শেকল ছেড়ার গান।

বেশ কয়েকদিন ধরে বিশ্বব্যাপী জিহাদী সংগঠনগুলোর তৎপরতা সম্পর্কে ব্যাপকভাবে খোঁজ খবর নিলাম। এখনো নিচ্ছি এবং ইসলামী বিপ্লবের সঠিক পথ অনুসন্ধানের এই প্রচেষ্টা আমৃত্যু চলবে ইনশাআল্লাহ।

সার্কাসের হাতির গল্প পড়েছিলাম, একটি বাচ্চা হাতিকে জঙ্গল হতে ধরে এনে শক্ত মজবুত খুটির সাথে বেঁধে রাখা হয়। বন্য হাতি বার বার ছুটে যেতে চায় নারীর টানে,মায়ের কাছে। কিন্তু তার এই দূর্বল দেহের সেই শক্তি নেই বৃত্তের বাইরে যাবে। হাতি রক্তাক্ত হয়, পরিশ্রান্ত হয়, হতাশ হয় এবং এক পর্যায়ে এটাকেই সে নিয়তী মেনে নেয়। বৃত্তের বাইরে যাওয়া কখনোই সম্ভব নয়।
একদিন হাতি বড় হয়, শরীরে ধারণ করে প্রচণ্ড শক্তি, হাতি চাইলেই ভেঙে ফেলতে পারে লোহার শিকল, বেঁধে রাখার খুঁটি। কিন্তু হাতি কিছুই করেনা, হাতি জানেইনা তার শরীরে প্রচন্ড শক্তির কথা। হাতি ধরে নেয়, সেই লোহার শিকল ছেড়ার ক্ষমতা তার নেই, শুধু শুধু রক্তাক্ত হয়ে লাভ কি? হাতি বেছে নেয় গোলামীর জীবন, দাসত্বের জীবন।

আরবের ধূ ধূ মরুভূমীর বর্বর, অসভ্য সমাজে জন্ম নিয়েছিলেন রাসূল (সঃ)। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ইসলাম সে অসভ্য সমাজকে সোনায় পরিণত করে দিলো। তৎকালীন বিশ্বের দু’দুটো পরাশক্তিকে কাবু করে মুসলমানরা এগিয়ে চললো বীরের বেশে, তারপরে আর মুসলমানদের পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নাই। অভ্যন্তরীন কিছু দ্বন্ধ সংঘাত বাদ দিলে মুসলমানরা ছিলো অদম্য, অপরাজেয় বীর। মুসলমান সেনাদের ঘোড়ার খুঁড়ের আওয়াজ শুনলেই প্রতিপক্ষের সেনারা অস্ত্রে ফেলেই রণাঙ্গন থেকে পালাতো। এভাবেই মাত্র ১৭জন সৈন্য নিয়ে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি জয় করলেন বাংলা। লক্ষণ সেন পালিয়ে গেলো পেছনের দরজা দিয়ে।

এরপরের ইতিহাস অত্যান্ত করুন, ইসলাম ত্যাগী ভোগ বিলাসে মত্ত মুসলমানদের একের পর এক পরাজয়ের ইতিহাস। সূদূর স্পেন, বাংলা থেকে শুরু করে তুরস্কের শেষ খিলাফতের পতন সবই মুসলমানদের মার খাওয়ার ইতিহাস। সার্কাসের হাতির বাচ্চার মতো রক্তাক্ত হওয়ার ইতিহাস, পরাজয়ের ইতিহাস।
পরাজিত মুসলমানদের ইসলাম শেখানোর দায়িত্ব নিলো খৃস্টানরা, মুসলমানদের পাঠ্যসূচী থেকে বাদ দেয়া হলো জিহাদ।
ক্ষুদ্র শক্তি নিয়ে মুসলমানরা বার বার ঝাপিয়ে পড়ে জিহাদের ময়দানে, ফিরে পেতে চায় হারানো গৌরব, মর্যাদা। আর ইহুদী-খৃস্টানদের সম্মিলিত শক্তি সেই জিহাদীদের ধরে ধরে প্রচন্ড শক্তিতে মারে, মুসলমান মার খায়, ক্ষুদ্র শক্তিতে সে মার প্রতিহত করার শক্তি মুসলমানদের নেই। এভাবেই একে একে মুখ থুবড়ে পরে তিতুমির, সৈয়দ আহমদ সহ অসংখ্য অগনিত মুসলিম মুজাহিদ।
মুসলমান এক সময় হতদ্যম হয়, সার্কাসের হাতি হয়, নিরবে মুখ বুজে হজম করে গোলামী বদ্ধ জীবন, শৃঙ্খল বদ্ধ জীবন।

মুসলমানদের ভূমিগুলোকে বানানো হয় জেলখানা, বিশাল ইসলামী সাম্রাজের মধ্যে তৈরী করা অসংখ্য দেয়াল, সেই দেয়াল পাহাড়া দেয়ার জন্য তৈরী করা হয় জাতি রাষ্ট্র, সীমান্তরক্ষী, ইসলামী খিলাফতকে করা হয় ছিন্ন ভিন্ন।
জিহাদের নাম দেয়া হয় সন্ত্রাসবাদ, যারাই সন্ত্রাসী তাদের ধরে ধরে ফাঁসি দেয়া হয়, জেল দণ্ড দেয়া হয়। মুসলমানরা মুখ বুজে পড়ে থাকে, স্বপ্ন দেখে একদিন আসবে স্বাধীনতা, একদিন ফিরে পাবো হারানো গৌরব। একদিন কায়েম হবে খিলাফত।
কপাল পোড়া মুসলমান! “খিলাফত” শব্দটা মুখ ফুটে বলতেও পারেনা, বললেই ধরে ধরে পাঠিয়ে দেয়া হয় কারাগারে। বলতে হয় ইসলামী কল্যান রাষ্ট্র, ইসলামী গণরাষ্ট্র।

শেকল ছেড়া এতো সহজ নয়, সে জন্য প্রয়োজন প্রচন্ড মানসিক শক্তি, ঈমানী শক্তি। মুসলমানরা প্রথমেই হারিয়েছে তাদের ঈমানী শক্তি, তারপরে রাজনৈতিক শক্তি, তারপরে হারিয়েছে স্বাধীনতা।
সেদিন ইউটিউবে একটা ভিডিও দেখলাম, “চ্যানেল ফোর” নির্মিত একটি ডকুমেন্টারী। ডকুমেন্টারীতে দেখানো হয়েছে সোমালিয়ার ৬০%এর বেশি ভূমিতে ইসলামী শরীয়া প্রতিষ্ঠাকারী জিহাদী সংগঠন আল-শাবাবের কার্যক্রমের উপর। আল শাবাবের সেই ট্রেনিং ক্যাম্পে হাজির হয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জিহাদ পাগল মুসলমানরা, তাদের চোখে একটাই স্বপ্ন সেটা হচ্ছে ‘ইসলামী খিলাফত’। আল শাবাবের পুলিশ বাহিনী নামাজের টাইমে সবাইকে মসজিদে পাঠিয়ে দিচ্ছে, গাড়ি থামিয়ে দিচ্ছে, এবং সাধারণ মুসলমানরা বলছে আমরা শান্তিতে আছি, আমরা নির্ভয়ে আছি।

সিরিয়াতে জিহাদ হচ্ছে, ইরাকে জিহাদ হচ্ছে, ইরাক এবং সিরিয়ার বিশাল এলাকা দখল করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শরীয়া আইন। পাশ্চাত্যের একপেশে মিডিয়ার ফিল্টারের ফাঁক ফোকর দিয়ে যতটুকু জানা যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জিহাদ প্রেমি মুসলিমরা তাদের স্ত্রী-শিশু সন্তান নিয়ে হাজির হচ্ছেন জিহাদের ময়দানে, ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,বৈমানিক, সবাই।

আমি হতভম্ভ হয়েছি, অবাক হয়েছি, এটা কিভাবে সম্ভব?! যুদ্ধের সেই বিভিষীকার মধ্যে নিজের স্ত্রী সন্তানকে অনিশ্চিত জীবনের সামনে ফেলে কিভাবে সম্ভব তাগুদের বিরুদ্ধে লড়াই করা!
সাথে সাথেই পেয়ে গেছি জবাব, মুজাহিদরা দুনিয়ার জিন্দেগীকে মশার ডানার সমান মূল্যও দেয়না, মুজাহিদের অন্তিম ইচ্ছে হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি, শাহাদাতের মাধ্যমে জান্নাত!

দুনিয়াবী আরাম, আয়েশ, ভোগ, বিলাস পূর্ণ জীবন পরিহার করে বিশ্বব্যাপী অখন্ড ইসলামী খিলাফতের স্বপ্ন দেখা এই মুজাহিদের প্রতি রইলো সশ্রুদ্ধ সালাম।
গোলামীর শেকল ছেড়ার স্বপ্ন দ্রষ্টা গ্লোবাল জিহাদের এক অংশের নেতা মোল্লা ওমর এবং অন্য অংশের নেতা আবু বকর বাগদাদীর এই প্রচেস্টাকে আল্লাহ কবুল করে নিন। আমিন।

লেখাঃ শেকল ছেড়ার গান।
© শামীম রেজা
২৭/০৬/২০১৪

Post Comment

No comments:

Post a Comment