পোশাক বন্দী ইসলাম

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন, শিয়াদের ব্যাপারে জামায়াতের মন্তব্য কি, ওহাবীদের ব্যাপারে জামায়াতের বক্তব্য কি, কিংবা সালাফী, মাজহাবী, লা-মাজহাবী ইত্যাদি ইস্যুতে জামায়াত চুপ কেনো ইত্যাদি ইত্যাদি।
সবচাইতে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এইযে আকিদাগত বিভিন্ন ইস্যুতে জামায়াতের চুপ থাকার নীতি এটাই জামায়াতকে একটি ব্যতিক্রম অবস্থান দান করেছে। জামায়াত কোনো ফতোয়া বোর্ডের নাম নয়, যে ইচ্ছে হলো যেকোনো ইস্যুতে একটা ফতোয়া দিয়ে দিলাম, কিংবা জামায়াত কোনো আকিদাগত গ্রুপের নামও নয় যে নিজস্ব আকিদাকে আকড়ে ধরে বাকি সব আকিদাকে বাতিল বলে ঘোষণা দিয়ে দিলো।

জামায়াত তাঁর নাম করণের ব্যাপারে স্বার্থক, সংগঠনটির নাম ‘জামায়াতে ইসলামী’। এটাকে জামায়াতে সুন্নি, জামায়াতে শিয়া কিংবা জামায়াতে ওহাবী, সালাফী, মাজহাবী, লা-মাজহাবী বলা যাবেনা। জামায়াত হচ্ছে সকল মতের সকল পথের মুসলিমদের একটি ঐক্যবদ্ধ সংগঠনের নাম। যে সংগঠনের ব্যানারে শামিল হয়েছে নানান আকিদার মুসলিম। এখানে আকিদা নিয়ে মারামারি হয়না, কথা কাটাকাটি হয়না, সবাই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে বিশ্বব্যাপী বৃহত্তর ইসলামী বিপ্লবের স্বপ্ন বুকে ধারণ করে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ‘জামায়াত ইসলামী’ নামক ইসলামী সংগঠনের ব্যানারে।

সেদিন কথা হচ্ছিলো এক শীর্ষস্থানীয় জামায়াত নেতার সাথে, আমার স্বল্প জ্ঞান দিয়ে যখন আমি বলছিলাম এইসব শীয়া-সুন্নী পার্থক্য করে মুসলিমদের ঐক্যে ফাটল ধরানো হচ্ছে। কুরআন হাদিস মানলে আবার শিয়া সুন্নি আসবে কোথা হতে। আমাদের একটাই পরিচয় আমরা মুসলিম।
সম্মানিত দায়িত্বশীল তখন মুচকি হেসে বলছিলেন, শিয়ারা মুসলিম হলে আমরা কি?!
অথচ জামায়াতের এমন অনেক নেতার লেখা পড়েছি যেখানে শিয়াদের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শন করা হয়েছে।
এখানেই জামায়াত ব্যতিক্রম, জামায়াত কখনো আকিদাগত বিষয় নিয়ে কিংবা মাজহাবী বিষয় নিয়ে বিতর্ক করেনা, যার যার মতামত বিশ্বাস সেটা তাঁর নিজস্ব। জামায়াতের লক্ষ একটাই সেটা হচ্ছে, সকল মতের মুসলমানদের সাথে নিয়ে বিশ্বব্যাপী ইসলামী বিপ্লব।

আবার এটাও দেখা যায় অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন, জামায়াত শিবিরের ভাইয়েরা দাড়ি রাখেনা কেনো কিংবা টাকনুর উপর প্যান্ট পড়েনা কেনো।
আসলে প্রশ্নটাতেই ভুল থেকে যাচ্ছে, জামায়াত-শিবিরের শীর্ষস্থানীয় নেতারা দাড়ি রাখেন এবং তারা টাকনুর উপর প্যান্ট পড়েন।
রুট লেভেলের অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা দাড়ি রাখেননা এটা সত্য। আর জামায়াতের সাংগঠনিক সিস্টেমে দাড়ি রাখার জন্য কাউকে বাধ্য করা হয়না কিংবা দাড়ি কাটার জন্যও কাউকে উৎসাহিত করা হয়না।

আমাদের রাসূল(সঃ) মানুষের মুখে দাড়ি রাখানো কিংবা টাকনুর উপর প্যান্ট পড়ানোর জন্য নবুওয়াতের দাড়িত্বপ্রাপ্ত হননাই, এর চাইতেও হাজার গুণ গুরুত্বপূর্ণ মিশন ছিলো তাঁর সম্মুখে।
আজকে যদি প্রশ্ন করা হতো জামায়াত কেনো ফিলিস্তিনে গিয়ে জিহাদ করছেনা কিংবা জামায়াত কেনো তাগুত সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করছেনা তাহলে প্রশ্নটা অধিক যুক্তিযুক্ত হতো। আজকে পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থা কুফরী শক্তির অধীন হয়ে গেছে, সমগ্র বিশ্বে মুসলিমরা মার খাচ্ছে, আর আমরা প্রশ্ন করছি আমাদের দাড়ির সাইজ কত বড়, কিংবা আমাদের কাপড় টাকনুর উপরে রয়েছে কিনা। আজকে যদি সমগ্র বিশ্বের মুসলিমরা টাকনুর উপর প্যান্ট পড়া শুরু করে আর লম্বা লম্বা দাড়ি রাখা আরম্ভ করে তবে কি মুসলিম বিশ্বের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন হয়ে যাবে?

এখানে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, জামায়াত শিবির কাউকে দাড়ি রাখতে মানা করেনা আবার কাউকে দাড়ি কাটতেও বলেনা। জামায়াতের আন্দোলন মানুষের বাহ্যিক লেবাস পরিবর্তনের জন্য নয়। জামায়াত কোনো ফতোয়া বোর্ডও নয়। জামায়াতের আন্দোলন হচ্ছে সকল মত, পথের মুসলিমদের নিয়ে (দাড়ি ওয়ালা, দাড়ি ছাড়া) ইসলামী বিপ্লবের চেষ্টা করে যাওয়া।

আমাদের প্রব্লেম হচ্ছে ইসলামকে আমরা লেবাসের মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলেছি। জাকির নায়েক কোর্ট টাই পড়ে বক্তৃতা দেয় একারণে তিনি ইহুদী-খৃস্টানদের দালাল, তাঁর সকল ভালো কাজ কোর্ট টাইয়ের ফিল্টারে আটকে গেছে।
দাড়ি রাখলে ঈমান বৃদ্ধি হয়না বরং মানুষের হৃদয়ে ঈমানের আলো প্রজ্বলিত হলে গালে দাড়ি গজায়, প্যান্ট গিরার উপরে উঠে যায়। গ্রাজুয়েট হওয়ার আগেই কাউকে জোর করে গ্রাজুয়েশন গাউন পরিয়ে দেয়া হলে গ্রাজুয়েশনের কোনো ভ্যালু থাকেনা।
অনেকেই দেখা যায় দাড়ি, পাগড়ি পরিধান করে অনেক অপকর্ম করেন, ফলশ্রুতিতে দোষ হয় লেবাসের। মানুষ বলে বেড়ায় হুজুররা এই করে সেই করে। বোরখা পড়া মেয়ে পার্কে, সিনেমা হলে ঘুরে বেড়ায়।

আমাদের একটা বিপ্লবী চিন্তা হচ্ছে, আমরা অগার ভাই মগাকে ধরে এনে লেফটেন্যান্ট, কর্ণেল কিংবা মেজর, জেনারেলের পোশাক পরিয়ে দেই। আর মনে মনে আত্মতৃপ্তিতে ভুগি একজন ইসলামের সৈনিক বৃদ্ধিপেলো। কিন্তু এই মগা সাহেব যে পোশাকের সম্মান ধূলায় মিশিয়ে দিতে পারে সে চিন্তা কি আমাদের মাথায় আছে?

লেখাঃ পোশাক বন্দী ইসলাম
© শামীম রেজা
০২/০৮/২০১৪

Post Comment

No comments:

Post a Comment