আল কায়দা আসছে।

এক।
শেষ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম ধরে রাখা গেলোনা, হাত ছাড়া হয়ে যাওয়ার আশংকা কক্সবাজার। দূর্দান্ত বেগে এগিয়ে আসছে আল কায়দার সৈন্যরা। ইতোমধ্যেই ভারতের আসাম, ত্রিপুরা এবং গুজরাটে শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে গ্লোবাল জিহাদ আলকায়দার ভারতীয় শাখা। মুক্তিকামী হাজারো তরুণ জড়ো হচ্ছে আলকায়দার ছায়াতলে। চোখে মুখে স্বপ্ন, খিলাফত! একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী বিপ্লব!

ঢাকার বেশ কয়েকটি স্পটে বোমা বিস্ফোরণের শব্দে শোনা গেছে। আত্মঘাতি হামলায় প্রাণ হারিয়েছে তাগুত বাংলাদেশ সরকারের ডজন খানেক সেনা সদস্য ও বেশ কিছু সাধারণ মানুষ, আহতের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। কারো হাত নেই, কারো মাথা উড়ে গেছে, রক্তাক্ত বিচ্ছিন্ন পা নিয়ে চিৎকার করছে মানুষ!

দফায় দফায় বৈঠক করছে সেনাবাহিনীর উর্ধতন অফিসাররা, সর্বশক্তি নিয়োগ করেও ঠেকানো যাচ্ছেনা আল কায়দার অগ্রযাত্রা।
যারা মৃত্যুকে ভয় পায় তাদেরকে থামানো যায়, কিন্তু যারা মৃত্যুর মাঝেই খুঁজে ফেরে জীবনের চরম স্বার্থকতা সেই বাহিনীকে পরাজিত করে সাধ্য কার?!

পার্বত্যাঞ্চলে শরীয়া আইন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, তাগুত সরকারের সহযোগী দল জমিয়তে ইসলামিয়্যাহ খাগড়াছড়ি শাখার আমিরকে সুযোগ দেয়া হয়েছিলো তওবা করে আল কায়দায় জয়েন করার জন্য। কিন্তু গোয়ার লোকটা আলকায়দায় শরীক হতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলো।
চৌরাস্তার মোড়ে তার লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন মাথাটা রেখে দেয়া হয়েছে পায়ের কাছে।

দুই।
দেশ বিদেশের বিপুল সংখ্যক অপেক্ষমান সাংবাদিক বঙ্গভবনের বাহিরে। রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলছে, বৈঠকে উপস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম ফগ, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তারেক জিয়াদ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ এবং ক্ষমতাসীন দলের শরীক জামিয়্যতে ইসলামিয়্যাহর আমির শফিকুল ইসলাম।

একে একে তার দাবী উত্থাপন করলেন মিঃ ফগ। আমাদের তেমন কোনো চাহিদা নেই, শুধু সেন্ট মার্টিনে একটা নৌ ঘাটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি স্বাধীন খৃস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিলেই তোমরা চিন্তা মুক্ত। বাকি কাজ আমরাই করবো, আল কায়দা নিয়ে তোমাদেরকে আর ভাবতে হবেনা।

ইম্পসিবল! প্রায় একসাথেই টেবিলের উপর সশব্দে থাবা বসিয়ে দিলেন তিন বাহিনীর প্রধানগণ। বাংলাদেশের একজন দেশপ্রেমিক সেনাসদস্যর প্রাণ থাকতে এই ভূখন্ডের এক ইঞ্চি মাটি কারো কাছে ছেড়ে দেয়া হবেনা।

অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন উইলিয়াম ফগ। “তোমরা বোধ হয় ইরাক, লিবিয়ার পরিণতি থেকে শিক্ষা নাও নাই। সিরিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখো! আমেরিকার হাতে যাদু আছে, আমেরিকা যেখানে হাত দিবে সেখানেই ইরাক-সিরিয়া সৃষ্টি হবে। তোমরা কি প্রস্তর যুগে ফিরে যেতে চাও? আমাদের কথা মেনে না নেয়া হলে এই ভূখন্ডকে আমরা মাটির সাথে মিশিয়ে দিবো।
ঠিক এই সময়টার জন্য আমরা বহুদিন ধরে অপেক্ষা করছি, তোমাদের ক্ষমতায় বসিয়েছি...”

প্রতিবাদে ফেটে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী তারেক জিয়াদ, মিথ্যে কথা! এদেশের জনগণই আমাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে।

হ্যা সেটা ঠিক, এদেশের জনগণই তোমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। কিন্তু সেই ভোট দেয়ার সুযোগ আমরাই তাদেরকে করে দিয়েছি। তোমরা ভুলে যাচ্ছো কেনো? পূর্ববর্তী আওয়ামী পার্টির সরকার এদেশের পুলিশ, সামরিক বাহিনী, সচিবালয় এমনকি আদালতে পর্যন্ত ভারতের এজেন্টদেরকে বসিয়েছিলো। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের কংগ্রেস সরকারের সহায়তায় এদেশে নির্মমতম গণহত্যা সংঘঠিত করেছিলো। আর তুমিতো লন্ডনে পালিয়ে গিয়েছিলে, ফগের ঠোটে বিদ্রুপের হাসি। আমরাই সেই বিভীষিকাময় পরিস্থিতি থেকে তোমাদের মুক্তি দিয়েছি। ভারতে কংগ্রেসের পতন ঘটিয়েছি, তোমাদের সামরিক বাহিনীতে প্রেসার ক্রিয়েট করে ভারতপন্থীদের হটিয়ে দিয়েছি এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছি।

কিন্তু একথাওতো ঠিক, আওয়ামী পার্টিকে ক্ষমতায় বসানো এবং বাংলাদেশের প্রশাসনকে ভারতীয় করনের ক্ষেত্রেও আপনাদের ইন্ধন ছিলো। আপনারা কাটা দিয়ে কাটা তুলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কন্ঠে ক্ষোভ ঝড়ে পড়লো।

ইউ আর রাইট, কাটা দিয়ে কাটা তোলার ব্যাপারটা ঠিক ধরেছো। এই ব্যাপারটা যেহেতু ধরতে পেরেছো, সেহেতু বুঝতেই পারছো আমরা আমাদের দুটো দাবি যেভাবেই হোক আদায় করে নিবো। একটা ব্যাপার ভেবে দেখো, এখন পর্যন্ত আমরা তোমাদেরকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যহত রেখেছি, এটা বন্ধ হয়ে গেলে দেশটা আল কায়দার হাতে চলে যাবে। এবার তোমরাই সিদ্ধান্ত নাও কি করবে।

কিন্তু আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে আপনারা গোপনে আল কায়দার কাছেও স্বল্প মূল্যে অস্ত্র বিক্রি করছেন। আপনাদের দাবী আদায়ের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আল কায়দাকে পাঠিয়েছেন, এখন ফায়দা লুটার চেষ্টা করছেন।

তোমার অভিযোগ আংশিক সত্য, হ্যা আমরা ব্লাক মার্কেটে আল কায়দাকে অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত রেখেছি। আর তুমি যেটা বললে আমরা আল কায়দাকে দক্ষিণ এশিয়াতে পাঠিয়েছি এটা ভুল। আল কায়দা নিজের গরজেই এখানে এসেছে, আমরা শুধু আসার পরিবেশটা সুগম করে দিয়েছি।
এটাকে তুমি ইঁদুর বিড়াল খেলা ভাবতে পারো।
আমাদের যেখানে প্রয়োজন হয় সেখানে আল কায়দার যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেই। আমরা ব্লাক মার্কেটে তাদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করি, এবং প্রকাশ্যে তাদের সাথে যুদ্ধ করি। ঠিক এখন যেমন সিরিয়াতে আইএস এবং নুসরাকে যুদ্ধের পরিবেশ দিয়েছি কিন্তু ইরাকে তাদের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছি।

আমরা যদি আপনাদের দাবী মেনে না নেই? তারেক জিয়াদের কন্ঠে হতাশার সুর।

দাবী আপনাকে মানতেই হবে, আপনি বয়সে তরুন মিস্টার প্রধানমন্ত্রী। আপনি নিশ্চই এতো অল্প বয়সে মরতে চাননা, এখনো সামনে গোটা জীবন পরে আছে।
আমরা ব্লাক মার্কেটে আল কায়দাকে বিপুল পরিমাণে শক্তিশালী অস্ত্র সরবরাহ করবো। তারা একের পর এক শহর দখল করে রাজধানীতে পৌছে যাবে। আপনাদের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদদের হত্যা করে রাস্তার মোড়ে মোড়ে লাশ ঝুলিয়ে রাখবে।
তারপরে জঙ্গিবাদ দমন এবং আপনাদেরকে হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশে হামলা চালাবো। আলকায়দাকে দমন করবো, আমাদের সেনাবাহিনী দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসরাইলের আদলে একটি খৃস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবো এবং সেন্টমার্টিনে একটি নৌঘাটি স্থাপন করবো। আর বোনাস হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে আমাদের একটি সামরিক ঘাটি স্থাপন করবো।

চেঁচিয়ে উঠলেন জমিয়তে ইসলামিয়্যাহর আমির জনাব শফিকুল ইসলাম, আপনাদের সেই স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করতে দিবোনা। আল কায়দার নেতৃবৃন্দের সাথে আমরা আলোচনায় বসবো, আমাদের এই ভাতৃঘাতি সংঘর্ষ বন্ধ করে আমরা সমঝোতায় আসবো।

ফিক করে হেসে ফেললেন মিঃ উইলিয়াম, তাগুতের সাথে আলকায়দা আলোচনায় বসবেনা। মুরতাদ সরকার এবং তাদের শরীক তাগুত জামিয়তে ইসলামিয়্যাহর বিরুদ্ধে আল কায়দার জিহাদ অব্যাহত থাকবে, আমরা সেই ব্যবস্থাই করে দিবো।

তিন।
মিস্টার ফগকে ঘিরে ধরলেন বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক। আলোচনায় কি কি বিষয় উঠে এসেছে, কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন।
উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মিস্টার ফগ ঘোষণা দিলেন, অত্যান্ত আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকার যৌথভাবে কাজ করবে।

চার
আলকায়দা আগের চাইতেও দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে, শক্তিশালী অস্ত্রের মাধ্যমে গুড়িয়ে দিচ্ছে মুরতাদ সরকারী বাহিনীর সমস্ত প্রতিরোধ। জামিয়তে ইসলামিয়্যাহর পক্ষ থেকে আলোচনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিলো। আল কায়দা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে, তাগুতের সাথে আলোচনা হবে দুইটা শর্তে, হয় আত্মসমর্পন করো, নয়তো পালিয়ে যাও।

ইতোমধ্যেই যুদ্ধ নিহত হয়েছ লক্ষাধিক সাধারণ মানুষ, ঘর বাড়ি ব্যবসা হারিয়ে পথে বসেছে প্রায় অর্ধকোটি মুসলিম। একের পর এক রকেট এসে ধ্বসিয়ে দিচ্ছে নগরীর বহুতল ভবনগুলো। মরছে নারী, মরছে শিশু। পথের ধারে না খেতে পেয়ে ধুকে ধুকে মরছে বৃদ্ধ এবং পঙ্গুরা, খিলাফতের আগমনে প্রাণ ভয়ে দ্রুত পালাতে গিয়ে স্বজনরা তাদের ফেলে গেছে।

অনলাইনে ব্যাপকভাবে শেয়ার হচ্ছে একটি ভিডিও, তাগুত জমিয়তে ইসলামিয়্যাহর আমির শফিকুল ইসলামের কাটা মাথা নিয়ে উল্লাস করছে আলকায়দা জিহাদের মরণজয়ী মুজাহিদরা।
এক হাতে ঝুলছে আমেরিকার তৈরী শক্তিশালী ম্যানপ্যাড, অন্যহাতে শফিকের কাটা মাথা।
উল্লাসিত মুজাহিদদের কন্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে, আল্লাহু আকবর। আল্লাহু আকবর।

গল্পঃ আল কায়দা আসছে।
© শামীম রেজা
০৬/০৯/২০১৪

Post Comment

No comments:

Post a Comment