নাস্তিকতা কি অপরাধ?

কুমিল্লা গিয়েছিলাম, ফেরার পথে বাসে বসেই অভ্যাস বশত মোবাইলে ফেসবুকিং। Lulu Akhtar আপার একটা স্ট্যাটাস পড়ে আনমনেই বেশ কিছুক্ষণ হাসলাম, হাসার কারণ হচ্ছে একটা কৌতুক মনে পড়ে গিয়েছিলো-
এক যুবক এসেছে গীর্জার পাদ্রির নিকট, এসে জিজ্ঞাসা করলো “আচ্ছা ফাদার, আমি যদি আমার গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে ঘুমাই তবে কি আমার পাপ হবে?”
ফাদার কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে ভাবলেন, অবশেষে জবাব দিলেন, “না, পাপ হবেনা!”
উৎফুল্ল যুবক যখন গীর্জা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, ঠিক তখুনি ফাদার বলে উঠলেন, “কিন্তু প্রব্লেম হচ্ছে তোমরাতো ঘুমাবানা!”
যুবক লজ্বিত হয়ে গীর্জা থেকে বেরিয়ে গেলো।

কৌতুক দিয়েই লেখাটা শুরু করলাম, এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। লুলু আপার স্ট্যাটাসে এক নাস্তিকের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, আমি আলেম নই তাই কোরআন হাদীসের আলোকে প্রশ্নটির জবাব দিতে পারবোনা, তবে দুনিয়াবি দৃষ্টিতে কিছুটা বিশ্লেষণ করবো।

নাস্তিকের প্রশ্নটি ছিলো- “আচ্ছা, স্রষ্টাকে যদি কেউ অবিশ্বাস করে, অস্বীকার করে তাতে স্রষ্টার কি কোনো ক্ষতি হবে? না তাতে স্রষ্টার বিন্দুমাত্রও ক্ষতি হবেনা। তাহলে শুধুমাত্র অবিশ্বাস করার কারনে স্রষ্টা তার বান্দাহকে এতবড় নিষ্ঠুর শাস্তি দিবেন কেন? এতে তার লাভ কি?
রাজাকে রাজা হিসেবে বিশ্বাস না করলে রাজা যদি রাখালকে নির্মমভাবে পিটিয়ে অথবা আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে তবে সেটা আপনার নিকট বর্বরোচিত কাজ বলে মনে হয় অথচ অবিশ্বাস করার কারনে স্রষ্টা কতৃক মানুষকে চিরকাল নরকে পোড়ালে সেটা আপনার দৃষ্টিতে ইনসাফ? এটা কেমন ইনসাফ???"

প্রশ্নটা পড়তেই ঘুরে ফিরে আমার কেবল পাদ্রির কথাটা মনে পড়ছিলো, “ঘুমালে প্রব্লেম নেই কিন্তু তোমরাতো ঘুমাবেনা”!
আল্লাহর অস্তিত্ব বিশ্বাস না করলে প্রব্লেম নেই, কিন্তু তোমরাতো শুধুমাত্র এই অবিশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবেনা, তোমরা সহ্যের সকল সীমা অতিক্রম করে নিজেদের সহ গোটা জাতিকে নিয়ে যাবে ধ্বংশের দ্বার প্রান্তে।

একজন আস্তিকের হৃদয়ে সর্বদা আল্লাহর ভয় থাকে, পরকালের ভয় থাকে, তার হৃদয়ের পুলিশ তাকে সকল প্রকার অন্যায়, পাপ কার্য হতে বিরত রাখে।
অন্যদিকে একজন নাস্তিক দুনিয়াবি পুলিশের অনুপস্থিতিতে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য যে কোনো প্রকারের পাপ কার্যে জড়িয়ে পড়ে অনায়াসে। তার মনে পরকালের ভয় থাকেনা, অন্যায়-জুলুমের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহীর ভয় থাকেনা। তাই আমরা দেখতে পাই নাস্তিক মাত্রই দুশ্চরিত্র, নাস্তিক মাত্রই অশ্লীল ভাষী, পাপাচারী, জুলুমকারী।

একজন আস্তিক যদি অন্যায়-জুলুমে লিপ্ত হয় তবে সেটার একটা মাত্রা থাকে, কিন্তু নাস্তিকের অন্যায়ের কোনো মাত্রা থাকেনা। আমরা দেখতে পাই বিশ্বের ইতিহাসের নির্মমতম গণহত্যাগুলো সংগঠিত হয়েছে নাস্তিক্যবাদী শাসকদের হাতে। এই নাস্তিকরা যখনই ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে তখনই মানুষের উপর চালিয়েছে স্মরণকালের নির্মমতম বর্বরতা। নাস্তিক-কমিউনিস্টদের হাতে এযাবত কালে নিহত হয়েছে ১৪৯,৪৬৯,৬১০জন মানব সন্তান (https://www.facebook.com/namosenatripura/posts/253007241490128)

ইতিহাস স্বাক্ষী একজন মানুষ যখন সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাস করে তখন সে শুধুমাত্র অবিশ্বাসের উপরেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেনা, সে লিপ্ত হয়ে সভ্যতা বিধ্বংশী তৎপরতায়, মানবতা বিধ্বংশী তৎপরতায়। নাস্তিক তার অবিশ্বাসকে ছড়িয়ে দেয় দিকে দিকে এবং এর ডাল পালা গুলোও লিপ্ত হয় একই রকম কিংবা তার চাইতেও গুরুতর সীমালঙ্ঘনে।

সেই পাদ্রীর বক্তব্যের সাথে মিল রেখেই বলছি, সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাস করলে প্রব্লেম নেই, কিন্তু তোমরাতো শুধুমাত্র অবিশ্বাস করবেনা, তোমরা সীমা অতিক্রম করে যাবে এবং এই সীমা অতিক্রম করার শাস্তি অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে পুড়েই ভোগ করতে হবে।

লেখাঃ নাস্তিকতা কি অপরাধ?
© শামীম রেজা
১৪/০৮/২০১৪

Post Comment

No comments:

Post a Comment