বিশ্বকাপ
ফাইনাল উপলক্ষে বিশাল উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলো আর্জেন্টিনা সমর্থকরা। এলাকার
ঘরে ঘরে গিয়ে চাঁদা তুলেছে প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা। পাশের এলাকাতেও শুনলাম
গরু কেনা হয়েছে। বিরানী রান্না হবে, উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে ঘরে ঘরে,
বিরানীর মৌ মৌ গন্ধে ভরপুর চারিদিক।
ঠিক একই মূহুর্তে ফিলিস্তিনের জীর্ণ কুটিরে অভুক্ত পিতৃহীন শিশু ভয়ে আতঙ্কে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে জানতে চাইছে “মা, আজকে রাতেই কি আমরা মরে যাবো?” ইসরাইলি বিমান থেকে ফেলা হচ্ছে ফসফসার বোমা, গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বাড়িঘর। হাসপাতাল খালি করে দেয়ার নোটিশ জারি করা হয়েছে, নইলে বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া হবে। চিকিৎসা নিতে দেয়া হবেনা আহত-মূমুর্ষু ফিলিস্তিনিদের। বর্বর ইহুদীরা পাহাড়ের উপর চেয়ার পেতে বসে ইসরাইলি বিমানের বর্বর বোমা হামলার ফলে প্রজ্বলিত আগুনের দৃশ্য উপভোগ করছে।
যে ছেলেগুলো আর্জেন্টিনা কিংবা জার্মানির জন্য এতো বিশাল বিপুল আয়োজন করেছে সেই ছেলেগুলো মুসলিম, আবার যে শিশুগুলো ফিলিস্তিনে নিহত হচ্ছে সেই পরিবারটিও মুসলিম। যে ছোট্ট শিশুটি ইসরাইলের বিমানের গর্জন শুনে ভয়ে আতঙ্কে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরছে সেই শিশুটিও মুসলিম।
এক আহত ফিলিস্তিনি শিশুর কথা শুনেছিলাম যে কান্নারত অবস্থায় বলছিলো “আমি আল্লাহকে সব বলে দিবো”। এই শিশুটি যদি সত্যি সত্যিই আল্লাহকে সব কিছু বলে দেয়, তবে সে কি বলবে? ইহুদীদের বর্বরতার বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে অভিযোগ জানাবে?
আমারতো তা মনে হয়না, আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি এই শিশুটি তার প্রভুর নিকট যখন অভিযোগ জানাবে তখন বলবে, “হে রহমানুর রহিম, যখন ইসরাইলি সৈন্যরা আমাদের উপর বোমা নিক্ষপ করছিলো, যখন তারা আমাদের বাড়িগুলো গুড়িয়ে দিচ্ছিলো, যখন তারা আমাদেরকে হত্যা করছিলো, ঠিক তখনি বিশ্বের অপর প্রান্তে আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা বিশ্বকাপ খেলার উন্মাদনায় মেতে ছিল, তারা ঢোল-বাদ্য সহকারে বিরানীর উৎসব করছিলো, তুমি এর বিচার করো মাবুদ”!
যে চল্লিশ হাজার টাকা ব্যয় করে বিরানীর উৎসব করা হোল, যে গরুটি জবাই করে ঢোল পিটিয়ে সাময়ীক উত্তেজনায় একটি রাত পার করা হলো সে টাকা দিয়ে একটি মুসলিম পরিবারের দারিদ্র বিমোচন করা সম্ভব হতো।
একটি অভাবী পরিবারকে রিক্সা কিনে দেয়া যেতো, একজন নারীকে সেলাই মেশিন কিনে দেয়া যেতো। অথবা সেই গরুটি কোন একটি দরিদ্র পরিবারের দারিদ্র বিমোচনের অবলম্বন হতে পারতো।
এক ব্যক্তি বলছিলো, আমি ঘুষ খাইনা, আসলে তাকে ঘুষ দেয়াই হয়না সে খাবে কি করে। জঙ্গলে গিয়ে বৈরাগী জীবন যাপন করে নফসকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ। কিন্তু লোকালয়ে পাপাচারে পরিপূর্ণ সমাজে বসবাস করেও নফসকে নিয়ন্ত্রণ করাই হচ্ছে তাকওয়ার পরিচয়।
ফুটবল বিশ্বকাপ ঝড়ে আক্রান্ত জাতি নিজের ভাই হত্যার সময়েও মেতে ছিল বিপুল উল্লাসে। গতকাল বিশ্বকাপ ফুটবল শেষ হয়েছে, আজকে থেকে হয়তো অনেক অনলাইন এক্টিভিস্ট ফিলিস্তিনের পক্ষে কী-বোর্ড ধারণ করবেন, তারা আর ফুটবল নিয়ে মেতে থাকবেননা, তারা ভালো হয়ে যাবেন। ভালো না হয়ে উপায় আছে! বিশ্বকাপতো শেষ হয়ে গেছে।
সময় হয়েছে আত্মপর্যালোচনার, আমরা যে নিজেদের মুসলিম দাবী করি, আমরা যে নিজদের ইসলামী আন্দোলনের কর্মী দাবী করি, আমরা যে নিজেদেরকে রাসূলের সৈনিক দাবী করি, আমরা আমাদের দাবীতে কতটা সৎ?
লেখাঃ পথভ্রষ্ট জাতি
© শামীম রেজা
১৪/০৭/২০১৪
ঠিক একই মূহুর্তে ফিলিস্তিনের জীর্ণ কুটিরে অভুক্ত পিতৃহীন শিশু ভয়ে আতঙ্কে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে জানতে চাইছে “মা, আজকে রাতেই কি আমরা মরে যাবো?” ইসরাইলি বিমান থেকে ফেলা হচ্ছে ফসফসার বোমা, গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বাড়িঘর। হাসপাতাল খালি করে দেয়ার নোটিশ জারি করা হয়েছে, নইলে বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া হবে। চিকিৎসা নিতে দেয়া হবেনা আহত-মূমুর্ষু ফিলিস্তিনিদের। বর্বর ইহুদীরা পাহাড়ের উপর চেয়ার পেতে বসে ইসরাইলি বিমানের বর্বর বোমা হামলার ফলে প্রজ্বলিত আগুনের দৃশ্য উপভোগ করছে।
যে ছেলেগুলো আর্জেন্টিনা কিংবা জার্মানির জন্য এতো বিশাল বিপুল আয়োজন করেছে সেই ছেলেগুলো মুসলিম, আবার যে শিশুগুলো ফিলিস্তিনে নিহত হচ্ছে সেই পরিবারটিও মুসলিম। যে ছোট্ট শিশুটি ইসরাইলের বিমানের গর্জন শুনে ভয়ে আতঙ্কে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরছে সেই শিশুটিও মুসলিম।
এক আহত ফিলিস্তিনি শিশুর কথা শুনেছিলাম যে কান্নারত অবস্থায় বলছিলো “আমি আল্লাহকে সব বলে দিবো”। এই শিশুটি যদি সত্যি সত্যিই আল্লাহকে সব কিছু বলে দেয়, তবে সে কি বলবে? ইহুদীদের বর্বরতার বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে অভিযোগ জানাবে?
আমারতো তা মনে হয়না, আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি এই শিশুটি তার প্রভুর নিকট যখন অভিযোগ জানাবে তখন বলবে, “হে রহমানুর রহিম, যখন ইসরাইলি সৈন্যরা আমাদের উপর বোমা নিক্ষপ করছিলো, যখন তারা আমাদের বাড়িগুলো গুড়িয়ে দিচ্ছিলো, যখন তারা আমাদেরকে হত্যা করছিলো, ঠিক তখনি বিশ্বের অপর প্রান্তে আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা বিশ্বকাপ খেলার উন্মাদনায় মেতে ছিল, তারা ঢোল-বাদ্য সহকারে বিরানীর উৎসব করছিলো, তুমি এর বিচার করো মাবুদ”!
যে চল্লিশ হাজার টাকা ব্যয় করে বিরানীর উৎসব করা হোল, যে গরুটি জবাই করে ঢোল পিটিয়ে সাময়ীক উত্তেজনায় একটি রাত পার করা হলো সে টাকা দিয়ে একটি মুসলিম পরিবারের দারিদ্র বিমোচন করা সম্ভব হতো।
একটি অভাবী পরিবারকে রিক্সা কিনে দেয়া যেতো, একজন নারীকে সেলাই মেশিন কিনে দেয়া যেতো। অথবা সেই গরুটি কোন একটি দরিদ্র পরিবারের দারিদ্র বিমোচনের অবলম্বন হতে পারতো।
এক ব্যক্তি বলছিলো, আমি ঘুষ খাইনা, আসলে তাকে ঘুষ দেয়াই হয়না সে খাবে কি করে। জঙ্গলে গিয়ে বৈরাগী জীবন যাপন করে নফসকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ। কিন্তু লোকালয়ে পাপাচারে পরিপূর্ণ সমাজে বসবাস করেও নফসকে নিয়ন্ত্রণ করাই হচ্ছে তাকওয়ার পরিচয়।
ফুটবল বিশ্বকাপ ঝড়ে আক্রান্ত জাতি নিজের ভাই হত্যার সময়েও মেতে ছিল বিপুল উল্লাসে। গতকাল বিশ্বকাপ ফুটবল শেষ হয়েছে, আজকে থেকে হয়তো অনেক অনলাইন এক্টিভিস্ট ফিলিস্তিনের পক্ষে কী-বোর্ড ধারণ করবেন, তারা আর ফুটবল নিয়ে মেতে থাকবেননা, তারা ভালো হয়ে যাবেন। ভালো না হয়ে উপায় আছে! বিশ্বকাপতো শেষ হয়ে গেছে।
সময় হয়েছে আত্মপর্যালোচনার, আমরা যে নিজেদের মুসলিম দাবী করি, আমরা যে নিজদের ইসলামী আন্দোলনের কর্মী দাবী করি, আমরা যে নিজেদেরকে রাসূলের সৈনিক দাবী করি, আমরা আমাদের দাবীতে কতটা সৎ?
লেখাঃ পথভ্রষ্ট জাতি
© শামীম রেজা
১৪/০৭/২০১৪
No comments:
Post a Comment