অর্থনৈতিক যুদ্ধ


এমনিতে আমি নিরামিষ টাইপের মানুষ, চা, কফি কিংবা কোল্ড ড্রিঙ্কস এর প্রতি বিন্দুমাত্র আসক্তি নেই। কিন্তু বন্ধুদের আড্ডায় এক কাপ চা কিংবা প্রচন্ড গরমে খানিকটা কোল্ড ড্রিঙ্কসতো পান করা যেতেই পারে।

গতকালও ছিলো তেমন একটি দিন, একেতো দীর্ঘ জার্নির ক্লান্তিতে বিধ্বস্ত তাঁর উপর প্রচন্ড গরম। ইফতারির জন্য ভালো একটি ড্রিঙ্কস খুজছিলাম, টাইগার কিংবা স্পীড নিলামনা, ধারণা করছি এগুলোতে এ্যালকোহলের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত, মাত্রাতিরিক্ত এ্যালকোহলতো হালালের প্রশ্নই ওঠেনা। কোকাকোলা, পেপসি পান করবোনা এগুলো ইহুদী পণ্য বলে, এসব বোতল পূর্ণ হয়ে আছে ফিলিস্তিনি শিশুদের রক্তে।
বেছে বেছে শেষ পর্যন্ত স্প্রাইটের বোতলটাই হাতে তুলে নিলাম, কিন্তু দূর্ভাগ্য খালি বোতল নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে লেভেলের একটি যায়গায় চোখ আটকে গেলো। ছোট্ট করে লেখা আছে “কোকাকোলা রেজিস্টার্ড পণ্য”! মনে পড়ে গেলো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কথা, মনে পড়ে গেলো বাংলাদেশের মিডিয়ার কথা।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি দেশের ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র পণ্য বিক্রয় করেনা, একই সাথে তারা নিজস্ব রাজনীতি এবং সাংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয় দেশে দেশে। বাংলাদেশে ইসলাম প্রবেশ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বিশ্বের একমাত্র মুসলিম দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ যে দেশের সীমান্তের সাথে অন্য কোনো মুসলিম দেশের সীমান্ত নেই। আরবের মুসলিম বণিকরা এদেশে এসেছিলেন বাণিজ্য করার উদ্দেশ্য নিয়ে, এবং বাণিজ্যের সাথে সাথে তারা পৌছে দিয়েছিলেন ইসলামের সুমহান আদর্শের বার্তা।

ব্রিটিশদের “ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী” এদেশে এসেছিলো বাণিজ্য করার জন্য। বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে তারা বাস্তবায়ন করেছিলো রাজনৈতিক এজেন্ডা, কিনে নিয়েছিলো নবাব সিরাজের সেনাপতি সহ অসংখ্য প্রভাবশালী ব্যক্তিকে, ফলশ্রুতিতে পুরো দেশটাই চলে গিয়েছিলো তাদের হাতে। এদেশের জনসাধারণ পরিণত হয়েছিলো ব্রিটিশদের গোলামে, সূদীর্ঘ সেই গোলামির ইতিহাস।

আমরা আন্দালিব পার্থের দেয়া বক্তব্যের মাধ্যমে জানতে পেরেছি ইন্ডিয়ান কোম্পানী এয়ারটেল কিভাবে শতকোটি টাকা ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে কিনে নিয়েছিলো ওয়ারিদ টেলিকমকে। কিন্তু ব্যাপারটা নিয়ে মিডিয়ায় হৈ চৈ হয়নি, কেনো হয়নি সেটা পরবর্তীতে আলোচনা করবো। শাহবাগ আন্দোলনের সময় মিডিয়াতে তুমুল হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিলো ইসলামী ব্যাংক জাতীয়করণ কিংবা বন্ধ করে দেয়ার দাবিতে, সেই দাবী এখন স্তিমিত হয়ে গেছে। যেসব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান তখন ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে মঞ্চ কাপিয়েছিলো তারা এখন ইসলামী ব্যাংকের পক্ষে সাফাই গাইছে। বাংলাদেশের মোবাইল কোম্পানী গুলোর দূর্ণীতির বিরুদ্ধে মিডিয়াতে কোনো নিউজ হয়না, তারা কি ফেরেশতা? তারা কি ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছেনা? তাহলে মিডিয়াতে নিউজ হচ্ছেনা কেনো?
আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি একদিকে পুরো বিশ্বের মুসলিম-অমুসলিম সহ দল মত নির্বিশেষ সবাই ইহুদী বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ছে, অন্যদিকে ঠিক তখনি আমাদের দেশের মিডিয়া এই ইস্যুতে নির্বিকার হয়ে বসে আছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিডিয়া ইহুদীদের পক্ষ নিয়ে নিউজ প্রকাশ করছে। এর কারণ কি, বাংলাদেশের সব মিডিয়া মালিকরা কি ইহুদী হয়ে গেছে? উত্তর যদি হয় ‘না’, তাহলে মিডিয়া কেনো ইহুদীদের পক্ষাবলম্বন করছে?

একটি নিউজ পড়েছিলাম, কোকাকোলা পেপসি সহ অন্যান্য কোম্পানির পণ্যের উৎপাদন খরচের তুলনায় বিজ্ঞাপন খরচ বেশি। আজকে যদি বাজার করার জন্য পণ্যের তালিকা করেন তবে তালিকার ৭০% পণ্যই থাকবে ইহুদী নিয়ন্ত্রিত কোম্পানীর। ব্যবসা এবং সুদ এই দুইটা জিনিস ইহুদীরা অনেক ভালো বুঝে। ইহুদীদের এই বিরাট বিশাল ব্যবসার বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করা হয় মিডিয়াকে, প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপন বাজেট। যে মিডিয়া যত বেশি ইহুদী তোষণ করতে পারবে সে মিডিয়া তত বেশি বিজ্ঞাপন বাজেট বরাদ্দ পাবে। সুতরাং মিডিয়াগুলো কেনো শুধু শুধু বিনে পয়সায় ইহুদীদের বিরুদ্ধে নিউজ করতে যাবে, যেখানে ইহুদীদের পক্ষে লিখলে পাচ্ছে কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন।
একই কথা প্রযোজ্য টেলিকম সেক্টরের দূর্ণীতির প্রসঙ্গে, মোবাইল কোম্পানি গুলো কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন প্রদানের মাধ্যমে মিডিয়ার মুখ বন্ধ করে দিচ্ছে। আসছি ইসলামী ব্যংকের প্রসঙ্গে, হঠাৎ করেই বাতিলপন্থীদের কাছে ইসলামী ব্যাংক ভালো হয়ে গেলো কেনো? কারণ ঐ একটাই সেটা হচ্ছে ‘বিজ্ঞাপন’। মিডিয়ার পর্দায় ইসলামী ব্যাংকের বিশাল বিশাল বিজ্ঞাপন।

যে কথা বলছিলাম, আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ীরা শুধুমাত্র পণ্য বিক্রয় করেনা, একই সাথে তারা নিজেদের রাজনীতি এবং সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেয় দেশে দেশে। আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি কিভাবে ইহুদী পণ্যের কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপনের লোভে ফিলিস্তিনের গণহত্যা ইস্যুতে আমাদের মিডিয়াগুলো পঙ্গু হয়ে বসে আছে। কিভাবে ভারতীয় কোম্পানীর বিজ্ঞাপনের লোভে প্রথম আলো সহ অন্যান্য মিডিয়া ফেলানীদের নিয়ে লীড নিউজ করেনা। জাতীয় স্বার্থের চাইতে ভারতের এবং ইহুদীদের স্বার্থকেই আমাদের মিডিয়া প্রাধান্য দিচ্ছে।

আমরা দেখতে পাচ্ছি, মিডিয়ার এই এক চোখা নীতির পেছনের কারণ শুধুমাত্র রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিকও বটে। আজকে ইহুদীরা ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালাচ্ছে তাদের অর্থনৈতিক শক্তিতে, ব্যবসায়ীক শক্তিতে। তাদের বিজ্ঞাপন বাজেটই নিয়ন্ত্রণ করছে গোটা বিশ্বের মিডিয়াকে। মিডিয়া আজ তাদের চাহিদা মোতাবেক নিউজ তৈরী করছে।

আমরা চাইলেই রাতারাতি ইহুদী প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে শক্তিশালী মুসলিম প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারবোনা, যেটা পারবো সেটা হচ্ছে ইহুদী পণ্য বয়কট করে তাদের অর্থনীতির ভিত নাড়িয়ে দিতে। ইতোমধ্যেই ইসরাইলী অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন বিশ্বব্যাপী ইহুদী পণ্য বয়কটের কারণে তাদের অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়েছে।
নিচে কিছু বহুল ব্যবহৃত ইহুদী পণ্যের নাম উল্লেখ করা হলো। আসুন ইসরাইলী পণ্য বর্জন করে বিকল্প পণ্য গ্রহণ করে ফিলিস্তিনি শিশুদের রক্ষায় এগিয়ে আসি। আমার টাকায় কেনা বুলেটে জীবন দিতে হবেনা আর কোনো মুসলিম ভাইকে।

১। বাটা ২। ইউনিলিভার ৩। নেসলে ৪। ম্যাকডোনাল্ডস ৫। পেপসি ৬। কোকাকোলা

#SaveGaza #SupportPalestine #StopGenocide #SupportHamas

লেখাঃ অর্থনৈতিক যুদ্ধ
© শামীম রেজা
২৬/০৭/২০১৪

Post Comment

No comments:

Post a Comment