মতি শপ

ফটোশপ, মতিশপ,
সুতা গুলো হয় সাপ।
মুসা যাবে পাহাড়ে,
হিমালয় আহারে!
ওই উঁচু চূড়াটা,
উঠবে সে পুরাটা।
চারিদিকে হীম শীত,
মুসা মিয়া গায় গীত।
ওরে ভাই মতিরে,
নাই কোনো গতিরে।
যদি আমি পড়ে যাই,
হুট করে মড়ে যাই?
মতি হাসে খ্যাক, খ্যাক!
দূরবীণ খুলে দ্যাখ।
দেখা যায় চূড়াটা?
হয়ে গেছে পুরাটা।
এইবার নেয়ে আয়।
ভয়ে মুসা জমে যায়,
রেকর্ডের হবে কি,
হেরে যাবো তবে কি?
মতি হাসে খ্যাক খ্যাক!
কত বোকা তুই দ্যাখ!
মতি আলো আছেনা?
চূড়া মতি পুছেনা!
তুই জয়ী বাঙালী,
আমি খ্যাতি কাঙালী।
মুসা মিয়া হয় হিট,
মতি শপ করে চিট!
একদিন নেপালে,
কোন এক কপালে,
লিস্ট করে জয়ীদের,
হিমালয় জয়ীদের।
মুসা কই? নাম নেই।
ভুয়া বীর, ঝড়ে যায়,
মতিশপ ধরা খায়।

কবিতাঃ মতি শপ
© শামীম রেজা
৩১/০৩/২০১৪

Post Comment

তোমার জন্য মরতে পারি

“তোমার জন্য মরতে পারি, ও সুন্দরী, তুমি গলার মালা”! শেষ পর্যন্ত ছেলেটি তলিয়ে গেলো হাতির ঝিলের পানির নিচে, আর মেয়েটি ঝুলে রইলো ব্রিজের রেলিং-এ।
সুন্দরী কিন্তু মরে নাই, ঠিকই দুইদিন পরে আরেকজনকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার করে যাবে।
কেনো ভাই, তুই মরতে গেলি? হাতির ঝিঁলের চাইতে কি বাসার পাশের ওই কাজী অফিসটা কাছে ছিলোনা? জীবন দেয়ার চাইতে বিয়ে করা কি সহজ ছিলোনা?।

বন্ধুর বন্ধু রাহাত, তুমুল প্রেম ছিলো সোনিয়ার সাথে, যাকে বলে গলায় গলায় প্রেম। আধুনিক প্রেমে যা হবার তাই হলো, সব কিছু লুটে নেয়ার পরে সোনিয়াকে এভোয়েড করা শুরু করলো রাহাত।
ছ্যাকা খাওয়া সোনিয়া এখন এর হাত ধরে, ওর হাত ধরে, কান্নাকাটি করে। আর রাহাত? বন্ধু মহলে বলে বেড়ায়, “আরে ধুর বাদ দে, আমি ওকে পাত্তাই দেইনা, ওইতো এতোদিন আমার পেছনে ঘুড় ঘুড় করছে! আমার পেছনে কত্ত মেয়ে ঘুড়ে!”

নিশাতের সাথে রায়হানের দারুণ প্রেম, নিশাতই হচ্ছে রায়হানের জানু। প্রেমে ব্যার্থ হয়ে একদিন জানুর জানটা বের করে দিলো রায়হান। কুপিয়ে হত্যা করলো, নিশাত এবং তার মাকে।
নিশাতের অপরাধ, রায়হানকে বাদ দিয়ে নিশাত নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছে! তাই এক কোপ, দুই কোপ, তিন কোপ, এভাবে ছয়টি কোপ। রায়হানের ভালোবাসা হচ্ছে ধারালো ছুড়ির ছয়টি কোপ, যেটা সে নিশাতকে দিয়ে এসেছে!
একটা মেয়ে বিয়ের পূর্বেই প্রেমিককে ফাঁকি দিয়ে নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছে, এর মানে হচ্ছে সেই মেয়েটির চারিত্রিক প্রব্লেম আছে।
এই মেয়েকে যদি বিয়ে করতো নিঃসন্দেহে বৈবাহিক জীবনে রায়হান অসুখী হতো। রায়হানেরতো খুশি হওয়া উচিৎ ছিলো যে, ঝামেলা মিটে গেছে, একটা বাজে মেয়ের হাত হতে আল্লাহ তাকে মুক্ত করেছেন।
কিন্তু রায়হান এটা কি করলো? আমরা কোন সমাজে বসবাস করছি? এই সমাজে ধারালো দায়ের কোপ দিয়ে নিজের ভালোবাসার গভীরতা প্রকাশ করা হয়! দায়ের কোপ যত গভীর হবে, ভালোবাসা ততটা গভীর!

হাইস্কুলের গন্ডি পেরোনোর পূর্বেই এখনকার বাচ্চারা মোবাইলে গুজুর গুজুর, ফুসুর ফাসুর শুরু করে দেয়। পার্কের চিপায় চাপায় ভালোবাসার প্রাসাদ নির্মান করে, বিশাল বিশাল সেই প্রাসাদ, আট তলা, দশ তলা, বারো তলা এভাবে বাড়তেই থাকে। তার পর একদিন ছেলের বাবা কিংবা মেয়ের বাবা যখন ছেলে-মেয়েকে ঘরে নিয়ে কানের দুই আঙুল নিচে কষে একটা চটকানা লাগিয়ে দেয়, তখন সেই ভালোবাসার প্রাসাদ ফাটা বেলুনের মতো চুপসে যায়।

টিভি মিডিয়ার কল্যানে আমাদের অনুভূতিগুলো ভোঁতা হয়ে গেছে। পরিণতি চিন্তা না করেই আমরা সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছি। সিনেমার গল্পের মতোই নায়ক নায়িকার সাথে ধাক্কা খেলো আর শুরু হয়ে গেলো গান, প্রেম হয়ে গেলো। অতঃপর ভিলেন হিসেবে নায়ক-নায়িকার বাবাদের আগমন এবং একটি দূর্ঘটনা। লোকাল বাসের পেছনে লেখা থাকে, "একটি দূর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না"

জাফর ইকবাল সাহেবদের থিওরী এপ্লাই করে আমরা যদি নাচতে ইচ্ছে হলে নাচি, গাইতে ইচ্ছে হলে গাই, এবং প্রেম করতে ইচ্ছে হলে প্রেম করি। তবে একসময় দেখা যাবে এভাবে মাঝে মধ্যে মরতে ইচ্ছে হলে, আমরা হাতির ঝিলে ঝাপ দিবো! আবার মারতে ইচ্ছে হলে, দায়ের কোপে প্রেমিকার প্রতি ভালোবাসার গভীরতা প্রকাশ করে আসবো।

আমাদের বোধহয় সচেতন হওয়ার সময় এসেছে, নয়তো আজ, আগামীকাল অথবা পরশু দিন, এই ইচ্ছে মাফিক কাজের খেসারত দিতে হবে, আপনার, আমার, সবার। বাল্য বিবাহ কিংবা অধিক বয়সে বিবাহ নয়, উপযুক্ত বয়সেই সন্তানের বিয়ে দিয়ে সমাজের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। সন্তানকে ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে মনুষত্ববোধ জাগ্রত করার দায়িত্ব আমাদেরই।

লেখাঃ তোমার জন্য মরতে পারি
© শামীম রেজা
২৯/০৩/২০১৪

Post Comment

প্রথম বই, প্রথম উচ্ছাস

কারাগারের দিনগুলো, প্রথম বই এবং প্রথম উচ্ছাস দু’টাই একসাথে। উচ্ছাস ফুরিয়ে যায়, কিন্তু বই ফুরায়না। বই হচ্ছে মানুষের আদি ও অকৃত্রিম বন্ধু। আর সেটা যদি হয় নিজের লেখা বই তাহলেতো কথাই নেই!

বই বের হবার পরে অসংখ্য অসংখ্য ভাই-বোনের ম্যাসেজ পেয়েছি। কেউ অভিনন্দন জানিয়েছেন, কেউ প্রশ্ন করেছেন কোথায় কিভাবে পাওয়া যাবে। আবার অনেকেই অভিযোগ জানিয়েছেন, দামটা একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে!
জিজ্ঞাসা করেছি, বই কিনেছেন?
সবার একই উত্তর, “আবার জিগায়! বেশি দাম দিয়েই কিনে ফেলেছি!”

আজকে হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নিলাম, বিক্রেতাদের সাথে কথা বলবো, চলে গেলাম বেশ কিছু বইয়ের দোকানে। জানতে চাইলাম বইয়ের হাল হকিকত!
বিক্রেতারা হাসি মুখেই জানালেন, প্রথম বই, নতুন লেখক, কিন্তু হিট বই!
প্রথম দফায় যে বইগুলো দিয়েছি সেগুলো শেষের পর্যায়ে, নতুন বই পাঠাতে অনুরোধ করলেন বিক্রেতারা।

প্রচ্ছদের কথা নাই বা বললাম, প্রচ্ছদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, বিক্রেতা,পাঠক,শুভাকাঙ্খী সবাই। কৃতজ্ঞতা Mirza Muzahid ভাইকে, এমন সুন্দর একটি প্রচ্ছদ করে দেয়ার জন্য।

লেখক জীবনের প্রথম বইতে এমন সাড়া পাবো কল্পনার বাহিরে ছিলো। ভেবেছিলাম, অনলাইনে হাজার হাজার পাঠক থাকলেও, বই কিনে পড়ার মতো পাঠক আর কয়জন!
আমাকে অবাক করে দিয়েই পাঠকরা বইটি কিনেছেন! এবং ইনবক্সে ছোট একটি ম্যাসেজ দিয়ে জানিয়েছেন, ভাইয়া বইটি পড়ছি! পরবর্তী বই বের করার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।
কেউ কেউ আবার এক ধাপ অগ্রসহ হয়ে দুই-চারজনকে বই কেনার ব্যাপারে রাজী করিয়ে ম্যাসেজ করেছেন। আমি বিস্মিত হয়েছি, আনন্দিত হয়েছি, আবার কৃতজ্ঞও হয়েছি।

বইটির ব্যাপক প্রচার-প্রসার এবং পাঠক, শুভাকাঙ্খী, বন্ধুদের এই আন্তরিক ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ, অভিভূত। কৃতজ্ঞতা সবার প্রতি।
 

Post Comment

স্বাধীনতা ও সামরিক বাহিনী

৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের সাথে ভারতের যে সাত দফা গোলামী চুক্তি করা হয়, তার একটি হচ্ছে, বাংলাদেশের নিজস্ব কোনো সামরিক বাহিনী থাকবেনা। অভ্যান্তরিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য একটি আধাসামরিক বাহিনী গঠন করা হবে।

১৯৭২সালের শুরুতে, ভারতীয় মেজর জেনারেল উবানের নেতৃত্বে গঠন করা হয় রক্ষী বাহিনী, তার সাথে ভারত থেকে আসেন জেনারেল মালহোত্রা। শেখ মণির অনুসারী মুজিব বাহিনীকে নিয়েই গঠন করা হয় এই রক্ষিবাহিনী। রক্ষি বাহিনীর সদস্যরা দেশে প্রেমের পরিবর্তে শেখ মুজিবের আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করতো।

ভারতের সাথে চুক্তি অনুসারে সেনাবাহিনীকে বিলুপ্ত করার কথা থাকলেও, সেনাবাহিনীর ক্ষোভের ভয়ে শেখ মুজিব তা করেন নাই। বরং ধুকে ধুকে মারার ব্যবস্থা করেছিলেন।
এ ব্যাপারে বিগ্রেডিয়ার মঞ্জুর বলেছিলেন, “আমাদের জোয়ানদের খাবার নেই, অস্ত্র নেই। তাদের জার্সি নেই, গায়ের কোট নেই, পায়ে দেয়ার বুট পর্যন্ত নেই। শীতের রাতে তাদেরকে কম্বল গায়ে দিয়ে ডিউটি করতে হয়। আমাদের অনেক সিপাহী লুঙ্গি পরে কাজ করছে। তাদের কোনো ইউনিফর্ম নেই। পুলিশ আমাদের লোকদেরকে পেটাতো”।
অপর দিকে রক্ষী বাহিনীর ছিলো চক চকে বুট, আধুনিক অস্ত্র, দামী ইউনিফর্ম, এবং বিলাসী জীবন।

এমনকি শেখ মুজিবুর রহমান সেনাবাহিনীকে অস্ত্র দিতে পর্যন্ত দ্বিধা করতেন। ১৯৭৩ সালে আরব ইসরাইল যুদ্ধে শেখ মুজিব মিশরের জন্য উন্নত মানের চা পাতা প্রেরণ করেন।
যুদ্ধ শেষে শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে মিশর সরকার বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর জন্য ৩০টি, T-54 ট্যাঙ্ক উপহার দিতে চাইলেন।
যেখানে টাকা দিয়েও আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র সংগ্রহ করা অনেক কঠিন ব্যাপার, সেখানে বিনামূল্যে ট্যাঙ্ক পেয়েও শেখ মুজিব সেই ট্যাঙ্ক গ্রহণ করতে গরিমসি শুরু করলেন। শেখ মুজিব সেনাবাহিনীকে আধুনিক বাহিনীতে রুপান্তরের বিরোধী ছিলেন, পরবর্তীতে উপদেষ্টাদের পরামর্শে মিশর সরকারকে খুশি করতে শেখ মুজিব সেই ট্যাঙ্ক গ্রহণ করলেন।

সেনাবাহিনীর প্রতি এতো বৈষম্য, এতো অবিশ্বাসই শেখ মুজিবের জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছিলো। শুধুমাত্র দেশের টানে, দেশপ্রেমের কারণে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে বিপ্লবী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন মেজর ফারুক সহ দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর জুনিয়র অফিসাররা। ফলাফল ঘুরে দাড়ায় বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, ভারতের তাবাদারীর বিরুদ্ধে ঘুড়ে দাড়ায় বাংলাদেশ।

সজীব ওয়াজেদ জয়, ভারতীয় পত্রিকায় স্বাক্ষাতকার প্রদান করলেন, সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান করার মতো আর কেউ অবশিষ্ট্য নেই। অভ্যুত্থান করতে হলে শেখ হাসিনা পর্যন্ত পৌছাতে হবে, সেই ক্ষমতা কারো নেই। কারণ শেখ হাসিনাকে পাহাড়া দিয়ে রেখেছে তার বিশ্বস্ত লোকেরা। এই বিশ্বস্ত লোক কারা? ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এদেশীয় এজেন্টরা?!

বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে বিলুপ্ত করার এজেন্ডা ভারত এখনো ত্যাগ করেনাই, বিভিন্ন সময়ে “র” এর চিহ্নিত এজেন্ট শাহরিয়ার কবিররা পত্রিকায় কলাম লিখেছে, সেনা বাহিনী বিলুপ্ত করার ইন্ধন দিয়ে। তাদের দাবী গরীব দেশে টাকা খরচ করে সেনাবাহিনী রাখার প্রয়োজন কি?
আসল কথা হচ্ছে, শক্তিশালী সেনাবাহিনী থাকলেতো বাংলাদেশ সরকার ভারতের তাবাদারী করবেনা।

এবার আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এসেই ভারতের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সেনাবাহিনীর চিহ্নিত চৌকস দেশপ্রেমিক অফিসারদের পিলখানাতে হত্যা এবং চাকরিচ্যুত করে। রক্ষিবাহিনীর ভূমিকায় দাড় করানো হয় এলিট ফোর্স র‍্যাবকে। পুলিশকে দলীয় করণ করার উদ্যেশ্যে ত্রিশ হাজারের অধিক দলীয় ক্যাডারকে পুলিশে নিয়োগ দেয়া হয়।
না, এতো কিছু করার পরেও শেখ হাসিনার সেনাবাহিনী ভীতি কমেনাই বরং বেড়েছে দ্বিগুন, তিনগুণ, বহুগুণ। সেনাবাহিনীর অভ্যান্তরেও বেড়েছে ক্ষোভ, দেশপ্রেমিক ফারুকরা মরেনা, তারা ফিরে আসে যুগে যুগে জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে।

গত বছর বিজয় দিবস এবং এবছর স্বাধীনতা দিবসে সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ বাতিল করা হয়েছে। ভালো করেই বোঝা যাচ্ছে এই সরকারের পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বুঝে গেছে, ক্ষুব্ধ সামরিক বাহিনী প্যারেড অনুষ্ঠানেই তাকে দিল্লি পাঠিয়ে দিতে পারে।
আমরা যতই সেনাবাহিনীকে গালি দেই, ব্যার্থ বলি, নুপুংসক বলি, কিন্তু শেষ বেলাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীই ভারতীয় তাবেদার শেখ হাসিনা’র অবৈধ সরকারের মূল আতঙ্ক।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী সেনাবাহিনী কখনোই দেশের শত্রুকে চিনতে ভুল করেনাই, হয়তো ঘুড়ে দাড়াতে ব্যায় হয়েছে কিছুটা সময়।

অবস্থাদৃষ্টে বোঝা যাচ্ছে, শেখ মুজিবের পথ ধরেই শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছে। বাহাত্তরের সংবিধানে দেশ ফিরে গেছে, বাহাত্তরের পরে তিয়াত্তর আসে, পঁচাত্তর আসেনা। পঁচাত্তর আসে চুয়াত্তরের পরে।
আমাদেরকে অধৈর্য হলে চলবেনা, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে আগস্টের ১৫তারিখেই সমাধান মিলে যায়।

লেখাঃ স্বাধীনতা ও সামরিক বাহিনী
© শামীম রেজা
২৬/০৩/২০১৪

Post Comment

জাতীয় সংগীত এবং দেশপ্রেম

ঘরে অসুস্থ মা, খাবার নেই ঔষধ নেই, মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকা মাকে বিছানায় ফেলে রেখে ছেলেরা সবাই মিলে বহু টাকা খরচ করে সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া করলো। এবার শুরু হলো ভালোবাসা সংগীত! “মাগো আমার আগে যেওনাকো চলে” “মায়ের এক ফোটা দুধের দাম, কাটিয়া গায়েরো ছাম!”

দেশের মানুষ আজ খাদ্যের অভাবে ডাস্টবিনের খাবার কুড়িয়ে খায়, বাসস্থানের অভাবে ফুটপাতে ঘুমিয়েই রাত্রিযাপন করে। চিকিৎসার অভাবে ছটফট করে মারা যায় অসহায় দরিদ্র মানুষেরা। বেকারত্বের যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে আত্নহত্যা করে সন্তানের পিতা! আর আমরা শত কোটি টাকা খরচ করে জাতীয় সংগীত গাই, “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি”।
ভালোবাসা মানে কি? লুটপাট-চাঁদাবাজি করে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের নাম ভালোবাসা?

দেশকে আমরা মা বলিনা, মূর্তি পূজারী পৌত্তলিকরা দেশকে মা বলে, দূর্গা-কালী দেবীকে যেমন তারা মা বলে, ঠিক তেমনি দেশ নামক দেবীকেও তারা মা বলে আখ্যায়িত করে। কিন্তু এদেশের প্রতিটি মানুষ আমাদের প্রতিবেশী, এদেশের প্রতিটি মানুষ আমাদের ভাই-বোন। এইযে শত কোটি টাকা খরচ করে জাতীয় সংগীত গাওয়া হলো, এটা দিয়ে কি ডাস্টিবিনে খাবার কুড়িয়ে খাওয়া একজন অভুক্ত মানুষের পেটে খাদ্য আসবে? এতে করে কি আত্মহত্যার পরিকল্পনা করা একজন বেকার চাকরী পাবে? এতে করে বিনা চিকিৎসায় ধুকে ধুকে মরতে বসা একজন মানুষ ঔষধ কিনতে পারবে?

রোম যখন পুড়ছিলো, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলো! সীমান্তে যখন ফেলানীরা কাঁটাতাড়ে ঝুলছিলো, নিরস্ত্র বিজিবি তখন জাতীয় সংগীত গাইছিলো। সাতক্ষিরাতে যখন ভারতীয় বাহিনী প্রবেশ করে বাংলাদেশের নাগরীকদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছিলো, বাংলাদেশের নিরস্ত্র সেনাবাহিনী তখন জাতীয় সংগীত গাইছিলো। এরই নাম দেশপ্রেম, “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি!”
সাধারণ লোকদেরকে ধারণা, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পদটি রাখা হয়েছে বিভিন্ন দিবসে শোক বার্তা জানানোর জন্য! এখন মনে হচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে রাখা হয়েছে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের জন্য!
এযেনো হীরক রাজার দেশের গল্প। অভুক্ত বাংলাদেশীরা আজ পেটে পাথর বেঁধে গান গাইবে, “অনাহারে নাহি ক্ষেদ, বেশি খেলে বাড়ে মেদ! যায় যদি যাক প্রাণ, শেখ হাসিনা ভগবান!”

কথায় আছে, চেনা বামনের পৈতা লাগেনা। নকল বামনেরা সাড়াদিন পৈতা পরিধান করে নমঃ নমঃ করতে করতে দেশ বিচরণ করে। সবাইকে ডেকে ডেকে বলে, দেখো আমি একজন খাঁটি বামন! দেশপ্রেম প্রমান করার জন্য শত কোটি টাকা খরচ করে জাতীয় সংগীত গাইতে হয়না। আপনার কার্যকলাপ দেখেই জনগন বুঝে নিবে আপনি কতবড় দেশপ্রেমিক!
আপনি বাংলাদেশের নদী বন্ধ করে ভারতকে ট্রাঞ্জিট প্রদান করেছেন, নৌ-পথে বিনা শুল্কে ভারতকে ট্রাঞ্জিট দিয়েছেন, গ্যাস ক্ষেত্র ভারতকে ইজারা দিয়েছেন, রাষ্ট্রিয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন সেক্টরে ভারতীয় কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন, বাংলাশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআর ধ্বংশ করেছেন, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ বন্ধ করেছেন, সাতক্ষিরাতে বাংলাদেশীদের হত্যা করার জন্য ভারতীয় সেনা বাহিনী ঢুকিয়েছেন।
সত্যিই আপনি অনেক বড় মাপের একজন দেশপ্রেমিক!
প্রশ্ন একটাই, আপনার দেশকি ইন্ডিয়া?

লেখাঃ জাতীয় সংগীত এবং দেশপ্রেম
© শামীম রেজা
২৫/০৩/২০১৪

Post Comment

আমি একজন মামা

কোন এক বিখ্যাত অভিনেতাকে একবার সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলো, আপনার জীবনের প্রথম অভিনয় সম্পর্কে বলেন।
ওই চলচিত্র অভিনেতা খুব আক্ষেপ করে বলছিলেন, আমার প্রথম অভিনয় করা চলচিত্রটি আমি দেখতে পারিনাই!
হতভম্ব সাংবাদিক আবার প্রশ্ন করলেন, এটা কিভাবে সম্ভব?
ওই অভিনেতার নির্লিপ্ত জবাব, সেটা ছিলো প্রাপ্তবয়স্কদের চলচিত্র, আর আমি ছিলাম শিশু!

বিজলী বাতি হতে বহুদূরে, ছাঁদ খোলা নৌকায় শুয়ে শুয়ে রাতের আকাশ দেখার মজাই আলাদা। দক্ষিণাঞ্চলে গ্রামের বাড়ি হওয়ার সুবাদে এই সৌভাগ্য আমার প্রায়ই হয়। এমনই এক রাতে শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখছিলাম, শাপলা শালুকের বিলে, ঝিড়ি ঝিড়ি হাওয়া আর অগণিত নক্ষত্রের মাঝে যখন উদাস হয়ে ভাবের জগতে চলে গেলাম, ঠিক তখনি সহযাত্রির মোবাইলে বেজে উঠলো একটি গান—
"কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া, আমার ভাইধন রে কইয়ো নাইওর নিতো বইলা, তোরা কে যাস কে যাস। বছর খানি ঘুইরা গেল গেল রে, ভাইয়ের দেখা পাইলাম না, পাইলাম না"।
গানটি শুনছিলাম আর নিজের বোনের কথাই বারবার মনে পড়ছিলো, সত্যিই ভাই-বোনের এই ভালোবাসা অকৃত্রিম, অক্ষয়।

সুযোগ পেলেই বড় আপার বাসায় চলে যাই, এবং এই যাওয়াটা যতটানা আপার প্রতি টান, তার-চাইতেও বেশি সম্ভবত কচি কচি কন্ঠের মামা ডাক শোনার আকুলতা এবং আপার হাতের মজাদার রান্না! এবারো ব্যতিক্রম হলোনা, প্রথম বই ( কারাগারের দিনগুলো ) প্রকাশিত হওয়ার পরেই চলে গেলাম আপার বাসায়।
প্রকাশিত বইয়ের প্রথম আট-দশ পাতা পড়ে আওয়ামী সাপোর্টার দুলাভাই নির্লিপ্ত!
বড় ভাগ্নীটা অনুযোগের সুরেই বললো, মামা এগুলা তুমি কি লেখ?
“কেনো মামা, কি হয়েছে?”
“আমার মামা যে একজন লেখক, আমার মামার যে একটা বই বের হয়েছে, এটা আমার বান্ধবীদের কাছে বলতেও পারবোনা, আর কাউকে দেখাতেও পারবোনা। কি সব রাজনৈতিক লেখা লিখছো! রাজনীতি ছাড়া লিখতে পারোনা?”
ভাগ্নে-ভাগ্নীদের কাছে তাদের মামারা হচ্ছেন সুপারম্যান, মামাদের সম্পর্কে বন্ধুদের কাছে বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলতে না পারলে ভাইগ্না-ভাগ্নীদের পেটের ভাত হজম হয়না এটা আমি ভালো করেই বুঝি।
আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলামনা।
ছোট বেলায় বন্ধুদের কাছে গল্প করতাম, “জানো, আমার মামা শিবির করে, মামা শিবিরের বিশাল নেতা, আমার মামার অনেক শক্তি! ঢিশুম! ঢিশুম!
আমার মামার সাথে কেউ তেড়ি বেড়ি করলে মামা তাদের রগ কেটে দেয়। না না, সবার রগ কাটেনা, যারা কান্নাকাটি করে, ক্ষমা চায়, তাদের মাফ করে দেয়। আমার মামা অনেক ভালো!”

ভাগ্নীকে আশ্বস্ত করলাম, আগামী বই মেলায় অরাজনৈতিক গল্পের বই প্রকাশিত হবে, ইনশাআল্লাহ। তখন তুমি সবাইকে বলতে পারবে, এটা আমার মামার লেখা বই!

ল্যাপটপে কাজ করছিলাম, ক্লাস ওয়ান পড়ুয়া ছোট ভাইগ্না এসে বললো, মামা একটা কথা বলি?
“হ্যা মামা বলো”।
“মামা, কানে কানে বলি?”
কী-বোর্ড টিপতে টিপতেই বললাম, আচ্ছা বলো।
ভাইগ্না কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বললো, মামা তুমি কি ডাকাত?
“কেনো মামা, এই প্রশ্ন কেনো?”
“তোমাকে যে পুলিশে নিয়ে গেছে, তুমি যে জেলে ছিলা?!”
বুঝলাম, ভালোই মাইঙ্কার চিপায় পড়েছি, কালকে হয়তো আমার এই ভাইগ্না স্কুলে গিয়ে তার বন্ধুদের সাথে রসিয়ে রসিয়ে গল্প করবে, “জানো, আমার মামা শিবির করে, মামা মস্ত বড় ডাকাত! সিনেমার নায়কদের মতো করে সুরঙ্গ দিয়ে সোনালি ব্যাঙ্কের সব টাকা ডাকাতি করেছিলো। মামাকে পুলিশে ধরেছিলো, আমার মামার অনেক শক্তি, মামা জেল ভেঙ্গে বেড়িয়ে এসেছে! ঢিশুম! ঢিশুম!”
মনে মনে দোয়া করছিলাম, এমনিতেই উঠতে বসতে আব্বা আমাকে রাজাকার বলে সম্বোধন করে, এই বই আব্বার হাতে গেলে আমার অবস্থা কেরোসিন!

জোহরের আজান দিতেই ছোট ভাগ্নী জায়নামায নিয়ে হাজির, এখনো কথা বলতে শিখেনাই, আমার হাতে জায়নামায ধরিয়ে দিয়ে বলছে, মাম্মমা ওই নামাজ! মাম্মা, মাম্মা!
“আচ্ছা মামা নামাজ পড়বো, গোসল করে নেই”।
ভাগ্নী কথা শুনতে নারাজ, হৈ চৈ শুরু করে দিলো, এখনই নামায পড়তে হবে। আধো আধো স্বরে মাম্মা, মাম্মা, ডাকছে আর হাত ধরে টানছে।
অগ্যতা উঠে গিয়ে জায়নামায বিছিয়ে দিলাম, ভাগ্নী সরাসরি সিজদায়, সিজদা দিয়ে দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে আমাকে দেখছে! এরপর শুরু হলো ননস্টপ সিজদা, কোনো থামা থামি নাই!

দুপুর বেলা আপা গেলো ভাগ্নিকে ঘুম পাড়াতে, ভাগ্নীকে ঘুম পাড়িয়ে আমার সাথে গল্প করবে। কিছুক্ষণ পরেই দেখলাম সাড়া ঘরময় ভাগ্নীর ছোটাছুটি!
ব্যাপার কি? একটু পরেই বুঝতে পারলাম আসল কাহিনী, ভাগ্নীই বরং আপাকে ঘুম পাড়িয়ে চলে এসেছে!

বিকালে শুরু হলো লুঙ্গি ড্যান্স! ছোট ভাইগ্না টিভিতে “লুঙ্গি ড্যান্স” গান চালু করেছে, আর পিচ্চি ভাগ্নীটা সেই গানের তালে তালে ড্যান্স দিচ্ছে। ভাগ্নীর পড়নে লুঙ্গি নাই, তাই জামাকেই লুঙ্গির মতো ধরে লাফাচ্ছে!
প্রথমে টিভি বন্ধ করে দিলাম, ভাগ্নীর চিৎকার কান্নাকাটিতে কান ঝালাপালা। বাধ্য হয়ে আবার টিভি চালু এবং লুঙ্গি ড্যান্স!
আপাকে ডেকে দেখালাম, বাচ্চারা এগুলো কি শিখছে? ছোট বেলা হতেই অশ্লীলতা দেখে দেখে বড় হলে ভালো খারাপের পার্থক্য করবে কিভাবে?
আপা ঘোষণা দিলেন, এই মাসেই ডিস কানেকশন অফ করে দেয়া হবে। ডিসকানেকশন অফ করে দিলে সমস্যার সমাধান হবেনা, তারচাইতে বরং চ্যানেল চাইল্ড লক করে দিলেই ভালো হয়।

আপার বাসা থেকে যখন বিদায় নিচ্ছিলাম, ছোট ভাগ্নীটা তখন চিৎকার করে কান্নাকাটি করছিলো, তার সেই গগন বিদারী চিৎকারে কানে তালা লাগার যোগার, “মামা যাবো, মামা যাবো”।
কোনো রকমে ফাঁকি দিয়ে চলে এলাম।
সব আপন মানুষেরা যদি ছোট ভাগ্নীটার মতো হতো! প্রিয় মানুষের কান্নাও কখনো কখনো দেখতে ইচ্ছে করে।

লেখাঃ আমি একজন মামা
© শামীম রেজা
২৫/০৩/২০১৪

Post Comment

কারাগারের দিনগুলো, বই হাতে মাহফুজ আলম ভাই।



একদল শিবির নেতাকর্মী নিয়ে দুলাভাই এসে হাজির হলেন ১৮তারিখ বিকেল বেলায়, সাথে সিটি কর্পোরেশনের জামায়াত সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহফুজ আলম ভাই। বেশ কিছুক্ষণ আলাপ হলো, তিনি পারিবারিক ভাবে মামলা পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হলো ব্যাপারটি জটিল হয়ে যাবে, আমাদের নিজস্ব আইনজীবি আছেন তারা এব্যাপারে দক্ষ। কট্টর লীগ সমর্থক আমার এই ভাই, সরকারী অফিসার হওয়ার কারণে এখন প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতি করতে না পারলেও একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। আমার হাসিখুশি চেহারা দেখে কিছুটা অবাক হয়েই বললেন, তুমিতো মনে হচ্ছে ভেতরে খুব আনন্দেই আছো, ওদিকে বাড়িতেতো কান্নাকাটির ধুম পড়ে গেছে, তোমার বোন খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে!

ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহফুজ আলম ভাইয়ের সাথেও কুশল বিনিময় হলো, একজন রাজনীতিবিদের মধ্যে যতরকম গুণাবলী দরকার সবগুলোই এই মানুষটার মধ্যে বিদ্যমান, মাঝে মাঝে মনে হয় আল্লাহ তাকে রাজনীতি করার জন্যই বোধহয় দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন! বয়সে নবীন এই মানুষটি আওয়ামী অধ্যুষিত এলাকায় তিন তিনবার নির্বাচিত আওয়ামীলীগের শক্তিশালী প্রার্থিকে পরাজিত করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। সবচাইতে অবাক ব্যাপার হচ্ছে জামায়াত প্রার্থী হওয়া সত্বেও তিনি হিন্দু ভোটারদেরও সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন। তার নির্বাচনী এলাকাতে গত দুই বছরে তিনি যতগুলো সমাজসেবা মূলক কাজ করেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত ওই এলাকায় এত কাজ হয়নি। ২২তারিখে পরীক্ষার আগেই জামিনের চেস্টা চলছে জানিয়ে তারা বিদায় নিলেন।

সাক্ষাৎ শেষে ফুরফুরে মেজাজে ওয়ার্ড এসে আড্ডায় ডুবে যেতাম, কখনো ৭নম্বর ওয়ার্ড কখন আনোয়ার ভাইয়ের ১২নম্বরে কিংবা হোসাইন ভাইয়ের ১৪নম্বরে, আর রেগুলার ডিউটি হিসেবে বদিউর রহমান ভাইয়ের রুমতো আছেই। জেল জীবনে অনেক ধরনের মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে, তাদের একেক জনের ঘটনা লিখতে গেলে একেকটা জনপ্রিয় নাটকে পরিণত হবে।

৮নম্বর ওয়ার্ডে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিলো দেলাওয়ার ও সালাউদ্দীনের সাথে, দুজনেই পটিয়ায় হিন্দু মন্দির ভাংচুর মামলার আসামী। ৭নম্বর ওয়ার্ডের তারেক ও মোর্শেদ, তারেক আমার কলেজ লাইফের বন্ধু, জোড়পূর্বক পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে অপহরণ মামলার আসামী। ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরী হয়েছিলো সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর ডানহাত হিসেবে পরিচিত রাউজানের বিধান বড়ুয়ার সাথে, তার নামে সম্ভবত ৭২টি মামলা, কারাগারের সবাই তার সাথে হিসেব করে কথা বলে! আরো পরিচিত হয়েছিলাম মীরসরাই ট্রাজেডির সেই ট্রাক ড্রাইভারের সাথে, যার ভুলের কারণে ঝড়ে গেলো ৪৫টি শিশুর তাজা প্রাণ। আপনারা অনেকেই হয়তো রসু খাঁর নাম শুনে থাকবেন, হ্যা আমি সেই রসু খাঁর কথাই বলছি বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সিরিয়াল কিলার, তিনি আমার পাশের ওয়ার্ডেই ছিলেন, কয়েকবার তার সাক্ষাৎকারও নিয়েছিলাম। যারা রসু খাকে চিনতে পারেননাই তারা গুগলে সার্চ দিতে পারেন।

৭নম্বর ওয়ার্ডে পরিচয় হয়েছিলো ফয়সলের সাথে, অপহরণ মামলার আসামী। রিমান্ডের আগেই পিটিয়ে ছেলেটির হাতের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে পুলিশ। ফয়সলের বন্ধু প্রেম করতো একটি মেয়ের সাথে, ফয়সল টুকটাক দালালী করতো বন্ধুর জন্য। একদিন বন্ধু লুকিয়ে বিয়ে করে, মেয়েটিকে হানিমুনে নিয়ে যায় কক্সবাজারে। মেয়ের বাপ দেয় অপহরণ মামলা, আর ফয়সলের হানিমুন এই ৭নম্বর ওয়ার্ড। সারাদিন ভুস ভুস করে বিড়ি টানতো আর কানের কাছে এসে ঘ্যান ঘ্যান, ভাইয়া আমার জামিন হবেতো?

বইঃ কারাগারের দিনগুলো (২৮-২৯পৃষ্ঠা)
লেখকঃ শামীম রেজা
 


Photo: একদল শিবির নেতাকর্মী নিয়ে দুলাভাই এসে হাজির হলেন ১৮তারিখ বিকেল বেলায়, সাথে সিটি কর্পোরেশনের জামায়াত সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহফুজ আলম ভাই। বেশ কিছুক্ষণ আলাপ হলো, তিনি পারিবারিক ভাবে মামলা পরিচালনার আগ্রহ প্রকাশ করলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হলো ব্যাপারটি জটিল হয়ে যাবে, আমাদের নিজস্ব আইনজীবি আছেন তারা এব্যাপারে দক্ষ। কট্টর লীগ সমর্থক আমার এই ভাই, সরকারী অফিসার হওয়ার কারণে এখন প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতি করতে না পারলেও একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। আমার হাসিখুশি চেহারা দেখে কিছুটা অবাক হয়েই বললেন, তুমিতো মনে হচ্ছে ভেতরে খুব আনন্দেই আছো, ওদিকে বাড়িতেতো কান্নাকাটির ধুম পড়ে গেছে, তোমার বোন খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে!

ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাহফুজ আলম ভাইয়ের সাথেও কুশল বিনিময় হলো, একজন রাজনীতিবিদের মধ্যে যতরকম গুণাবলী দরকার সবগুলোই এই মানুষটার মধ্যে বিদ্যমান, মাঝে মাঝে মনে হয় আল্লাহ তাকে রাজনীতি করার জন্যই বোধহয় দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন! বয়সে নবীন এই মানুষটি আওয়ামী অধ্যুষিত এলাকায় তিন তিনবার নির্বাচিত আওয়ামীলীগের শক্তিশালী প্রার্থিকে পরাজিত করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। সবচাইতে অবাক ব্যাপার হচ্ছে জামায়াত প্রার্থী হওয়া সত্বেও তিনি হিন্দু ভোটারদেরও সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছেন। তার নির্বাচনী এলাকাতে গত দুই বছরে তিনি যতগুলো সমাজসেবা মূলক কাজ করেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত ওই এলাকায় এত কাজ হয়নি। ২২তারিখে পরীক্ষার আগেই জামিনের চেস্টা চলছে জানিয়ে তারা বিদায় নিলেন।

সাক্ষাৎ শেষে ফুরফুরে মেজাজে ওয়ার্ড এসে আড্ডায় ডুবে যেতাম, কখনো ৭নম্বর ওয়ার্ড কখন আনোয়ার ভাইয়ের ১২নম্বরে কিংবা হোসাইন ভাইয়ের ১৪নম্বরে, আর রেগুলার ডিউটি হিসেবে বদিউর রহমান ভাইয়ের রুমতো আছেই। জেল জীবনে অনেক ধরনের মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে, তাদের একেক জনের ঘটনা লিখতে গেলে একেকটা জনপ্রিয় নাটকে পরিণত হবে। 

৮নম্বর ওয়ার্ডে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিলো দেলাওয়ার ও সালাউদ্দীনের সাথে, দুজনেই পটিয়ায় হিন্দু মন্দির ভাংচুর মামলার আসামী। ৭নম্বর ওয়ার্ডের তারেক ও মোর্শেদ, তারেক আমার কলেজ লাইফের বন্ধু, জোড়পূর্বক পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে অপহরণ মামলার আসামী। ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরী হয়েছিলো সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর ডানহাত হিসেবে পরিচিত রাউজানের বিধান বড়ুয়ার সাথে, তার নামে সম্ভবত ৭২টি মামলা, কারাগারের সবাই তার সাথে হিসেব করে কথা বলে! আরো পরিচিত হয়েছিলাম মীরসরাই ট্রাজেডির সেই ট্রাক ড্রাইভারের সাথে, যার ভুলের কারণে ঝড়ে গেলো ৪৫টি শিশুর তাজা প্রাণ। আপনারা অনেকেই হয়তো রসু খাঁর নাম শুনে থাকবেন, হ্যা আমি সেই রসু খাঁর কথাই বলছি বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সিরিয়াল কিলার, তিনি আমার পাশের ওয়ার্ডেই ছিলেন, কয়েকবার তার সাক্ষাৎকারও নিয়েছিলাম। যারা রসু খাকে চিনতে পারেননাই তারা গুগলে সার্চ দিতে পারেন।

৭নম্বর ওয়ার্ডে পরিচয় হয়েছিলো ফয়সলের সাথে, অপহরণ মামলার আসামী। রিমান্ডের আগেই পিটিয়ে ছেলেটির হাতের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে পুলিশ। ফয়সলের বন্ধু প্রেম করতো একটি মেয়ের সাথে, ফয়সল টুকটাক দালালী করতো বন্ধুর জন্য। একদিন বন্ধু লুকিয়ে বিয়ে করে, মেয়েটিকে হানিমুনে নিয়ে যায় কক্সবাজারে। মেয়ের বাপ দেয় অপহরণ মামলা, আর ফয়সলের হানিমুন এই ৭নম্বর ওয়ার্ড। সারাদিন ভুস ভুস করে বিড়ি টানতো আর কানের কাছে এসে ঘ্যান ঘ্যান, ভাইয়া আমার জামিন হবেতো?

বইঃ কারাগারের দিনগুলো (২৮-২৯পৃষ্ঠা)
লেখকঃ শামীম রেজা

Post Comment

ফেরাউনকে আমার হিংসে হয়।


ফুলকুঁড়ি আসরের একটা অনুষ্ঠান দেখেছিলাম, সেখানে এক শিশু বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছিলো। শিশু বিশেষজ্ঞ বলতে, সেই বিশেষজ্ঞ নিজেই একজন শিশু!!
যাই হোক, শিশু বিশেষজ্ঞকে এক অভিভাবক প্রশ্ন করলেন, আমার বাচ্চা খেতে চায়না, এর সমাধান কি?
বিশেষজ্ঞ মজার জবাব দিয়েছিলেন, বাচ্চারা খেতে চায়না কথাটা ভুল, সঠিক কথা হলো, বাচ্চারা যা খেতে চায় আমরা তা খেতে দেইনা। যেমন চকলেট,আইসক্রিম,আচার,চিপস আরো কতো কি!!

আমার আব্বা-আম্মা, ভাই-বোন সবারই একই অভিযোগ, আমি ঠিকমতো খাইনা, না খেয়ে খেয়ে দিন দিন সুটকি হয়ে যাচ্ছি। আমি খাইনা কথাটা ভুল, আমিতো অনেক কিছুই খাই, যেমন রংপুরে গেলে অবশ্য অবশ্যই সুপার মার্কেটের চটপটি খাই, মাদারীপুর গেলে সেই বিখ্যাত রসগোল্লা মিস করার প্রশ্নই আসেনা।
ঢাকায় গেলে, ফুটপাত থেকে হরকে রকমের ভর্তা দিয়ে ঝাঁল ঝাঁল চিতই পিঠা অবশ্যই খাই। আর কুমিল্লার টাউন হল মাঠের গরুর নলার হালিমতো আমার জিভে পানি এনে দেয়। আর যেটা খাইনা সেটা হচ্ছে বগুড়ার দই এবং কুমিল্লার রসমালাই, এই দুইটা জিনিস নাকি বিখ্যাত, অথচ আমার কাছে অখাদ্যই মনে হয়। এর চাইতে ঘরে বানানো চিনি মেসানো কাঁচা দইতো অতুলনীয়!

অন্যান্য সময়ের মতোই, কুমিল্লা নেমেই চলে গেলাম কান্দির পাড় টাউন হল মাঠে। আয়েশ করে বসে বসে হালিম খাচ্ছিলাম, সেই প্রিয় নলার হালিম! পেছন থেকে মাঝ বয়সি এক মহিলা ভিক্ষুক সুর করে বলছিলেন, “কত টাকা কত যায়গায় খরচ করি, কিছু টাকা দান করেন এই টাকা বৃথা যাবেনা, আখিরাতে এই টাকা পাওয়া যাবে, ইত্যাদি ইত্যাদি”। মহিলার কথাগুলো মনে দাগ কাটলো, পকেট থেকে খুচড়া কয়েকটা টাকা দিয়ে দিলাম, সাথে এটাও বললাম, দোয়া কইরেন!
“দোয়া কইরেন” শব্দটা আমি সচেতনভাবে বলিনাই, এটা আমার মুদ্রাদোষ! কাউকে বিদায় দেয়ার সময় আপনা আপনিই এই কথাটা আমার মুখ থেকে বেরিয়ে যায়।
মহিলা দোয়া করতে শুরু করলেন, “আল্লাহ মনের আশা পূরণ করুক, আপনারে জীবনে সুখ-শান্তি দান করুক, মনের কষ্ট দূরে করে দিক”
দোয়া শুনে আমার কি যে হলো, মনে হচ্ছিলো আমার দোয়া গুলোই মহিলার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। একবার ভাবলাম, মহিলাকে বলি, খালা চেয়ার টেনে বসেন, হালিম খাবেন? পরক্ষণেই সচেতন জগতে ফিরে এলাম, আমিতো সুস্থ সমর্থ কোনো মানুষকে ভিক্ষা দেইনা! এই মহিলাকে কেনো দিলাম?

চিন্তাটা বারবারই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো, এই মহিলাকে আমি কেনো ভিক্ষা দিলাম! কোথায় যেনো একটা গান শুনেছিলাম, “চাওয়ার মতো চাইলে খোঁদা সাড়া দিবেনা কেনো” টাইপের। ওই মহিলার চাওয়ার স্টাইলটা সুন্দর ছিলো যেটা হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে, মন নরম করে দিয়েছে, তাই না দিয়ে উপায় ছিলোনা।
পরক্ষণেই একটা ব্যাপার মাথায় গেথে গেলো, সেটা হচ্ছে, মানুষের এতো এতো কঠিন মন যদি কারো কথায় নরম হয়ে যেতে পারে, তাহলে সেই রহিম-রহমান কেনো মানুষের দোয়া কবুল করেননা? তিনিতো পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু!

হ্যা, অবশ্যই তিনি সাড়া দিবেন, আমরা আসলে চাওয়ার মতো চাইতে পারিনা। একবার জুমার খুতবায় ইমাম সাহেবের বক্তব্যে শুনেছিলাম, ফেরাউন নাকি আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ ফিরিয়ে দিতে পারতেননা। তার চাওয়ার স্টাইল ছিলো ব্যাতিক্রম, ফেরাউন যখন নিজেকে আল্লাহ দাবী করেছিলো তখন নীল নদের স্রোত বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। প্রজা সাধারণ ফেরাউনের কাছে আসলো, এসে বললো আপনিতো নিজেকে আল্লাহ দাবী করেন, এবার নীল নদের স্রোত এনে দেন।
ফেরাউন পড়ে গেলেন বিপদে, গভীর রাতে এক জঙ্গলে চলে গেলেন, সেখানে গিয়ে করুণভাবে কান্নাকাটি করে আল্লাহকে বললেন, হে আল্লাহ আমার সম্মান তুমি ছিনিয়ে নিওনা, আমি তওবা করতেছি, আমি আর শিরক করবোনা, তুমি নীল নদের স্রোত ফিরিয়ে দাও।
আল্লাহ ফিরাউনের দোয়া কবুল করেছিলেন, নীল নদের স্রোত ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। ফেরাউন তখন দম্ভ করে জনগণকে বলেছিলো, আমার ক্ষমতা সম্পর্কে তোমাদের আর কোনো সন্দেহ আছে? আমার হুকুমেই নীল নদের স্রোত ফিরে এলো।

দোয়া কবুল সম্পর্কে আরেকটা মজার গল্প, এক বেনামাজী লোক শুনেছিলেন, দোয়া কবুলের কোন এক রাতে আল্লাহর কাছে যা চাইবে তাই পাওয়া যাবে। সেই লোক ভালোমতো ওজু-গোসল সম্পন্ন করে বিশাল এক পাথর এনে মসজিদের দরজার সামনে রেখে দিলো, তারপরে শুরু করলো দোয়া। করুণভাবে আল্লাহর নিকট কান্নাকাটি, হে আল্লাহ তুমি এই বিশাল পাথরটাকে হীরায় রুপান্তরিত করে দাও!
লোকটা দোয়া করে আর বার বার পেছনে ফিরে দেখে, পাথরটা হীরা হয়ে গেলো কিনা!
এদিকে ভোর হয় হয় অবস্থা! সে এবার এক ধাপ নিচে নেমে গেলো, আল্লাহ যদি হীরা না হয় অন্তত এটাকে স্বর্ণে রুপান্তরিত করে দাও।
সময় গরিয়ে যায়, পাথর স্বর্ণ হয়না, লোকটা ধীরে ধীরে আরো কমিয়ে চায়, হীরা থেকে স্বর্ণ, স্বর্ণ থেকে রুপা। ফজরের সময় আসন্ন প্রায়, অধৈর্য হয়ে এক পর্যায়ে এসে লোকটি বললো, আল্লাহ অন্তত পক্ষে পাথরটাকে তুমি লোহা বানিয়ে দাও!
কি অদ্ভুত ব্যাপার, পাথরটি লোহায় রুপান্তরিত হয়ে যায়! লোকটি তাজ্জব হয়ে বসে থাকে। ফজরের সময় ঈমাম সাহেব মসজিদে আসলে তাকে ঘটনা খুলে বলে, আমি এতো কিছু চাইলাম, আল্লাহ দিলোনা, লোহা চাইলাম দিয়ে দিলো, এটার কারণ কি?
ইমাম সাহেব ঘটনার ব্যাক্ষা এভাবে দিলেন, সারারাত দোয়া করার ফলে, আপনার সাথে আল্লাহর বিশেষ সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে গিয়েছিলো, যে মূহুর্তে আপনি লোহা চেয়েছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে আপনি যদি আরো বাড়িয়ে বেহেশতও চাইতেন, তবে আল্লাহ আপনাকে বেহেশত প্রদান করতেন! কিন্তু দূর্ভাগ্য, আপনি লোহা চেয়েছেন! আল্লাহ আপনাকে লোহা দিয়েছেন!

ছোট বেলা হতে নাচাইতেই অনেক কিছু পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। চাওয়ার পরেও পাইনি এমনটা যখনি হয়েছে তখনি মনকে সান্তনা দিয়েছি, আঙুর ফল টক! আবার কখনোবা বলেছি, আঙুর ফল অনেক মিষ্টি আমার দাতেই সমস্যা, তাই খেতে পারছিনা। কিন্তু কখনো আল্লাহর কাছে সেভাবে চাইনি, চাইতে পারিনাই, যেভাবে চাইলে পাওয়া যায়।
সত্যিই ফেরাউনকে আমার হিংসা হয়, আল্লাহদ্রোহী হওয়ার পরেও কিভাবে আল্লাহর কাছে চাইতে পারতো!

লেখাঃ ফেরাউনকে আমার হিংসে হয়।
© শামীম রেজা
২৩/০৩/২০১৪

Post Comment

"কারাগারের দিনগুলো" বই হাতে খুবাইব।


এই ভদ্রলোককে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন শেখ পরিবারের এক মেয়ে। ভয়েতো বেচারা অস্থির! রাজাকার মানুষ, শেখ বংশে বিয়ে করে নিজের ইজ্জত নষ্ট করবে নাকি?! কিন্তু বিয়ে না করেও উপায় নেই, সামনে জলজ্যান্ত উদাহরণ সাকা চৌধুরী। শেখ বংশের মেয়েকে বিয়ে না করার অপরাধে বেচারা এখন কারাগারে মরতে বসেছে!

চরম ভয়ে চুপসে গেলেন ভদ্রলোক, খাওয়া-দাওয়ায় প্রব্লেম সৃষ্টি হলো।
ভদ্রলোকের সমস্যা এখন চরমে, নিজের হাতে খেতে পারেননা, একা একা গোসল করতে পারেননা, এমনকি একা একা বাথরুমেও যেতে পারেননা।

কি আর করার, ভদ্রলোকের হাতে ধরিয়ে দিলাম, কারাগারের দিনগুলো বইটি।
বই পড়া শেষে তার অনুভূতি জানতে চাইলাম, ভদ্রলোকের হাঁসি মুখের জবাব— মামু কারাগারে যামু! শেখ বংশে বিয়া করুমনা!
 

Post Comment

ইসলামীক পর্ণ ভিডিও পেতে কত দেরী পাঞ্জেরী?


আমার দুলাভাই কট্টর আওয়ামী সমর্থক মানুষ! জামায়াত শিবিরের নাম দুই কানে শুনতে পারেননা। তবে কথার প্যাচে পড়লে নিজেকে আওয়ামী পরিচয় দিতেও চাননা। বলেন, আমি সরকারী কর্মকর্তা, আমি সরকারী দল করি, যেই দল সরকারে আসবে আমি সেইদল।
যাই হোক, তিনি মাঝে মধ্যেই একটা কথা বলেন সেটা হচ্ছে, “বাংলাদেশে সুদি ইউনূসের পরে সব চাইতে বড় সুদ খোড় হচ্ছে তোমাদের জামায়াতের লোকেরা”।
আমি অবাক হই! যেই জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ সর্ব প্রথম ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে, সেই জামায়াতের লোকদের দুলাভাই সুদ খোড় বলছেন? অদ্ভুত!!

দুলাভাইয়ের যুক্তির সূত্র ধরেই বলছি, বাংলাদেশের আনাচে কানাচে গ্রামে গঞ্জে সাবেক শিবির কর্মীদের হাতে (অধিকাংশই বহিস্কৃত, কারণ সুদি ব্যাংকে চাকরী করে এমন কেউ জামায়াতের রুকন হতে পারেনা) গড়ে উঠেছে অসংখ্য মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি। এবং সব চাইতে মজার যে বিষয় সেটা হচ্ছে এইসব মাল্টিপারপাসের সবগুলোর আগেই ইসলামীক লাগানো আছে!
এই মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির অধিকাংশরই মূল ব্যবসা হচ্ছে সুদে টাকা খাটানো, কিন্তু যেহেতু এর সাথে জামায়াত-শিবিরের লোকেরা জড়িত আছে তাই এটা ইসলামীক সুদ!!

এবার আসি ইসলামীক গালির প্রসঙ্গে, ইদানিং ফেসবুকে ঢুকলেই যেই বিষয়টা কষ্ট দেয় সেটা হচ্ছে গালি। একটা সময় ছিলো ব্লগিং করতাম, নাস্তিক এবং আওয়ামী ব্লগারদের বিপরীতে পরিচ্ছন্ন ব্লগার হিসেবে ইসলামপন্থীদের একটা সুনাম ছিলো। কিন্তু এখন দিন বদলাইছে আমরা ডিজিটাল হয়েছি, আমরা পেছনে পড়ে থাকবো কেনো? আমরাও গালি দেয়া শুরু করলাম, আমরা যেই গালি গুলো ব্যবহার করি, সেগুলো হচ্ছে ইসলামীক গালি! যেহেতু আমরা শিবির করি, তাই আমাদের “চ” অধ্যাক্ষরের গালি গুলো ফিল্টার হয়ে ইসলামীক হয়ে যায়।

সেদিন একটা জনপ্রিয় ইসলামীক পেইজের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে ওয়াল পোস্ট করেছিলাম, আমার পোস্টে এসে অনেকেই আমাকে গালি দিলো, এবং সেই পেইজের পক্ষ থেকে ম্যাসেজ দিয়ে ঐ গালি গুলোর কথা উল্লেখ করে আমাকে বিদ্রুপ করা হলো। আমার বিরুদ্ধে গালি ব্যবহার করাতে তারা আনন্দ পেয়েছেন।

ইদানিং আরো একটা বিষয় খুব ভালো লাগছে, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, সঙ্কীর্ণতার উর্ধ্বে উঠছি। তবে নিজেকে নিয়ে দুঃখ হয়, আমি সেই সঙ্কীর্ণ মানষিকতার মানুষই রয়ে গেলাম।
যে লেখা গুলোর সাথে আমি চটি সাহিত্যের কোনো পার্থক্য করতে পারিনা, যে লেখাগুলো পড়তে গেলে আশে পাশে দুইবার করে তাকিয়ে দেখতে হয়, কেউ আমাকে দেখছে কিনা, সেই লেখাগুলোই আমার ওয়ালে বারবার ভেসে ওঠে, আমাদেরই কতিপয় ভাই-বোনের লাইক এবং লুলায়িত কমেন্টের মাধ্যমে।

আলহামদুলিল্লাহ, আমরা ইসলামীক চটি রচনা করতে শিখেছি, এবং আমাদের বোনদের বাহবাও পাচ্ছি। সারাদিন কোরান হাদিসের বয়ান শেষে ক্লান্ত মনে এমন একটু আধটু বিনোদন না পেলে কি চলে?

আমরা চটি সাহিত্যিককে বাহবা জানাই, “আপনিই সঠিক পথে আছেন, আপনার গালি গুলো আমি ভালো পাই, আমার আফসোস আমি আপনার মতো গালি দিতে পারিনা, আপনার মতো শরীর বৃত্তিয় বিষয়গুলোকে এমন প্রতিবাদী ভাষায় উপস্থাপন করতে আমি ব্যার্থ। আপনি সফল হয়েছেন, আপনাকে মোবারকবাদ”।
আমরা আরো সুন্দর শালীন করে বলি, “আপনার গালি গুলোর মর্মার্থ মূর্খ পাব্লিকেরা বুঝবেনা, আপনি চালিয়ে যান, আপনার ইসলামীক চটি সাহিত্যের জন্য আমরা অধীর হয়ে অপেক্ষায় থাকি”।

শেষ কথা, আমরা ইসলামীক সুদ পেলাম, ইসলামীক গালি পেলাম, ইসলামীক চটি সাহিত্য পেলাম, ইসলামীক পর্ণ ভিডিও পেতে কত দেরী পাঞ্জেরী?


লেখাঃ
ইসলামীক পর্ণ ভিডিও পেতে কত দেরী পাঞ্জেরী? © শামীম রেজা
২১/০৩/২০১৪

Post Comment

হাটা বাবা এবং ঢাকা ভ্রমণ


ঢাকা শহরে এক বাবা ছিলেন, নাম হাঁটা বাবা! এই হাঁটা বাবা পথে প্রান্তরে হাঁটতেন, তার সাথে সাথে হাঁটতেন অসংখ্য ভক্ত! বেশ কিছুদিন আগে এই হাঁটা বাবা মারা গেলেন, পত্রিকায় দেখলাম, তার জানাযায় নাকি সারা ঢাকা শহর থেকে হাজার দশেক ভক্ত যোগ দিয়েছিলো এবং লাশের কবর কোথায় হবে তা নিয়ে সৃষ্টি হয় বিরাট হাঙ্গামা, পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বাধ্য হয়।

মাঝে মাঝে মনে হয়, হাঁটা বাবার এই হাঁটা-হাঁটির বৈশিষ্ট্যটা আমার মধ্যে প্রবল। মাঝে মধ্যেই মনের মতো কাউকে পেলে হাঁটতে থাকি, হাঁটতে হাঁটতেই পাড়ি দেই মাইলের পর মাইল পথ। চট্টগ্রামে আমার এই হাঁটার সঙ্গী হলো বন্ধু আলী, আর ঢাকায় এলে খালাতো ভাই জামান।

২০০৩ সালে এসএসসি দিয়ে তিন মাসের বন্ধ, গায়ে নতুন বাতাস, কিছুদিন পরেই কলেজে ভর্তি হবো, গোটা দুনিয়াকেই রঙিণ দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করলাম। তিনটা মাস কাটিয়ে দিলাম হাঁটতে হাঁটতেই। ঝাউতলা রেলষ্টেশন হতে চট্টগ্রাম ভার্সিটির রেলপথে দূরত্ব প্রায় এক ঘন্টা, জামানকে বলতেই রাজি হয়ে গেলো, মনে এ্যাডভেঞ্চারের নেশা, হেঁটে হেঁটেই চলে গেলাম ভার্সিটি। সকাল দশটা হতে দুপুর দুইটা পর্যন্ত এক নাগাড়ে চার ঘন্টা হাঁটা!
ভার্সিটি লাইফেও সেই একই অবস্থা, সঙ্গী বন্ধু আলী আর প্রাণভরা কথা। কত কথা, কত স্মৃতি এই হাঁটার মধ্যেই বিনিময় হয় তার হিসেব কে রাখে?

ঢাকা এসেছি বুধবার, হাতে অনেক কাজ, দীর্ঘ সিডিউল। বুধবার সন্ধ্যায়ই চলে গেলাম মারদিয়া আপার বাসায়, সঙ্গী হলেন মাসুদ হাসান ভাই। মারদিয়া আপার আপ্যায়নের ব্যাপারে বলার আগে একটা গল্প বলে নেই। চটগ্রামে আমাদের বড় ভাই সালেহ আহম্মদ একটা ইসলামী সংগঠনের সাথে জড়িত, তো সেই সংগঠনের যেকোনো প্রগ্রামেই প্রচুর আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকে। ছাত্র রাজনীতি করে যাওয়া সালেহ ভাইয়ের কাছে ব্যাপারটা কিছুটা অদ্ভুতই লাগলো। একটা প্রগ্রামে সালেহ ভাই বলেই ফেললেন, আমার একটা প্রশ্ন আছে!
দায়িত্বশীল জিজ্ঞাসা করলেন কি প্রশ্ন?
সালেহ ভাই বললেন, এই যে প্রতিটা প্রগ্রামে আমরা এতো খাওয়া.........
দায়িত্বশীল মাঝপথেই হাসতে হাসতে থামিয়ে দিয়ে বললেন, মান্না-সালওয়া নিয়ে প্রশ্ন করতে নেই, বন্ধ হয়ে যাবে, তার চাইতে খাইতে থাকেন!
মারদিয়া আপার আপ্যায়নের ব্যাপারে আমিও কোনো প্রশংসা করলামনা, আমি খাইতে থাকলাম, দোয়া করি প্রতিবার ঢাকায় এসে যেনো খাইতে পারি!

এবার মারদিয়া আপার বাসার একটু প্রশংসা করি। এমন সাজানো গোছানো রুচিশীল জিনিসপত্রে ঠাঁসা বাসা আমি খুব কমই দেখেছি। বইয়ের র‍্যাকগুলো দেখে মনে হচ্ছিলো, মাথায় তুলে নিয়ে আসি! আর ছাঁদ? মাশাআল্লাহ! ঢাকা শহরে এমন বাসা থাকতে পারে, আমার কল্পনার বাহিরে ছিলো। উথাল-পাথাল হাওয়া, আকাশে বিশাল চাঁদ, রাতের বিজলী বাতিতে বিশাল ঢাকা শহর, খুবাইব আর খাদিজার ছোটাছুটি এবং সিমেন্টের টবে বেড়ে ওঠা মাঝাড়ি আকৃতির গাছ, বেতের চেয়ারে বসে নাস্তা! অন্য রকম, অন্য রকম এক অনুভূতি। চট্টগ্রামের বাটালি পাহাড়ে যারা উঠেছেন তাদের উদ্দেশ্য বলছি, মনে হচ্ছিলো বাটালি পাহাড়ে রাতের বেলা পিকনিক করছি!!

অনেক গল্প হলো, খুবাইব-খাদিযাহ’র আব্বু কাসেম ভাই এবং মারদিয়া আপার আব্বু মমতাজ চাচার সাথে। মমতাজ চাচা দেখলাম, আমাকে ভালো করেই চিনেন, আমার লেখার সাথে তার পরিচয় বহুদিনের। তার প্রশংসা শুনে লজ্বায় আমার কান গরম হয়ে গিয়েছিলো। আচ্ছা, লজ্বায় কি কান গরম হয়? আমার হয়, কেনো হয় সেটা অবশ্য জানিনা।

গতরাতটা ছিলো অন্য রকম এক রাত, সমগ্র ঢাকা শহর যখন ঘুমিয়ে পড়েছে, আমরা তখন হাঁটতে বেড়োলাম। আমরা বলতে, আমি আর জামান। জামানের সাথে আমার অদ্ভুত একটা ব্যাপার হয়, সেটা হচ্ছে, আমাদের কথা কখনো শেষ হয়না, আমরা অনর্গল কথা বলতেই থাকি, আমরা ক্লান্ত হইনা। ফ্লুরোসেন্ট লাইটের হলদেটে আলোয় রাজপথ, সাঁই সাঁই করে ছুটে চলা গাড়ি, উথাল-পাথাল হাওয়া, ফুটপাতে ঘুমন্ত মানুষ, আর আমাদের আয়েশি পথচলা, অবিরাম কথামালা। দাড়ি-কমা বিহীন আমাদের সেই কথামালায় কখনো অট্টহাসিতে ফেটে পড়ি, আবার কখনোবা চোখ ভাসে, গলা ভেজে, মন ভাঙে।
আমরা অবিরাম হেঁটে চলি, গল্প করি, কথা বলি, হৃদয়ের কথা, প্রাণের কথা, হাঁসি-আনন্দ, সব সব। কথা বলে আমরা হালকা হই, যতটা হালকা হলে বাতাসে ভাসা যায়......

লেখাঃ হাটা বাবা এবং ঢাকা ভ্রমণ
© শামীম রেজা।
২১/০৩/২০১৪

Post Comment

মোড়ক উন্মোচন প্রগ্রাম, আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী

কারাগারের দিনগুলো বইয়ের পান্ডুলিপির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী এমপি প্রদত্ত বক্তব্যঃ

বিসমিল্লাহীর রহমানির রাহীম, তরুণ উদীয়মান কথা সাহিত্যিক, শামীম রেজার কারাগারের দিনগুলো পান্ডুলিপিটা আমি দেখেছি। পান্ডুলিপিটি বই আকারে প্রকাশ হতে যাচ্ছে জেনে আমি অত্যান্ত আনন্দিত হয়েছি। এবং মহান রব্বুল আলামীনের কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করতেছি, সে যে এতো বড় একটা বিশাল কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছে।

কারাগারে আমরাও ছিলাম, কিন্তু কারাগারের স্মৃতিমূলক লেখা-লেখির সাহস আমরা দেখাতে পারিনাই। শামীম রেজা কারাভোগের পরে, কারাগারের ডায়রী নামক বইতে, কারাগারের আভ্যন্তরিন টোটাল প্রশাসনটা যেভাবে তুলে ধরেছে। আমি তার এই মেধা এবং তার এই লেখনি শক্তি দেখে অত্যান্ত খুশি হয়েছি এবং আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করতেছি। ভবিষ্যতে যাতে করে সে যেনো সাহিত্যের জগতে আরো সুন্দর সাহিত্য রচনা করতে পারে, সে জন্য আল্লাহর দরবারের দোয়া করছি।

(আলহাজ্ব Shahjahan Chowdhury এম্পি, সাবেক সংসদ সদস্য ও সংসদীয় দলের হুইপ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী)



বক্তব্যের ভিডিও লিঙ্কঃ http://www.youtube.com/watch?v=_FsLFZgsW7A

Post Comment

ঢাকার দাওয়াত

গত ১৫ই মার্চ ছিলো মারদিয়া আপার জন্মদিন। অথচ আমি দাওয়াত পেলামনা, তা কি হতে পারে?! মারদিয়া আপা দাওয়াত দিতে ভুলে গেলেও আমি কিন্তু ভুল করিনাই, দাওয়াত নিয়ে নিলাম!

একটা কবিতা লিখে ফেললামঃ
আজকে আপার জন্মদিন,
দুঃখগুলো হোক মলিন।
আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে,
খুশি বাঁচুক নিশ্বাসে।
হাতে বিরাট কেক নিয়া,
বড় আপা মারদিয়া,
দাওয়াত পাবে ভাইয়ারা,
চান্স পাবেনা মাইয়ারা।
ভাইয়ারা সব রেডি হন,
জন্ম দিনের দাওয়াত লন।
কবিতাঃ মারদিয়া আপার জন্মদিন
© শামীম রেজা
১৫/০৩/২০১৪

অবশেষে মারদিয়া আপার টনক নড়লো, তিনি দাওয়াত দিলেন, সম্ভবত ভেবেছিলেন, “চিটাইঙ্গা ফুয়া” এতো দূরে আসবেনা। কিন্তু আমি এসে গেলাম, দাওয়াত খাওয়ার জন্য সেই সুদূর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এসে পৌছালাম।
গত তিন দিন ধরে বিরানি খাইনা! মারদিয়া আপার বাসায় দাওয়াত খাবো, তাই পেটের মধ্যে জায়গা রিজার্ভ রাখছিলাম। কিন্তু মারদিয়া আপা হুমকি দিয়েছেন, বিরানির পরিবর্তে বাইরানী (পিটুনি) কপালে জুটতে পারে, বাঁশেরকেল্লার সাথে ঝগড়া করায় তিনি ক্ষিপ্ত।

আমার সাথে দাওয়াতে কে কে যাবেন, ঠ্যাং তুলেন!
তুলছেন?
এবার এক ঠ্যাং-এ দাড়াইয়া থাকেন!
দাড়াইছেন?
এবার ছোট বেলায় স্কুলে পাওয়া শাস্তির স্মৃতি গুলো মনে করতে থাকেন।
ঠাং নামাইয়েননা, আমি দাওয়াত খাইয়া আসতেছি, আইসা আপনাদের সাথে বাকি কথা হবে ইনশাআল্লাহ :)

১৯মার্চ ২০১৪

Post Comment

আমরা কার সৈনিক?

গোয়ার্তুমির ধর্মের নাম ইসলাম নয় । যুদ্ধ হচ্ছে কৌশলের নাম, আপনি তরবারী দিয়েও যুদ্ধ করতে পারেন, কলম দিয়েও যুদ্ধ করতে পারেন, কথার মাধ্যমেও যুদ্ধ করা যায়। যেই কৌশলে যুদ্ধ করলে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেই কৌশলেই যুদ্ধ করতে হবে।
মাক্কী জীবনে মুসলমানরা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো, সেখানে যুদ্ধ হয়নাই। আবার হুদাইবিয়ার সন্ধীকালীন সময়ে, যুদ্ধের চাইতে চুক্তিকেই আল্লাহর রাসূল (সঃ) উত্তম মনে করেছিলেন তাই যুদ্ধের পরিবর্তে চুক্তি করেছিলেন।

থাবা বাবাকে কয়জনে চিনতো? তাকে হত্যা করা হলো, হিরো বানানো হলো। লাভ কি হলো? কিছু নিষ্পাপ ইসলাম প্রেমি ছাত্র এখন জেলের ঘানি টানছে। তারা কি পারতোনা থাবা বাবার কী-বোর্ডের বিপরীতে কী-বোর্ড ধারণ করতে?
শত্রুকে হত্যা করে তার মুখ বন্ধ করা যায়না, তার রক্ত কথা বলে। শত্রুর মোকাবেলায় কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।

সেই যুদ্ধেই অবতীর্ণ হতে হবে যেই যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, ইসলাম আত্মহত্যা করতে অনুমতি দেয়না। যদি অস্ত্র ধারণ করলেই ইসলাম বিজয়ী হবে বলে আমি বিশ্বাস করতাম, তাহলে আমিও জঙ্গীদের পক্ষ নিতাম।
কিন্তু প্রথমেই বলেছি, গোয়ার্তুমির নাম ইসলাম নয়, অস্ত্র ধারণ করতে হলেও পরিবেশের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট অস্ত্র ধারণ করার উপযুক্ত নয়। এখান ইসলামপন্থীদের অস্ত্র ধারণ করার অর্থ হচ্ছে, শত্রুর অস্ত্র শক্তির নিকট পরাজিত হওয়া, জঙ্গিবাদ দমনের অযুহাতে বাংলাদেশে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর প্রবেশ ঘটানো।

আমরা তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুললাম, লাভ কি হলো? তসলিমা নাসরিন দেশ ছেড়ে চলে গেলেন, তার লেখালেখি কি বন্ধ হয়েছে? উল্টো তিনি অর্জন করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি।
আমি তসলিমা নাসরিনের বই পড়েছি, আচ্ছা তার লেখাগুলো সাহিত্যের কোন ক্যাটাগড়িতে পড়ে? এই নিম্ন মানের লেখাগুলোকেই তরুণ সমাজের কাছে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করেছি আমরাই।
সেদিন বই কিনতে গিয়েছিলাম, দেখলাম কলেজ পড়ুয়া এক মেয়ে তসলিমার নিষিদ্ধ বই কিনলেন, ড্রেসআপ চুলের কাটিং হুবুহু তসলিমা নাসরিন, বুঝলাম তিনি তসলীমার বিরাট ফ্যান।
এর জন্য দায়ী আমরাই, আমরা যারা নিজেদেরকে মৌলবাদী দাবী করি তারাই এর পেছনে দায়ী।

রকমারী ডট কমে কোন এক নাস্তিকের বই বিক্রি করা হচ্ছে, তা নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা চড়মে পৌছে গেছে। আচ্ছা ওই নাস্তিকের পাঠক সংখ্যা কত? ঐ নাস্তিকের নাম আগে কখনো শুনেছেন?
আমি জানি, পাঠকদের বিরাট একটা অংশ বলবেন, না শুনিনাই। এই অখ্যাত একজন নাস্তিক লেখককে জাতির বিরাট একটা অংশের অনলাইন পাঠকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পেছনে মূল ভূমিকা কার?

ঠিক ধরেছেন, তিনি শফিউর রহমান ফারাবি। এখন যদি পাঠকরা ওই নাস্তিক কি লেখেছে সেটা জানার জন্য তার বই কিনে পড়া শুরু করে, তবে আপনি পাঠকদের দোষ দিতে পারবেন?
আজকে যে নাস্তিক আসিফ মহিউদ্দিনকে নিয়ে এতো কথা, লাফালাফি, ফালাফালি, আমি মনে করি আসিফ মহিউদ্দিনের এই বিরাট সংখ্যক ফলোয়ার সৃষ্টির পেছনে দায়ী হচ্ছেন এই ফারাবি।

সর্বশেষ যে কথাটি বলতে চাই, শফিউর রহমান ফারাবি কিংবা সম গোত্রিয়রা সজ্ঞানে কিংবা অজ্ঞানে যেভাবেই হোক, এদেশে নাস্তিকতার প্রচার প্রসারে ভূমিকা পালন করছেন।

লেখাঃ আমরা কার সৈনিক?
© শামীম রেজা
১৮/০৩/২০১৪

Post Comment

বল্টুর বাবা আজ ঘরে নেই

facebook link

বল্টুর সাথে আমার পরিচয় সোহেলের চা দোকানে, প্রায়ই দেখতাম দল বেধে চা খেতে আসতো। কত আর বয়স হবে, সর্বোচ্চ ৮-৯বছর। একদিন পাশে ডেকে বসালাম, জিজ্ঞাসা করলাম নাম কি?
বল্টুর লাজুক জবাব, বল্টু।
হই ব্যাটা, মানুষের নাম বল্টু হয় নাকি!
বল্টু হাসে, ঘাড় বাকিয়ে হাসে, সেই হাসিতে মধু ঝড়েনা, তবে প্রাণ ভরে।
বল্টু আঙুল উচিয়ে অন্যদের দেখায়, ওর নাম ডিব্বা! আরেক জনকে দেখায়, ওর নাম বোতল! বোতলের পাশেই আছে রেঞ্চি, রেঞ্চির পাশের পিচ্চির নাম স্যাম্পল! এবার আমিও হাসি, বল্টু হাঁসে, বল্টুর বন্ধুরাও সেই হাসিতে যোগ দেয়।
এবার কিছুটা সিরিয়াস হওয়ার পালা, বল্টুর আসল নাম কি?
বল্টু একহাত দিয়ে গোল বনের একদিক থেকে খুটে খুটে খায়, আর দুই দিকে ঘাড় নাড়ে, আসল নাম জানিনা!
কেনো জানিস না?
আমার আকিকা দেয়নাই, হেরলেইগা আসল নাম জানিনা।
চোখ গোল গোল করে জিজ্ঞাসা করলাম, আকিকা কি?
বল্টু লাজুক হাঁসে, আবার ডানে বায়ে মাথা ঝুলায়, জানিনা!

বল্টুদের জীবিকা থাকে বস্তার ভেতরে। আল্লাহ তাদের জন্য বস্তা বরাদ্দ করেছেন। প্রতিদিনই খালি বস্তা হাতে বেরিয়ে পড়ে বল্টুর দল, এখানে সেখানে খুঁজে বেড়ায়, খালি বোতল, বাতিল লোহা, প্লাস্টিক সহ বিভিন্ন বাতিল দ্রব্য। সন্ধ্যায় ক্লান্ত দেহে ফিরে আসে ভাঙ্গারীর দোকানে, বিক্রি করে যা আয় হয়, তাই জমা করে দোকান মালিকের কাছে।

আলীর বাসায় যাওয়ার জন্য প্রায়ই সর্টকাট ওয়ে হিসেবে রেললাইন ব্যবহার করি। বল্টুরা সেখানে বসে থাকে, পলিথিনে গাম রেখে মুখ বন্ধ করে দম নেয়, ঝিমায়। গামের দাম ৮টাকা।
বল্টুদের গামের আড্ডায় একদিন জয়েন করেছিলাম, বল্টু এই গামের নাম কি?
“সল্লিশন গাম”
এইটাতে দম নিলে কি লাভ?
অনেক লাভ আছে, খিদা লাগেনা। যখন বেশি খিদা লাগে, তখন পলিথিনে দম নিয়া পইরা থাকি।
খিদা লাগলে ভাত খাবি, সমস্যা কি?
বল্টু ছল ছল চোখে তাকিয়ে থাকে, টাকা না থাকলে খামু কি? দুই দিন কামে যাইনা, মাল বেচতে পারিনা, জমা টাকা সব মার কাছে দিয়া দিছি।
এবার আমার অবাক হওয়ার পালা, তোর মা আছে?! তাইলে গ্যারেজে ভ্যানের উপর ঘুমাছ কেনো? তোর মা কই থাকে?
বল্টুর সরল স্বীকারোক্তি, ঘরে সৎ বাবা, বল্টুকে কথায় কথায় মার ধর করে, তাই বল্টু ঘরে থাকেনা। যেদিন বাবা ঘরে থাকেনা সেদিন বল্টু ঘরে গিয়ে মায়ের কাছে ঘুমায়। বল্টু তার উপার্জনের টাকা মায়ের কাছে দিয়ে আসে।

বল্টুকে সেদিন হোটেলে নিয়ে গিয়েছিলাম, মনে হচ্ছিলো দীর্ঘ দিনের অভুক্ত। গোগ্রাসে গিলছিলো, আর একটু পর পরেই মাথা উচু করে হাসছিলো, নির্মল সেই হাসি, কোটি টাকা মূল্যের হাসি। বল্টুরা দাত মাজেনা, হলদেটে দাতে পোকা ধরেনা, পোকারাও বল্টুদের ভয় পায়, ক্ষুধার জ্বালায় যদি দাতের পোকা খাওয়া শুরু করে!

বল্টুকে শেষবার যখন দেখেছিলাম তখন ছেলেটি অসুস্থ, প্রচন্ড জ্বরে শরীর পুরে যাচ্ছে। বল্টুর এক পায়ে কিসের যেনো একটা ক্ষত। সোহেলের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলো বল্টু, একদিকে চায়ের কাপে গোল বন ভিজিয়ে বল্টু খায়, অন্যদিকে মাছির দল পায়ের ক্ষত স্থানে বসে বল্টুকে খায়!
আমাকে দেখেই বল্টুর মুখে সে কি হাসি, যেনো পুরানো কোনো বন্ধুকে খুজে পেয়েছে। কিছুটা রকিং মুডেই জিজ্ঞাসা করলাম, হেই বল্টু কি খবর!
সম্ভবত সহানুভূতি পাওয়ার আশাতেই দুঃখী দুঃখী মুখে বল্টু বললো, অনেক জ্বর!
কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিলাম, বল্টুরা ঠিকমতো গোসল করেনা, সারাদিন ময়লা আবর্জনাতে ঘুরে বেড়ায়, গলা সমান নর্দমায় নেমে প্লাস্টিকের বোতল কুড়ায়, বল্টুর ময়লা কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখাটাও একটু কেমন যেনো লাগে।
বল্টুকে খুশি করতেই সম্ভবত, বল্টুর কপালে হাত দিয়ে শিউরে উঠলাম, ভয়াবহ জ্বর!
স্বচ্ছল কোনো পরিবারের সন্তান হলে নির্ঘাত বল্টুর বর্তমান ঠিকানা হতো নামী দামী কোনো হাসপাতালের বেড।
বল্টুদের হাসপাতালের প্রয়োজন হয়না, জ্বর আসে জ্বর চলে যায়, পরাজিত হয় অসুখ, পরাজিত হয় সমাজ, বল্টুরা বেঁচে থাকে, একসময় পরিণত হয় শহরের নাম করা কোনো শীর্ষ সন্ত্রাসী, “টোকাই বল্টু”।

সোহেলের দোকানেই আজ বল্টুর সাথে দেখা, বল্টু এখন সুস্থ, মুঠো ভর্তি টাকা, সম্ভবত গতকাল ভালো বিক্রি হয়েছে। বল্টু একটা জুস কিনলো, একটা কেক দিতে বললো। সোহেল যে কেক দিয়েছে বল্টুর সেটা পছন্দ হয়নাই, বল্টুর দাবী অন্য প্যাকেটের আরেকটা কেক দিতে হবে।
মৃদু ঝাড়ির সুরেই সোহেল বললো, ওইটারতো দাম বেশি ওইটা ক্রিম কেক, এতো দামী কেক তুই খাবি?!
বল্টুও কম যায়না, বল্টু বললো, আমি দামী কেকই নিবো, আজকে আব্বা ঘরে নাই, আমার আম্মায় জুস দিয়া কেক খাইবো, আর আমি বইসা বইসা দেখুম।

বল্টু যে সার্ট গায়ে দিয়েছে সেটার তিনটা বোতাম ছেঁড়া, আর বল্টুর পড়নে যে ফুলপ্যান্ট রয়েছে সেটার হুক নেই, প্লাস্টিকের একটি রশিকেই বেল্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। প্যান্টের জিপারের জায়গায় একটা সেফটি পিন লাগানো।
বল্টুর একহাতে জুসের বোতল, আরেক হাতে ক্রিম কেক, মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি, চোখে স্বপ্ন, বল্টুর মা জুস দিয়ে কেক খাবে, বল্টু সামনে বসে দেখবে।

গল্পঃ বল্টুর বাবা আজ ঘরে নেই
© শামীম রেজা
১৪/০৩/২০১৪

Post Comment

একটি বই এবং কিছু স্মৃতি



একটি বই এবং কিছু স্মৃতি/১৩-০৩-১৪

ক্লাসের পড়া ফাঁকি দিয়ে গল্পের বই পড়ার নেশা ছিলো খুব, একারণে আব্বার হাতের মাইর কপালে জুটতো মাঝে মধ্যেই। আব্বার মাইরের ভয়ে কখনো কখনো খাটের নিচে, কখনোবা কাথার নিচে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে, আবার কখনো কখনো গভীর রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে, চুপি চুপি বাতি জ্বালিয়ে গল্পের বই পড়তাম। জানালা দিয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করা চাঁদের আলোয় বই পড়ার ইতিহাসও কম নেই।

ঠিক কবে বা কখন থেকে গল্পের বইয়ের ভূত মাথায় চেপে বসেছিলো সেটা মনে নেই, তবে বই পড়ার উৎসাহ কিংবা পারিবারিক পরিবেশ আমার ছিলোনা বললেই চলে।
নানু বাড়িতে গেলে খালাদের কাছ থেকে, আবার কখনোবা মায়ের কাছ থেকে আরব্য রজনীর গল্প শুনতাম, তখন অবশ্য জানতামনা এগুলোকে আরব্য রজনী বলে।

ঘরে একটা পুরানো বই পেয়েছিলাম, জালাল উদ্দিন রুমির
মসনবী। সেটা দিয়েই সম্ভবত আমার গল্পের বই পড়ার হাতেখড়ি। তন্ময় হয়ে গল্প গুলো পড়তাম, কি বুঝতাম তা জানিনা, তবে গল্প গুলো ভালো লাগতো। মসনবী থেকেই সম্ভবত আমার গল্পের বই সংগ্রহের শুরু। তখন বই পড়ার চাইতে বই সংগ্রহ করার প্রতিই আমার মনযোগ বেশি ছিলো। পুরাতন ছেঁড়া বই গুলোকে সুন্দর করে সেলাই করে সাজিয়ে রাখতাম, আর প্রতিদিন গুণে দেখতাম কয়টা বই হলো।

প্রাইমারী স্কুল জীবনে প্রচুর পরিমাণে রুপকথার বই কিনতাম, পড়তাম। ভারতীয় কমিক বইও পড়তাম। টিফিনের টাকা বাঁচিয়েই কিনতাম গল্প-কমিক বই।
কিশোর কন্ঠের ছিলাম অন্ধ ভক্ত, মাস শেষেই পত্রিকার জন্য অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখতাম

খালাতো ভাই শাহাদাত হোসাইন একদিন শুনালেন অদ্ভুত এক বইয়ের কথা। সেই বইয়ে এক নায়ক আছে নাম
আহমদ মুসা, হেব্বি পাওয়ার ফুল সেই নায়ক, গুন্ডারা নায়ককে বাইন্ধা রাখে, বিমানে কইরা নিয়া কোনো কোন দ্বীপে আটকাইয়া রাখে, নায়ক অনেক অনেক বুদ্ধিমান, ক্যামনে ক্যামনে জানি মুক্তি পেয়ে যায়। ছেড়া চিঠির টুকরো জোড়া লাগিয়ে উদ্ধার করে শত্রুর ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা।
হাতে তুলে নিলাম সাইমুম-১,
অপারেশন তেলআবিব বিশাল আকাঙ্খা নিয়ে শুরু করলাম পড়া, এক পাতা, দুই পাতা এভাবে পড়ে ফেললাম বিশ-পঁচিশ পাতা। কিছুই মাথায় ঢুকেনা, প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র ছিলাম, ক্লাস থ্রির একটা বাচ্চা যদি অপারেশন তেল আবিব পড়া শুরু করে তাহলে অবস্থা যা হওয়ার তাই হলো। বিরক্ত হয়ে পড়া বন্ধ করে দিলাম।

ক্লাস সিক্সে ভর্তি হলাম চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল স্কুলে, আমাকে আর পায় কে! স্কুলের পাশেই নূপুর মার্কেট পুরাতন বইয়ের দোকান। গাড়ি ভাড়া আর টিফিনের টাকা মিলিয়ে আব্বা প্রতিদিন ১৫টাকা করে দিতেন। টাইগারপাস মোড় থেকে নিউমার্কেটের বাস ভাড়া ছিলো এক টাকা, যেতে আসতে দুই টাকা।

টিফিনে কিছুই খেতামনা, সেই টাকা বাঁচিয়ে প্রতিদিন একটা করে বই কিনতাম। কখনো কখনো পছন্দের বইয়ের দাম একটু বেশি হলে, বাসের পরিবর্তে আল্লাহ প্রদত্ত পা দুটোকেই ব্যবহার করতাম, বেঁচে যেতো বাস ভাড়ার দুই টাকা।

বই ছিলো আমার জন্য নেশার বস্তু, মানুষ যেমন আফিমের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে, আমিও তেমনি বইয়ের নেশায় বুঁদ হয়ে যেতাম। বইয়ের রাজ্যই ছিলো আমার দুনিয়া। ঘরের আনাচে কানাচে কেবল বই আর বই, বিছানার উপরে বই, জানালার উপরে বই, টেবিলের উপরেতো বই আছেই, বালিশের উপরে এবং বিছানার নিচেও বই। এলাকার অন্য ছেলেরা যখন খেলার মাঠে ব্যস্ত থাকতো আমি তখন বইয়ের সাগরে হাবু ডুবু খেতাম।
পরীক্ষার আগের রাতে গল্পের বই পড়ার রেকর্ড সম্ভবত আমার একারই আছে।

অন্যান্য দিনের মতোই একদিন গভীর রাতে চুপি চুপি উঠে গল্পের বই পড়ছিলাম, সেটা ছিলো সম্ভবত তিন গোয়েন্দা সিরিজের একটি ভলিউম। বই শেষ করতে করতে ভোর হয় হয় অবস্থা।
ঘুম ভেঙেছিলো সকাল ১০টায়, আব্বার হৈ চৈ-এর তীব্র শব্দে, আমার ক্লাসের সবগুলো বই তখন বাহিরে গড়া গড়ি খাচ্ছে, আব্বা ফেলে দিয়েছেন। তীব্র ক্ষোভে আব্বা বলছিলেন,
তোর আর লেখা পড়া করার দরকার নাই!
আমি মনে মনে ভাবছিলাম, ইশ! সত্যিই যদি লেখা পড়াটা বন্ধ হয়ে যেতো, অনেক ভালো হতো, কোনো একটা বইয়ের দোকানে চাকরী নিয়ে নিতাম, সারাদিন শুধু গল্পের বই, অনেক অনেক মজা!

অনেক কথা বলে ফেললাম, অনেক অনেক স্মৃতিচারণ। আজকে একটি বই হাতে পেলাম, সম্পূর্ণ নতুন বই। নতুন বইয়ের কালির,কাগজের, অদ্ভুত সেই ঘ্রাণ, ফেলে আসা সেই শৈশবের ঘ্রাণ, সবই পাচ্ছিলাম এই বই থেকে, অথবা তার থেকেও কিছুটা বেশি। এবং সবচাইতে বেশি যেটা মজার, সেটা হচ্ছে এই বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে আমার আব্বা-আম্মাকে। এবং তার চাইতেও আনন্দের যে ব্যাপার সেটা হচ্ছে, এই বইটির লেখক আমি নিজেই, আলহামদুলিল্লাহ।
আমি জানি, আমার পাঠকরা ইতোমধ্যেই কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছেন। হ্যা, বেরিয়েছে সেই পরম আকাঙ্খিত
কারাগারের দিনগুলো বইটি।


বই-কারাগারের দিনগুলো
প্রকাশক-ফেরদৌস বারী
প্রকাশনায়- উচ্ছ্বাস প্রকাশনী
মূল্য-১৫০

প্রাপ্তিস্থানঃ
চট্টগ্রাম-আজাদ বুকস, আন্দরকিল্লা, বিআইএ
ঢাকা-টেক্সাস কম্পিউটার্স, বাংলাবাজার
ডাক যোগে বই পেতেঃ ০১৮১৮৭৬৩৯৬৮

Post Comment

আপনি জুতো চোর

কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা গিয়েছিলাম। মাগরিবের সময় হলো, শাহী জামে মসজিদে ঢুকতে ঢুকতে জামায়াত রুকুতে চলে গিয়েছে, জুতার বাক্সে জুতাটা ছুড়ে দিয়ে কোনো ক্রমে রুকু ধরলাম।
নামাজ শেষ, আমার জুতাও শেষ!! চোরে নিয়ে গেছে, শুধু আমারটাইনা, আরো বেশ কয়েকজনের জুতা গায়েব।

পকেটে খুব একটা টাকা ছিলোনা, সব মিলিয়ে হাজার খানেক। দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে খালি পায়েই ভবঘুরের মতো নিউ মার্কেটের পথে হাটা শুরু করলাম। অন্য রকম এক ফিলিংস, এই পথ ধরে খালি পায়ে কখনো হাটা হয়নাই। শির শিরে বাতাস এসে খোলা পায়ে পরশ বুলিয়ে দিচ্ছিলো, ঠান্ডা ঠান্ডা একটা অনুভূতি। খালি পায়ে নগর ভ্রমন ভালোই লাগছিলো, পায়ের নিচে পিচ ঢালা রাজপথ, নুড়ি পাথর, বালু, মানুষের অদ্ভুত চাহনী, সব মিলিয়ে আমি অন্য মানুষ।

আমতলা মোড়ে চোরাই জুতার পশরা সাজিয়ে সাড়ি সাড়ি বসে আছে শ'খানেক জুতা ব্যবসায়ী, দেশী বিদেশী নানান রকম জুতা। সদ্য মসজিদ হতে চুরি করে আনা নতুন জুতাও দেখা যাচ্ছে। মানুষ দলে দলে জুতো কিনছে, ৫হাজার টাকার জুতো ৫শত টাকা দিয়েই পাওয়া যাচ্ছে, মানুষ কিনবেনা কেনো?

একটা ঘটনা মনে পড়ে গেলো, বাংলাদেশের একটি ইসলামী সংগঠনের দুই কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল গিয়েছিলেন ভারত সফরে, সম্ভবত ভারতের কোনো ইসলামী সংগঠনের দাওয়াতে কোনো কনফারেন্স যোগ দিতে। নামাজের সময় হলো, রাস্তার ধারেই এক মসজিদে ঢুকলেন নামাজ আদায় করতে।
আমাদের বাংলাদেশীদের অভ্যেস মতোই তারা মসজিদের দরজার সামনে জুতো খুলে, জুতো হাতে নিয়ে মসজিদে ঢুকলেন। এই দৃশ্য দেখেই মুসল্লিরা ছুটে এলো, কেউ কেউতো মারমুখি ভঙ্গিতে হম্বি-তম্বি শুরু করলো। ব্যাটা বেয়াদ্দব মসজিদ অবমাননা করে, কতবড় সাহস মসজিদে জুতা ঢুকিয়েছে! হতভম্ব দায়িত্বশীল দ্বয় ঘটনার আকস্মিকতায় কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলেন, পরে উত্তেজিত মুসল্লিদের কোনো রকমে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিবৃত করলেন যে, আসলে বাংলাদেশে মসজিদে জুতো চুরি হয়, তাই জুতো চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে তারা জুতো হাতে মসজিদে প্রবেশ করে।

কাহিনী শুনেতো তারা অবাক! মুসল্লিদের জুতা চুরি করে, এমন খারাপ মানুষ দুনিয়াতে আছে?!! দায়িত্বশীল দ্বয়ও কম অবাক হননাই, ভারতের মতো হিন্দু প্রধান দেশে মুসলমানরা মসজিদে জুতো চুরির আশংকা করেনা, অথচ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশের মানুষ চোরের ভয়ে, মসজিদের ভেতর নাপাক জুতো সামনে রেখে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা প্রদান করে!

যাই হোক যে কথা বলছিলাম, চট্টগ্রামের আমতলা মোড় কিংবা ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সস্তা দামে যে জুতো বিক্রয় করা হয়, সেগুলো কোথা হতে আসে? এই বিপুল সংখ্যক জুতোর অধিকাংশই আসে মসজিদের মুসল্লিদের কাছ থেকে চোরের মাধ্যমে।
আপনি আমি যদি সস্তায় পেয়ে সেই চোরাই জুতো কিনি তাহলে প্রকারান্তরে আপনি-আমিও মসজিদের জুতো চুরি করলাম।
আপনি যদি চোরাই জুতো না কেনেন, তবে চোরেরা জুতো চুরি করবে কেনো? আপনি কিনছেন বলেই তারা চুরি করছে। এবং আপনি সেই চুরিতে শরীক হচ্ছেন।

এইযে মসজিদে জুতো চুরি হচ্ছে এর পরিণতি কি, এটা কি শুধুই জুতো চুরি, নাকি অন্য কিছু? আজকে যে লোকটির ৫হাজার টাকা দামের জুতো মসজিদ হতে চুরি হয়ে গেলো, কালকে সেই ব্যাক্তি নতুন জুতো নিয়ে মসজিদে যেতে ১০বার চিন্তা করবে। সবাইতো আর আপনার মতো ঈমানদার ব্যাক্তিনা, জুতো চুরির ভয়ে অনেক মুসল্লিই টাইম মতো জামায়াতে নামাজ আদায় করেনা।

সর্বেশেষ যে প্রশ্নটি করেই লেখাটি শেষ করবো সেটা হচ্ছে, আপনার বিবেকের কাছেই প্রশ্ন করুন, আপনি কি চকচকে বিদেশী জুতো দেখে, মসজিদের চোরাই জুতো ক্রয় করেছেন?
তাহলে আপনি একটা জুতা চোর! হ্যা, আপনি মুসল্লিদের জুতো চোর!

লেখাঃ আপনি জুতো চোর
(c) শামীম রেজা
১০/০৩/২০১৪

Post Comment

স্বাধীনতার ঘোষণা ও শেখ মুজিব

কোনো আওয়ামীলীগারকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা কে দিয়েছিলো। সাথে সাথেই জবাব আসবে শেখ মুজিবুর রহমান।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমি এ পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানের কন্ঠে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা শুনিনাই। এমনকি শেখ মুজিব নিজেও কখনো বলেননাই, তিনি স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছিলেন।

লেখার এ পর্যায়ে এসে হয়তো অনেক আওয়ামীলীগার আমার উপর চটে যাবেন, তারা আমার চোখের সামনে আঙুল নাচিয়ে বলবেন, “আপনি কি আন্ধা, চোখে দেখেননা? আপনি কি বয়রা, কানে শোনেননা?”
অবশ্য সামনা সামনি হলে ব্যাপারটা ভিন্নও হতে পারে, আওয়ামী র‍্যাবের হাতে পড়লে ক্রস ফায়ার, আর ছাত্রলীগের হাতে পড়লে চাপাতির কোপ!

সে যাই হোক, যে ব্যাপারে বলছিলাম, তারা আমাকে ৭ই মার্চের বক্তব্য শুনিয়ে দিবেন, “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। যেহেতু শেখ মুজিব বলেছেন “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম", সেহেতু এটাই স্বাধীনতার ঘোষনা।
সুন্দর যুক্তি, এবার যদি প্রশ্ন করা হয়, বক্তব্যের শেষে স্লোগানে শেখ মুজিব “জয় বাংলা”র পরে পাকিস্থানের দীর্ঘ জীবন কামনা করেছিলেন কেনো? তখনই তারা আকাশ হতে পরবেন, “না, শেখ মুজিব একথা বলতে পারেননা”।

মূলত ৭১সালটাই ছিলো শেখ মুজিবের জন্য চরম আতঙ্কের একটি সময়। শেখ মুজিব জানতেন, যদি তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা দেন, তবে সেনাবাহিনী তাকে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে হত্যা করবে। আবার যদি তিনি স্বাধীনতার ঘোষনা না দেন, তবে স্বাধীনতাপন্থীরা তাকে হত্যা করবে। শেখ মুজিব উভয় সংকটে পড়ে গিয়েছিলেন।

তার এই আশঙ্কার কথাই তিনি ব্যাক্ত করেছিলেন, গভর্ণরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর নিকট। ১৯৭১ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী শেখ মুজিব বলেন, “আমার অবস্থা দু পাশের আগুন- মাঝখানে আমি দাঁড়িয়ে। হয় সেনাবাহিনী আমাকে মেরে ফেলবে না হয় আমার দলের চরমপন্থীরা আমাকে মেরে ফেলবে। কেন আপনারা আমাকে গ্রেফতার করছেন না”।( সিদ্দিক সালিকের নিয়াজীর আত্মসমর্পনের দলিল পৃঃ ৫৬)

তৎকালীণ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহাম্মদ ২৫ মার্চ রাত নয়টায় একটি টেপ রেকর্ডার আর একটি ক্যাসেট নিয়ে শেখ মুজিবের ঘরে গিয়ে বলেছিলেন, আজ স্বাধীনতার ঘোষণাটি দিয়ে যান। আমরা সেটি রিলে করে রেডিওর মাধ্যমে প্রকাশ করব। জনগণ জানতে পারবে আপনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু শেখ মুজিব রাজী হন নাই। তিনি বলেছিলেন, ঘোষণাটা দিয়ে কি রাষ্ট্রদ্রোহীতায় পড়ব? আমি এটা পারব না।

মূলত শেখ মুজিবুর রহমান নিজেও স্বাধীনতা চাননাই। তিনি চেয়েছিলেন, অখন্ড পাকিস্থানের প্রেসিডেন্ট হতে। পূর্ণাঙ্গ একটি দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও, সেই দেশের অর্ধেকের প্রেসিডেন্ট হতে কে চাইবে, শেখ মুজিব কি গাধা ছিলো?!
শেখ মুজিব মূলত এদেশের মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা করেছিলো। এদেশের জনগণের মনমানসে উগ্রজাতীয়তাবাদের আগুন প্রজ্বলিত করে ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিল করেছিলো।

যারা বলেন, শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ঘোষণাটাই হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা, তাদের প্রতি অনুরোধ রইলো, আপনারা আজ হতে ২৬মার্চের পরিবর্তে ৭ই মার্চকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করুন। ২৬মার্চ স্বাধীনতা দিবস আপনাদের জন্য নয়।

লেখাঃ স্বাধীনতার ঘোষণা ও শেখ মুজিব
© শামীম রেজা
০৭/০৩/২০১৪

Post Comment

মুজিব বনাম হাসিনা।

শেখ মুজিবের শাসনামলের ঘটনা, টঙ্গীতে মেজর নাসের তিন ব্যক্তিকে আটক করেন। আটক এই তিন ব্যক্তি ছিলো, আওয়ামীলীগ নেতা মোজাম্মেল ও তার দুই সহযোগী, এদের অপরাধ ছিলো জঘন্য। এক নব বিবাহিত দম্পত্তির গাড়িতে হামলা করে স্বামী এবং গাড়ির ড্রাইভারকে হত্যা করে, মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যায় মোজাম্মেল ও তার বাহিনী। তিনদিন পরে ধর্ষিতা মেয়েটির লাশ পাওয়া যায় একটি ব্রিজের পাশে।

মোজাম্মেল তার মুক্তির জন্য তিনলক্ষ টাকা ঘুশ অফার করে। দম্ভ করেই মোজাম্মেল বলছিলো, আজ হোক কাল হোক আমাকে ছেড়ে দিতেই হবে, শুধু শুধু ঝামেলা না করে টাকাটা নিয়ে আমাকে ছেড়ে দেন।
মোজাম্মেলের কথা শুনে ক্ষিপ্ত মেজর নাসের তাকে আদালতে সোপর্দ করে। নাসেরের ইচ্ছে ছিলো, এই নৃশংস ঘটনার জন্য ওই ব্যাক্তিকে ফাঁসিতে ঝোলানো। কিন্তু শেখ মুজিবের নির্মম পরিহাস! কিছুদিনের মধ্যেই মোজাম্মেল মুক্তি অবস্থায় গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরা ফেরা করতে লাগলো।

১৯৭৪ সালের জুলাই মাস, সন্ত্রাস বিরোধী এক বিশেষ অভিযানে মেজর ফারুক এক ডাকাত সর্দারকে গ্রেপ্তার করে। এই ডাকাত সর্দার নিজ হাতে একুশ জন মানুষকে হত্যা করেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে সেই ডাকাত সর্দার বলে, যাই করেছি ওস্তাদের নির্দেশে করেছি। তার ওস্তাদের কথা জানতে চাইলে, ডাকাত সর্দার জানিয়ে দেয়, তার ওস্তাদ হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমান!

২০০০সালের ১৮সেপ্টেম্বর, লক্ষিপুরের বিএনপি নেতা এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামকে তার বাড়ি হতে অপহরণ করে নিয়ে যায় আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসী কুখ্যাত তাহের বাহিনীর প্রধান আবু তাহেরের ছেলে বিপ্লব। এই তাহের বাহিনী লক্ষিপুরের অধিবাসীদের নিকট মূর্তিমান আতঙ্ক।
এক জনসভায় তাহের বাহিনীর প্রধান আবু তাহের দম্ভ করেই উচ্চারণ করেছিলো, "আমার বিরুদ্ধে যে সাংবাদিক কলম ধরে, আমি সেই সাংবাদিকের হাত-পা কেটে নেই!"
বিপ্লব তার বাহিনী নিয়ে নুরুল ইসলামকে অপহরণ করার পরেই পুলিশ তাকে উদ্ধারে নানা মুখী অভিযান পরিচালিত করে। অবশেষে তাহের বাহিনীর প্রধান আবু তাহের পুলিশকে আশ্বস্ত করে, এ্যাডভোকেট নুরুল ইসলামকে মুক্তি দেয়া হবে।
শেষ পর্যন্ত আবু তাহের এবং তার ছেলে বিপ্লব কথা রাখে নাই। জনাব নুরুল ইসলামকে হত্যা করে তার লাশ টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়।
জনাব নূরুল ইসলামের স্ত্রী আক্ষেপ করে বলছিলেন, “আমার স্বামীকে হত্যা করার পর বিপ্লবরা তার লাশটি পর্যন্ত ফেরত দেয়নি। টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিল”।

অপরাধ সন্দেহাতীত ভাবে প্রামানীত হওয়ায় বিপ্লবের ফাঁসির রায় দেয়া হয়। কিন্তু শেখ হাসিনার কি নির্মম পরিহাস! এক ঘোশণার মাধ্যমে পুতুল রাষ্ট্রপতি বিপ্লবকে ক্ষমা করে দিলেন।
সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, আওয়ামীলীগের এই শাসনামলে রাষ্ট্রপতি ৩০জন খুনিকে ক্ষমা করে দিয়েছেন!

আমার এলাকার একটি ঘটনা উল্লেখ করেই লেখাটি শেষ করবো। তখন আমি ছাত্রশিবিরের একটি সাংগঠনিক ইউনিট সভাপতি, নতুন এলাকায় দায়িত্ব নিয়ে যে মানুষটির আন্তরিক সহযোগীতায় আমি মুগ্ধ, তিনি হচ্ছেন জাহিদ ভাই। এমন কোনো দিন নাই, তার সাথে দেখা হয়েছে আর তিনি থেমে দাড়িয়ে আমার খোঁজ নেন নাই। সদা হাস্যময় এই মানুষটির হাসি মুখ দেখলেই যে কারো মনে হবে কতদিনের চেনা, কত আপন।
একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে কর্মরত জাহিদ ভাই অফিস হতে ফিরে যতটুকু সময় পান পরিবার এবং সংগঠন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন।

১৪ ডিসেম্বর ২০১৩, অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক নিয়মে ছোট্ট একটা ফুট-ফুটে মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে রাতের খাবার সেরে ঘুমাতে গেলেন।
কিন্তু এই স্বাভাবিকতার আন্তরালেই কি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি বিরাজ করছে জাহিদ ভাই সেটা কল্পনাও করতে পারেন নাই।

রাত একটার দিকে স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা তার বাসায় হামলা করলো। দরজার ধুম ধাম লাথি এবং গালাগালির শব্দে হত-চকিত হয়ে দরজা খুলে দিলেন তিনি। হুড় মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়লো একদল আওয়ামী সন্ত্রাসী।
যে যা পারছে লুট করে নিচ্ছে, আলমারীর তালা খুলে স্ত্রীর স্বর্ণের যাবতীয় গয়না নিয়ে নিলো। ড্রয়ার থেকে নগদ টাকা, মোবাইল, ঘড়ি, যা যা নেয়া সম্ভব সবই লুট করা হলো। সব চাইতে ভয়াবহ যে ব্যাপার সেটা হচ্ছে, একজন তার ছোট্ট মেয়েটির গলায় ছুড়ি ঠেকিয়ে বললো, ‘হৈ-চৈ করলে জবাই করে ফেলবো!’
স্ত্রী-সন্তানের সামনেই নির্দয়ভাবে পেটানো হলো জাহিদ ভাইকে, একজন তার মটর সাইকেলের তালা ভেঙে সেটাও নিয়ে গেলো।
লুটপাট শেষ হলে জাহিদ ভাইকে ঘর থেকে বের করে আনা হলো, অতি উৎসাহী দুই-চারজন বলছিলো, ‘বউটাকেও নিয়ে চল’। পরবর্তীতে সন্ত্রাসীদের মধ্যে নেতা গোছের একজন তাতে হস্তক্ষেপ করে বললো, ‘মহিলাদের গায়ে হাত দিসনা!’

চোরের মতোই পেটাতে পেটাতে জাহিদ ভাইকে নিয়ে যাচ্ছিলো সন্ত্রাসীরা, পেছন থেকে চোখের পানি ফেলা ছাড়া কিছুই করার ছিলোনা তার স্ত্রীর। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আতঙ্কে পাড়া-প্রতিবেশি কেউই বেড়িয়ে আসেনাই এই পরিবারটিকে রক্ষা করতে।
সারা রাত ধরে জাহিদ ভাইকে আটকে রাখা হলো একটি বস্তিতে, চালানো হলো অমানুষিক নির্যাতন। এরই মধ্যে এক আওয়ামী নেতা বাসায় এসে হুমকি দিয়ে গেলো, “টাকা দিতে হবে, নয়তো জাহিদের লাশও খুঁজে পাওয়া যাবেনা”।

পরের দিন সকালে জাহিদ ভাইকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হলো, জাহিদ ভাইয়ের হাতে একটি পাইপগান! পুলিশ মামলা নথিবদ্ধ করলো, “স্থানীয় এলাকাবাসীর হাতে অস্ত্র সহ জামায়াত সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার”।

যার বাসা লুট করা হলো, সারাটি রাত ধরে যার উপর নির্যাতন চালানো হলো, তিনি হচ্ছেন সন্ত্রাসী। আর যারা নির্যাতন লুটপাট করে তার হাতে অস্ত্র দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিলো, তারা হচ্ছে এলাকাবাসী!! আলেকজান্ডার বেঁচে থাকলে হয়তো বলতেন, "সত্যি সেলুকাস, কি বিচিত্র এই বাকশালীরা!"

জাহিদ ভাই এখনো কারাগারে বন্দী আছেন, ছোট ফুট-ফুটে মেয়েটি এখনো তার বাবাকে খুঁজে ফিরে, এঘর, ওঘর, সারা বাড়ি।
জাহিদ ভাইয়ের সাথে দেখা করতে কারাগারে গিয়েছিলাম, মুখের সেই নির্মল হাসি এখনো অমলিন। ইসলামী আন্দোলনের সৈনিকরা সর্বাবস্থাই আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট, তাদের হাসি অমলিন থাকে চিরদিন।

শেখ মুজিবের শাসনামল ও শেখ হাসিনার শাসনামলের যদি তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হয়, তবে স্বৈরশাসনে নোবেল পুরস্কার কাকে দেয়া যায় সেটা নিয়ে নোবেল কমিটি ভালোই দ্বিধায় পড়ে যাবে।

লেখাঃ মুজিব বনাম হাসিনা।
© শামীম রেজা
০৬/০৩/২০১৪

Post Comment

মাজার নিয়ে মজারু

নামের আগে হজরত এবং নামের শেষে শাহ লাগিয়ে দিলেই হবে, মাঝখানে যাই থাকুক, আপনি একটি মাজারের মালিক!
চট্টগ্রামে একটি মাজার আছে নাম হজরত বদনা শাহ্‌’র মাজার। এ প্রসঙ্গে ফুরফুরার পীর সাহেব এক মাহফিলে বলেছিলেন, “এখন যেখানে যাই সেখানেই দেখি “শরীফ”। আজমীর শরীফ, ভান্ডার শরীফ, ওমুক শরীফ, তমুক শরীফ। শরীফে শরীফে এখন এমন অবস্থা হইছে যে, যদি বলি কই যান? জবাব দিবে, বদনা শরীফ নিয়ে, টয়লেট শরীফে যাচ্ছি!”

চট্টগ্রামের স্থানীয় ভাষায় মাজার বিষয়ক একটি প্রচলিত শব্দ হচ্ছে “মাজার গরম”। এখানে “মাজার গরম” বলতে সেসব মাজারকে বোঝানো হয়ছে যেসব মাজারের মরহুম বাবাকে টাকা-পয়সা এবং নাচ-গান করে সন্তুষ্ট করে, কিছু চাইলেই সহজে পাওয়া যায়। আর যদি মাজারের মরহুম পীর সাহেবের সাথে কোনোভাবে বেয়াদ্দবী হয়ে যায় তবে খবর আছে! বাবার অভিশাপে সব লন্ড-ভন্ড হয়ে যাবে।

মাজারে একটি ব্যাপার কাজ করে সেটা হচ্ছে মরহুম পীর সাহেবের কাছে নালিশ করা যায়, এবং বিচারের রায় নিজের পক্ষে নেয়ার জন্য ঘুশ দেয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে! একটি উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটি ক্লিয়ার হয়ে যাবে, ধরেন আপনার সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে, এখন আমি যদি চট্টগ্রামের মাজার ভক্ত কেউ হয়ে থাকি, তবে আপনাকে শায়েস্তা করার জন্য আমি যেটা করবো সেটা হচ্ছে, দুইটা মোমবাতি এবং কিছু আগর বাতি নিয়ে মরহুম পীর সাহেবের কবরের সামনে গিয়ে হাজির হবো। বাবাকে মোমবাতি এবং আগরবাতি ঘুশ দিয়ে বলবো, বাবা ওকে শায়েস্তা করে দেন।
আবার ধরেন, আপনার মেয়ের বিয়ে হচ্ছেনা, মাজারে গিয়ে কিছু মোমবাতি, আগরবাতি এবং মরহুম বাবার পায়ের কাছের দানবাক্সে কিছু টাকা দিয়ে আসবেন। এবার শুধু নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমাবেন, বাবা কবে আপনার ইচ্ছা পূরণ করে দেয়!

এই “মাজার গরম” নিয়ে দুটি ঘটনা’র উল্লেখ করছি। একবার মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী চট্টগ্রামে আসছিলেন, তাফসীরুল কোরআন মাহফিলে বক্তব্য রাখার জন্য। তার গাড়ি বহর যখন সীতাকুন্ডের “বার আউলিয়া” নামক মাজারের সামনের সড়ক অতিক্রম করছিলো, তখন সেই মাজারের একদল খাদেম তার গাড়ি আটকে দেয়। তাদের দাবি এই “মাজার গরম” মাজারের সামনে দিয়ে গাড়ি স্লো করে যেতে হবে। এখান দিয়ে যদি গাড়ি জোড়ে চলে তবে বাবার সাথে বেয়াদ্দবী করা হবে!
বার আউলিয়া’র মাজারের খাদেমদের সেই ফাইজলামি ছোট বেলায় আমিও দেখেছি, এখন অবশ্য তাদের দৌড়াত্ব অনেক কমে গেছে। গাড়ি স্লো করার আসল মুজিজা হচ্ছে, এই সড়ক দিয়ে যাত্রীবাহী গাড়ি যাবে, আর তার প্যাসেঞ্জাররা মাজারে টাকা ছুড়ে দিতে সুবিধা হবে!
আমরা অনেকেই সুফি মিজানের নাম শুনেছি, তিনি পিএইচপি গ্রুপের মালিক। চরম মাজার ভক্ত এই মানুষটি, হাতে তসবি এবং দাড়ি টুপি পরে নানা রকমের কু-কর্মের জন্য ব্যাপক সমালোচিত।
সেদিন শুনলাম, এই সুফি মিজান নাকি একটি মাজারের কবরে এসি ফিট করে দিয়েছেন। মাজারে এসি ফিট করার কারণ হচ্ছে “মাজার গরম”, মরহুম বাবাকে এসি’র হাওয়া খাইয়ে ঠান্ডা রাখা!

সিলেটে বেড়াতে গিয়েছিলাম, শাহজালাল (রঃ) এর মাজার দর্শন শেষে গেলাম শাহপরান (রঃ) এর মাজার দর্শন করতে। কিছু লোক দেখলাম কবরের উপর ছিটানো গোলাপ জল হাত দিয়ে মুছে, মাথায় এবং মুখে মাখছে, অশেষ বরকতময় বাবার মাজারের এই গোলাপজল, আপনার মনের সকল আশা পূরণ করে দিবে! একলোক দেখি, কবরের খুটির সাথে মাথা ঠুকে ঠুকে চেঁচাতে চেঁচাতে বলছে, “বাবা দে, বাবা দে, তুই না দিলে কে দিবো?!”
সেদিন পত্রিকায় দেখলাম ভারতের আজমীর শরীফে হিন্দী সিনেমার নায়ক নায়িকারা দোয়া নিতে যায়। কেউ কেউ আবার অশ্লীল নাচ-গানের সিডি বাবার কবরের পাশে রেখে আসে। মনে সুপ্ত আকাঙ্খা, বাবার দোয়ায় ক্যাটরিনা-ঐশ্বরিয়াদের কোমড়ের ভাজ দর্শক হৃদয়ে আলোড়ন তুলবেই!

বাংলাদেশে সম্ভবত সবচাইতে বেশি মাজারের সংখ্য চট্টগ্রামে, এই জেলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য মাজার। চট্টগ্রামের নাজিরহাটে বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ফজরের নামাজের পরে বন্ধুর পিচ্চি ভাইকে নিয়ে এলাকা ঘুরতে বের হলাম। এক যায়গায় দেখি পাশাপাশি পাঁচটি কবর এবং একটা কবরের সাথে আরেকটা কবরের দূরত্ব অনেক কম, একেবারে গায়ে গা লাগানো অবস্থা।
কিছুটা কৌতুহল নিয়েই ছোট ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম, এগুলা কার কবর?
ছোট ভাই জবাব দিলো, এগুলা কবর না। এইটা হচ্ছে মাজার, পাঁচ পীরের আস্তানা।
অবাক হয়েই জানতে চাইলাম, কবর না হলে কবরের মতো আকৃতি কেনো? আর পাঁচ পীরের আস্তানা নামইবা কেনো?
ছোট ভাই জবাব দিলো, আমার নানা স্বপ্নে দেখেছে, এখানে পাঁচজন পীর বসে আছে। তাই এখানে পাঁচজন পীরের কবর বানিয়ে মাজার তৈরী করা হয়েছ। এখন প্রতিবছর এখনে ওরস করা হয়।
সৌভাগ্যক্রমে নাকি দূর্ভাগ্যক্রমে জানিনা, সেদিনই ছিলো ওরসের দিন। মাইকে ব্যাপক গান-বাজনা এবং ভক্তদের দেয়া মহিষ জবাই করে ওরস উদযাপন করা হলো।

চট্টগ্রামের কয়েকটি মাজারের নাম এবং তার কেরামতি উল্লেখ করছি।

বদনা শাহ’র মাজারঃ মাজারের গেটের দুইপাশে দুইটা মদনা ঝুলানো আছে। উপরে লেখা, হজরত বদনা শাহ (রঃ) এর মাজার।

মিসকিন শাহঃ এই “শাহ” সম্ভবত মিসকিন ছিলেন, বাংলা সিনেমাতে যেমন আকাশ স্বাক্ষী, বাতাস স্বাক্ষী করে নায়ক-নায়ীকারা বিয়ে করে। ঠিক তেমনি করেই, অনেক প্রেমিক প্রেমিকা এখানে এসে বাবার কবর স্বাক্ষী করে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে। কাগজপত্র এবং কলেমার প্রয়োজন হয়না।

গরম বিবির মাজারঃ এই বিবি কেমনে গরম হইছে সেটা আমি জানিনা, তবে সম্ভবত স্বামী প্রতিদিন তার হাতে ধোলাই খাইতো। এই মাজার নাকি খুবই গরম, আপনার শত্রু যদি মাজারে মোমবাতি দিয়ে আপনাকে অভিশাপ দেয়, তবে আপনি শ্যাষ!

ডাইল-চাইল শাহ’র মাজারঃ চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে আছে হজরত ডাইল-চাইল শাহ’র মাজার। মিসকিন শাহ যদি ডাইল-চাইল শাহ’র সাথে খাতির করতে পারতেন, তবে তিনি সম্ভবত আর মিসকিন থাকতেননা।

ল্যাংটা বাবার মাজারঃ আমার এক বন্ধু একবার গিয়েছিলো ল্যাংটা বাবার মাজার দেখতে। বিশ টাকা টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকে দেখে, ময়লা শরীরের এক পাগল বসে আছে, বাস্তবিক অর্থেই নামের দিক থেকে তিনি সঠিক ছিলেন। বন্ধুটি হাসতে হাসতে বলছিলো, গিয়েছিলাম বাবার দোয়া নিতে, কিন্তু এইটা আমি কি দেখলাম!!
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একবার প্যারেড ময়দানের তাফসির মাহফিলে বলছিলেন। “সতর ঢাকা ফরজ। ল্যাংটা বাবা তাইলে বাবা হইলো কেমনে?!”

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো, হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে ভেদাভেদ নিরসন করা। মাজার ভক্তরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পুরণ করার ক্ষেত্রে একশত পার্সেন্ট সফল হয়েছে। আজ দরগা ও দুর্গার মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। “তোমাদের যা দূর্গা, আমাদের তা দরগা!”
আসুন মাজার পূজারীদেরকে বঙ্গবন্ধু পদক প্রদান করে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠন করি।

লেখাঃ মাজার নিয়ে মজারু
© শামীম রেজা
০৫/০৩/২০১৪

Post Comment

সরকার পতনের উপায় সমূহ


বেগম খালেদা জিয়া বক্তব্য রাখলেন, উপজেলা নির্বাচনের পরে কঠোর আন্দোলন করবেন। সম্ভবত জাতিকে নতুন করে কিছুটা আশার আলো দেখানোর জন্যই তিনি এই বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি’র এই কঠোর আন্দোলনের ঘোশণাকে সাধারণ জনতা মগা হারবালের ঔষধের চাইতে মূল্যবান কিছু মনে করে বলে মনে হয়না।
বিগত পাঁচটি বছর ধরে জনগণ কখনো রমজানের ঈদের পরে, কখনোবা কোরবানীর ঈদের পরে, আবার কখনোবা এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার পরে বিএনপির এই কঠোর আন্দোলনের নামে মস্কারী দেখতে পেয়েছে।
এই ঘোশণাটি যদি জামায়াতের কাছ হতে আসতো, তাহলে সাধারণ জনতা সেখানে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখতে পেতো বলে মনে করি। যদিও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সদম্ভেই ঘোশণা করছে, প্রচলিত পদ্ধতীর আন্দোলন করে এই সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব নয়, কারণ আন্দোলনে দেশ জাহান্নামে গেলেও আওয়ামীলীগের কিছু আসে যায়না।

অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে আগামী পাঁচ বছর কিংবা তারো অধিক সময়ের জন্য আওয়ামীলীগ সরকারকে মেনে নিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। আসলে মেনে নেয়া ছাড়া এই দুটি দলের সামনে আর বিকল্প কিছু রয়েছে বলেও দেখছিনা।
কথায় আছে, সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়। আওয়ামীলীগ সরকার যখন জামায়াতের উপর জুলুম-নির্যাতন শুরু করলো, বিএনপি তখন বসে বসে তামাসা দেখছিলো। এমনকি জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে একের পর এক ফাঁসির আদেশ দেয়ার পরেও বিএনপি এর বিরুদ্ধে মুখে খোলেনাই। এই সুযোগটিকে ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে আওয়ামীলীগ, চিরতরের বিএনপির বন্ধ মুখে সেলাই করে দিয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে।
এখন বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে বিদেশী দূতাবাসের দিকে। বিএনপির ধারণা, ইউরোপ আমেরিকা এসে বিএনপিকে চ্যাঙদোলা করে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে।

অনেকেই মনে করছেন সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকারের পতন হতে পারে। সে সম্ভাবনাকে পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া যায়না, তবে সেখানেও সমস্যা রয়ে গেছে। সাভারের জিওসি শেখ হাসিনার আত্মীয়, আর ঢাকার অধিকাংশ সিনিয়র সেনা অফিসার কট্টর চাটুকার আওয়ামী সমর্থক।
সেনা অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যার্থ হওয়ার ব্যাপারে সব চাইতে বড় হুমকি যেটা তা হচ্ছে
(পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী) বাংলাদেশে ‘র’ (RAW) এর হেড কোয়ার্টার এখন ক্যান্টনমেন্টের অভ্যান্তরেই। যে কোনো অভ্যুত্থান প্রচেস্টা ভারতের হস্তক্ষেপে ব্যার্থ হয়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
দেশ প্রেমিক সেনাবাহিনী যদি স্বৈরাচারী হাসিনার সরকারকে উৎখাত করার ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সেক্ষেত্রে দেখা যাবে সেনাবাহিনীর ভারত পোষ্য একটা অংশ সে প্রচেষ্টা রুখে দাড়াবে। সে দিক বিবেচনা করলে সেনা অভ্যুত্থানের আশা ছেড়ে দিতে হবে।

তবে এখানেও একটা ফাঁক কিন্তু থেকেই যায়, বাংলাদেশের ঘটে যাওয়া সামরিক অভ্যুত্থানগুলোর গতি-প্রকৃতি বিবেচনা করলে দেখা যায়, বিপদ কোন দিক থেকে আসবে সেটা আগে থেকে আঁচ করা সম্ভব নয়।
শেখ মুজিব ভেবেছিলেন, অভ্যুত্থান হলে সিনিয়র অফিসারদের পক্ষ হতে আসবে, তাই তিনি সিনিয়র অফিসারদের উপর নজরদারী চালিয়েছিলেন। কিন্তু ঘটে গেলো উল্টোটা, অভ্যুত্থান করে ফেললো জুনিয়র অফিসাররা। অভ্যুত্থানের ব্যাপারে সিনিয়ররা জানতে পারলো শেখ মুজিবের মৃত্যুর পরে। আবার খালেদ মোশররফ এর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান করলো বিক্ষুব্ধ সৈনিকরা, যেখানে অফিসারদের কোনো ভূমিকাই ছিলোনা। তাই সেনা অভ্যুত্থানের আশঙ্কা পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া যায়না।

সরকার পতনের আরেকটি সম্ভাব্য উপায় ইদানিং চোখে পড়ছে, তবে নিশ্চিত ভাবেই সেটাও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। ওয়ান-ইলেভেনের আগে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুশিল সমাজ নামে একটি শ্রেণীর উদ্ভব হয়েছিলো। কি তাদের উদ্দেশ্য, দেশের সাধারণ মানুষ সেটা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র আন্দাজ করতে পারেনাই। জনগণ বুঝতে পারলো তখন, যখন মঈন উদ্দিন এবং ফখরুদ্দিনরা ক্ষমতা দখল করে নিলো।
ইদানিং আমরা দেখতে পাচ্ছি, মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা চৌষট্টি জেলা সফরে বের হয়েছেন। আপাত দৃষ্টিতে তার এই সফরকে নিরীহ মনে হলেও তার এই সফর নিয়ে আওয়ামীলীগ যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
অবশ্য আওয়ামীলীগের উদ্বিগ্ন হওয়ার পেছনে যথেষ্ট কারণও বিদ্যমান রয়েছে। আমেরিকা কি করবে বা কি করতে চাচ্ছে সেটা আগে থেকেই ধারণা করা সম্ভব নয়। তারা শিকার ধরার জন্য জাল ফেলার সময় কেউ বুঝতেও পারেনা যে জাল ফেলা হয়েছে। যখন জাল গুটিয়ে নিতে শুরু করে, তখন সেই জালে উঠে আসে বড় বড় সব রুই কাতলা।
ড্যান ডব্লিউ মজিনা তার নিজ দেশ থেকে ফিরে এসে, ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতদের সাথে বৈঠক পরবর্তীতে, চৌষট্টিটি জেলা সফরের নামে যে জাল ফেলছেন, তার পরিণতি কি হবে, সেটা নিয়ে আওয়ামীলীগের শঙ্কার যথেষ্ট কারণ বিদ্যমান।

পরিশেষে সরকার পতন যেভাবেই হোক, আজ হোক বা কাল হোক, অথবা পাঁচ বছর পরেই হোক, আওয়ামীলীগের পরিণতি হবে পঁচাত্তর পরবর্তী আওয়ামীলীগের মতো। দীর্ঘমেয়াদে তাদের ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে হবে। অতিরিক্ত ভারত তোষণ এবং জন অধিকার লঙ্ঘনের অপরাধে জনগণ ইতোমধ্যেই তাদের প্রত্যাক্ষান করেছে।

© শামীম রেজা
০৪/০৩/২০১৪

Post Comment

ঈদে মিলাদুন্নবী এবং সেকেলে ইসলাম

কথায় আছে যার কন্ঠ সুন্দর নেই, তার কান্না করাও উচিত নয়, কারণ সেই কান্নার শব্দ শুনে মানুষ বিরক্ত হয়।
গতকাল রাতে বেশ কয়েকটি কারণে ঠিক মতো ঘুমাতে পারিনাই, তার মধ্যে একটা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী কোনো এক বিয়ে বাড়ি হতে তীব্র ভাবে ভেসে আসা হিন্দী গানের শব্দ।

গানগুলো হিন্দী এবং অশালীন হলেও সুরগুলো সুন্দর ছিলো তাই খুব একটা বিরক্ত হইনাই। তবে কষ্ট পেয়েছি, কোন ধরনের রুচি হলে বিয়ের মতো একটা পবিত্র আনুষ্ঠানিকতার সূচনা হয় অশালীন হিন্দী গানের মাধ্যমে! শুরুতেই ভুল, বাকি জীবনটাতো ভুলে ভুলেই পার হবে।

এখন যেখানে বসে আছি, সেখানেও একই অবস্থা, এখানেও তীব্র শব্দে মাইক বাজিয়ে আনন্দ করা হচ্ছে। আনন্দানুষ্ঠানের নাম “ঈদোছে বারা ঈদ” বাংলায় বললে বলতে হয়, “সকল ঈদের শ্রেষ্ঠ ঈদ”।
কিছু কিছু মানুষের কান্ড দেখলে হাসি পায়না, দুঃখ হয়। বিয়ে করা ফরজ তাই এরা দুইটা বিয়ে করে ডবল ফরজ আদায় করে, চারটা বিয়ে করে সুন্নত এবং আটটা বিয়ে করে ডবল সুন্নত পালন করে।

মহান রব্বুল আলামীন আমাদের আনন্দ করার জন্য দুইটা দিন দিয়েছেন, একটা ঈদুল ফিতর, আরেকটা ঈদুল আযহা। কোথা হতে হঠাৎ করে আরেকটা ঈদের উৎপত্তি হলো, আল্লাহই ভালো জানেন। এই ঈদ নাকি সকল ঈদের শ্রেষ্ঠ ঈদ, ঈদে মিলাদুন্নবী!

সব চাইতে দুঃখজনক যে ব্যাপার সেটা হচ্ছে, এই আনন্দানুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে আমাদের প্রিয়নবী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর মৃত্যুর দিনে। যে দিনটাতে আমাদের শোকে বিহ্বল হওয়ার কথা, সেই দিন আমরা আনন্দানুষ্ঠান করছি। হায়রে অভাগা মুসলমান!
আচ্ছা, যে ঈদ আল্লাহর পক্ষ হতে আসে নাই, সেই ঈদ কার নিকট হতে এসেছে, শয়তানের নিকট থেকে?

গতরাতের বিয়ের সংগীতানুষ্ঠানের সাথে আজকের এই সংগীতানুষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, গতরাতে সুরেলা কন্ঠের হিন্দী গান দিয়ে মানুষকে কষ্ট দেয়া হয়েছে। আর আজকের অনুষ্ঠানে ইসলামী সংগীতের নামে অসহ্য সঙ্গীত পরিবেশণ করে মানুষকে কষ্ট দেয়া হচ্ছে।

“দেখ আমিনা মায়ের কোলে, দোলে শিশু ইসলাম দোলে” কি চমৎকার একটা ইসলামী সংগীত। সেই সংগীতের সাথে যুক্ত করা হয়েছে সমবেত কন্ঠের হুক-হুক, হুক-হুক, শব্দ। একজন শিল্পী গান গাইছে, আর ৪-৫জন ব্যাক্তি পাশ থেকে হুক-হুক শব্দে করে তার গানে যন্ত্র সঙ্গীতের আমেজ দিচ্ছে!!

লেখার শুরুতেই বলেছি যার কন্ঠ সুন্দর নেই, তার কান্না করাও উচিত নয়। আমাদের দেশের গ্রামে-গঞ্জে ওয়াজ-মাহফিলে ইসলামী সংগীতের নামে যেসব গান বাজানো হয়, সেটা প্রকারান্তরে মানুষের মনে ইসলাম সম্পর্কে নেগেটিভ ধারণাই তৈরী করে। মানুষ মনে করে ইসলাম মানেই সেকেলে, ইসলাম মানেই ক্ষ্যাত। ইসলাম যদি ক্ষ্যাতই না হবে, তইলে এই ক্ষ্যাত মার্কা গানগুলোই কেনো ইসলামী সংগীত?
ঢাকার সাইমুম, রাজশাহীর বিকল্প কিংবা চট্টগ্রামের পাঞ্জেরী শিল্পীগোষ্ঠির এতো সুন্দর সুন্দর ইসলামী সংগীতের ক্যাসেট থাকতে ওয়াজ মাহফিলে এই হুক্কা হুয়া টাইপের ইসলামী সংগীত পরিবেশনের মানে কি?

সেদিন এক সিনিয়র আপার একটা লেখা পড়েছিলাম, যেখানে তিনি বলেছিলেন প্রতিটা সম্পর্ক হচ্ছে একেকটা এ্যাসাইনমেন্টের মতো। আমরা চাইলে সেই এসাইনমেন্ট হাতে লিখে জমা দিতে পারি, কিংবা টাইপ করে প্রিন্টেড কপিও জমা দিতে পারি, অথবা আরেকটু সুন্দর করে রঙ্গিণ মলাটে স্পাইরাল বাইন্ডিং করেও জমা দিতে পারি।
নিঃসন্দেহে হাতে লেখা এ্যাসাইনমেন্টের চাইতে স্পাইরাল বাইন্ডিং করা এ্যাসাইনমেন্টটাই হৃদয়ে পরিতৃপ্তি নিয়ে আসে।

আসুন ইসলামকেও আমরা রঙ্গিণ মলাটের স্পাইরাল বাইন্ডিং করে মানুষের সামনে উপস্থাপন করি। বেসুরো কন্ঠের গানের চাইতে সুরেলা কন্ঠের গালি উত্তম।

বিষয়ঃ ঈদে মিলাদুন্নবী এবং সেকেলে ইসলাম
© শামীম রেজা
২৮/০২/২০১৪

Post Comment

অনৈসলামীক রাষ্ট্র এবং তাবলীগের ভূমিকা।

চায়ের দোকানে বসে ছিলাম, তাবলীগের কয়েকজন দ্বায়ী এসে সালাম দিলো। সালামের জবাব দেয়ার পরেই শুরু হলো বয়ান, দারুণ সব কথা বলছিলো।
ভাই, “আল্লাহ আমাদের দীর্ঘদিন মায়ের পেটের মধ্যে রেখেছিলো, তারপরে আমাদের পাঠিয়ে দিলো দুনিয়ার পেটে, একদিন আমরা চলে যাবো কবরের পেটে। এই দুনিয়াতে আল্লাহ আমাদের জন্য অনেক কিছু রেখেছেন পরীক্ষা করার জন্য। আমরা যদি এই পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হতে পারি, তবে আমরা পাবো জান্নাত, আর যদি উত্তীর্ণ হতে না পারি তবে চিরস্থায়ী জাহান্নাম।
আমাদের মনের মধ্যে একটি স্থান রয়েছে সেখানে আল্লাহকে রাখতে হবে, যদি আল্লাহকে সেখানে রাখি তবে আমরা কামিয়াব হবো, আর সেখানে আল্লাহর পরিবর্তে অন্য যাকেই রাখবো সে একদিন মনে আঘাত দিবে। আপনি যদি আজকে একজন মানুষকে ভালোবাসেন একদিন দেখবেন সে আপনাকে আঘাত দিয়েছে, কিন্তু আপনি যদি আল্লাহকে ভালোবাসেন তবে আল্লাহ কখনো আপনার মনে আঘাত দিবেনা, আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসবে”।

দারুণ সব কথা বলছিলো তাবলীগের ভাইটা, প্রাণটা জুড়িয়ে যাচ্ছিলো তার বয়ান শুনে। মনে কিছুটা পরিবর্তন চলে আসলো। নাহ! তাবলীগ জিনিসটা খারাপনা, জামায়াত শিবির যেসব আওয়ামী ধর্মের অনুসারীদেরকে দাওয়াত দিতে পারছেনা, তাদের দ্বীনি শিক্ষার জন্য তাবলীগের প্রয়োজন রয়েছে।

তবলীগের সেই ভাইটি চলে গেলেন, তার বক্তব্যের রেশ তখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনাই। আমার পাশেই এক তাবলীগের মুরব্বি বসা ছিলেন, ইয়া লম্বা লম্বা দাড়ি, পরনে জুব্বা, মাথায় পাগরী। তিনি তার বন্ধুর সাথে কথা বলছিলেন, হঠাৎ করেই আলোচনায় সংবিধান হতে বিসমিল্লাহ প্রত্যাহারের কথা উঠলো। কান সোজা করে তাদের আলোচনা শুনছিলাম। কথার এক পর্যায়ে তাবলীগের সেই মুরব্বি বলে উঠলেন, সংবিধান হচ্ছে খারাপ জিনিস, এই সংবিধানে বিসমিল্লাহ থাকবে কেনো? সরকার সংবিধান হতে বিসমিল্লাহ তুলে দিয়েছে ভালোই করেছে!!

ভাবছিলাম বাংলাদেশ এবং বিশ্বের বিরাট একটা অংশ এই তাবলীগের সাথে জড়িত, এই বিপুল বিশাল সংখ্যক মুসলমান যদি সত্যিকার মুসলমান হয় এবং রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার ঘোশণা দেয় তবে কার সাধ্য আছে সেটা প্রতিরোধ করে। প্রশাসনের এমন কোনো লেভেল নাই যেখানে তাবলীগ নেই।
অথচ এই তাবলীগের ভাইটি কত নির্লজ্বভাবে সেক্যুলার সরকারের ইসলাম বিরোধী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালো।
তাবলীগের ভাইদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আপনারা ফাজায়েল আমল এর খপ্পর থেকে বেরিয়ে আসুন, কোরআন পড়ুন, হাদিস পড়ুন ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জন করুন।

২৭ফেব্রুয়ারী ২০১৪

Post Comment