ঈদ ভ্রমণ এবং হাবিজাবি

গ্রামের পুকুরে ব্যাপক ডুবাডুবি এবং প্রচুর আত্নীয়দের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার মাধ্যমে সমাপ্ত হলো এবারের ঈদের আনন্দ। প্রতিবারের মতো এবারেও ঈদ উপলক্ষে কুমিল্লা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, বরিশাল মোট চারটি জেলায় ছিলো বাধ্যতামূলক ঈদ সফর।

ঈদ শেষ কিন্তু বেড়ানো শেষ হয়নি, ফিরে যাবো চট্টগ্রাম। ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাপক খারাপ হওয়া সত্ত্বেও সকল কষ্ট ভুলে যাই যখন পদ্মাপাড়ে মাওয়া ঘাটে কড়কড়ে ইলিশ মাছ ভাজার সাথে শুকনো মরিচ ভাজার চমৎকার ঘ্রাণ ভেসে আসে। জিভের পানি আর সামলানো যায়না।
অথচ এবার আর মাওয়া লঞ্চ পারাপারে ইলিশ মাছ খাওয়া যাবেনা। অন্তত পক্ষে লঞ্চ ডুবিতে মারা যাওয়া মানুষের পচা গলা মৃতদেহ যে মাছের পেটে গিয়েছে সে মাছ মুখে দেয়া সম্ভব নয়।

বিগত অবৈধ নির্বাচনের পূর্ববর্তী বৈধ নির্বাচনে এই এলাকার জনগণ ব্যাপক হারে আওয়ামীলীগকে ভোট দিয়েছিলো একটাই আশা নিয়ে, সেটি হচ্ছে পদ্মা নদীতে ব্রিজ হবে। দক্ষিণাঞ্চলের জনগণ ৫-৭মিনিটে পদ্মা নদী পারি দিবে।
জনগণের আশা আকাঙ্খাকে আরো উস্কে দিয়েছিলো শুধু মাত্র মাদারীপুর থেকেই গুরুত্বপূর্ণ দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয় ‘যোগাযোগ’ এবং ‘নৌ পরিবহন’ মন্ত্রিত্ব প্রদান করার কারণে। আর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীতো গোপালী মেয়ে।

কথায় আছে, অতি আশা করোনা, আশা ভেঙে যাবে। এই অঞ্চলের মানুষের মোহ ভঙ্গ হয়েছে, চোর ডাকাতদের মানুষ চিনতে সক্ষম হয়েছে। সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী আবুল হোসেনের এলাকায় যেখানে মানুষে চোখ বন্ধ করে নৌকায় ভোট দেয়, সেখানে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দ্বিগুণ ভোটে নির্বাচিত হয়েছে জামায়াত প্রার্থি। অথচ এই এলাকায় হারিকেন জ্বালিয়ে খোঁজা খুঁজি করলেও সব মিলিয়ে হাজার তিনেক জামায়াত-শিবির কর্মী পাওয়া যাবেনা। জনমত উল্টে গেছে, আওয়ামীলীগের বিকল্প হিসেবে মানুষ জামায়াতকে বেছে নিয়েছে। যদিও বিজয়ী হওয়ার পরেও জামায়াত পদটি ধরে রাখতে পারেনাই আওয়ামীলীগের পেশি শক্তির কারণে, চূড়ান্ত ফলাফল ঘোশণার সময় জামায়াত প্রার্থির হাত-পা বেঁধে মারধর করে ফলাফল ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। তারা বলাবলি করছিলো, “জামায়াতের লোক হয়ে নির্বাচন করার এতো খায়েশ কেনো?!” কিন্তু মানুষের মাঝে যে নিরব বিপ্লব ঘটে গেছে সেটা কিভাবে অস্বীকার করা যাবে?

আব্বা চরম মাত্রার আওয়ামী সাপোর্টার, আমি তার রাজাকার পুত্র। নবম শ্রেণী পড়ুয়া ছোট ভাই আব্বার মতোই কট্টর আওয়ামীলীগ সমর্থক। রাজনৈতিক বিতর্কের সময় যদি আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে কিছু বলা হয় তবে ছোট ভাই লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করে। আমার এক দূর সম্পর্কের খালা ছিলেন, তার সামনে বসে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে কিছু বলা হলে খালার চোখের পানি শামলানো মুশকিল হয়ে যেতো। সেই খালার আব্বা মানে আমার নানা আওয়ামীলীগ ছেড়ে এখন এক্টিভ জামায়াত সমর্থক আলহামদুলিল্লাহ। আশা করা যাচ্ছে পুরো পরিবারটিই একসময় জামায়াত সমর্থকে রুপান্তরিত হবে, ইনশাআল্লাহ।

এবারে ঈদে বাড়ি আসার সময় আমার লেখা কারাগারের দিনগুলো বইটি নিয়ে এসেছিলাম। ছোট ভাই দেখলাম খুটিয়ে খুটিয়ে বইটি পড়ছে।
কথা হচ্ছিলো, স্টার জলসা চ্যানেল বন্ধ, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বিনা শুল্কে ভারতের পণ্যবাহী নৌ যান চলাচল এবং সম্প্রচার নীতিমালার ব্যাপারে। ছোট ভাই বিপ্লবী ভঙ্গিতে বলে উঠলো “আওয়ামীলীগের কাছ থেকে এর চাইতে ভালো কিছু আশা করা যায়না”।
ছোট ভাইয়ের মুখে এই কথা শুনে আমি হতভম্ব! কিছুই বলছিলামনা।
ছোট বোন বললো, তারপরেওতো তুই আওয়ামীলীগ সমর্থন করস।
ছোট ভাই বললো, আগে করতাম এখন করিনা।
ছোট বোন আবার বললো, তাহলে কি করস?
ছোট ভাইয়ের স্পষ্ট জবাব, “শিবির করি!”

লেখাঃ ঈদ ভ্রমণ এবং হাবিজাবি
© শামীম রেজা
০৯/০৮/২০১৪

Post Comment

No comments:

Post a Comment