ভারতীয় পোশাক

বড় আপাকে নিয়ে শপিংয়ে গিয়েছিলাম, ইচ্ছে বাড়ির সবার জন্য কিছু কেনাকাটা করা। কাপড়-চোপড় পছন্দ করার দায়িত্ব বড় আপার দিকে ঠেলে দিলেও ছোট বোনের থ্রি-পিচ চয়েজ করার দায়িত্ব দেয়া হলো আমাকে। চমৎকার দেখে দুটো থ্রি-পিচ নিলাম, একটা সুতি এবং আরেকটা জর্জেটের। দারুণ সব কারুকাজ, এসব থ্রি-পিচ এর আবার ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে, আমি যে দুটো কিনেছি সেগুলোরও কি কি যেনো নাম বললো ভুলে গেছি, পামেলা কিংবা এজাতীয় কিছু। জিনিস সুন্দর, দামটাও অনেক সুন্দর এবং সেটা সৌন্দর্যের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলো।

বাড়িতে যাওয়ার পরে সবার ঈদের ড্রেস দেখা দেখি নিয়ে তুমুল হৈ চৈ। কাজিনেরা বলাবলি করছিলো ছোট আপুর জন্য পাখি ড্রেস আনছে, অনেক সুন্দর!
আমি চেচিয়ে উঠলাম, আরেনা! ওইসব পাখি ড্রেস আমি কিনিনা, এটার অন্য নাম আছে পামেলা নাকি কি একটা নাম, তবে পাখিনা।
শুরু হয়ে গেলো বিতর্ক! আপনি পোলা মানুষ পাখি ড্রেসের কি বুঝেন। অমুক সিরিয়ালে এটা পাখি পড়েছিলো।
আমি যতই না না করি ওরা ততই চেপে ধরে। শেষ-মেশ পোশাকের ক্যাটালগের ছবি হাতে ধরিয়ে দেয়া হলো, ‘দেখছেন, পাখির গায়ে এই জামা!’
মডেলের ছবির দিকে তাকিয়ে বললাম, এই মেয়েটার নাম পাখি!!
হ্যা, অমুক সিরিয়ালের নায়িকা পাখি। পাখির গায়ে যতগুলো থ্রি-পিচ ছিলো সবগুলোই পাখি ড্রেস!
পাখির কথা শুনে আমার আখি লাল হয়ে গেলো।

ছোট বোনের বিয়ে হয়েছে বেশ কয়েকমাস হলো, ঈদ উপলক্ষে শশুর মশায় নতুন বউয়ের জন্য বহু টাকা খরচ করে দামি শাড়ি পাঠিয়েছেন। মা-চাচিরা শাড়ি দেখছিলেন আর গাল-গপ্প করছিলেন, এই শাড়িটা অনু পড়েছিলো, অনেক সুন্দর হইছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আলোচনার মাঝখানে আমি বামহাত ঢুকিয়ে দিলাম, অনু কে? বাড়ি কোম্মে?
চাচিতো হাসিতে গড়াগড়ি খায় অবস্থা! হাসতে হাসতেই বললেন, অনুদের বাড়ি ভারতে। পুরো মখা হয়ে গেলাম, তাহলে আপনি অনুকে চিনেন কি করে? পুরাই টাস্কি খাওয়ার যোগার, অনু হচ্ছে ভারতীয় সিরিয়ালের নায়িকা।

নাহ! মেজাজটা আর ঠিক রাখা সম্ভব হলোনা, মেজাজ খারাপ হয়েছে এদেশের গার্মেন্টস মালিকদের উপরে। আমাদের রক্তের সাথে মিশে আছে গোলামির মানসিকতা। আমরা ভিন্ন দেশের পোশাকের অর্ডার নিয়ে দর্জিগীরি করি। নিজস্ব উদ্ভাবনী কিংবা নিজস্ব প্রোডাক্ট নিয়ে বাজারে আসার মুরোদ আমাদের নেই। আজীবন শুধু অপরের গোলামীই করে গেলাম।

ঈদ পূজা উপলক্ষে কেনো আমাদের শক্তিশালী নিজস্ব প্রডাক্ট থাকবেনা? ঈদ উপলক্ষে সারাবছর ধরে ভারত যেসব পোশাক তৈরী করে সেই একই পোশাক আরো কম খরচে আমরা উৎপাদন করতে পারিনা? আমাদেরকেতো আর আমদানি শুল্ক দিতে হবেনা, সেই দিক থেকেতো আমরা ভালো অবস্থানে আছি। একটা ঈদে, শুধুমাত্র একটা ঈদে যদি আমরা ভারতীয় পোশাককে মার খাওয়াতে পারি, তাহলে পরের বছর তারা আর বাংলাদেশ মুখী হওয়ার সাহস করবেনা। আমাদের নিজস্ব ডিজাইনাররাই তৈরী করবে দারুণ সব দেশীয় ধর্মীয় ঐতিহ্য সমৃদ্ধ পোশাক।
গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিকেরা, আপনারা কচু গাছে গলায় রশি বেধে ঝুলে পড়েন।

পাখি থ্রি-পিচ কিংবা অনু শাড়ি নিয়ে যখন মেজাজ পুরাটাই খারাপ ঠিক তখনই এক কাজিন প্রশ্ন করলো, ভাইয়া ঈদে আপনি কি কিনছেন? মুচকি হেসে জবাব দিলাম, পাখি লুঙ্গি কিনছি!

লেখাঃ ভারতীয় পোশাক
© শামীম রেজা
২৮/০৭/২০১৪

Post Comment

No comments:

Post a Comment