেই টিকে থাকতে হবে।

গল্পঃ তুই পাকিস্থান চলে যা।
© শামীম রেজা
১৪/০২/২০১৪

Post Comment

No comments:

Post a Comment